এগরা বিস্ফোরণের পরে পুলিশকে সতর্ক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। — ফাইল চিত্র।
দত্তপুকুর মনে করিয়ে দিচ্ছে এগরা। রাজ্যে ইদানীংকালে আরও কয়েকটি জায়গায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হলেও ভয়াবহতায় দত্তপুকুর অনেকটা এগরার মতো। পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় বিস্ফোরণ হয় গত ১৬ মে। এর পরেই রাজ্যের সর্বত্র সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলে নবান্ন। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। এর পরে নবান্নর পক্ষে নির্দেশে বলা হয়েছিল, রাজ্যের সমস্ত বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণ মানুষকে এই ধরনের কারখানায় কাজের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করতে হবে। পাশাপাশি, বেআইনি বাজি কারখানার কর্মীদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির কথাও বলা হয়।
নবান্নের তরফে নির্দেশিকায় পুলিশ সুপার এবং কমিশনারদের বলা হয়, বেআইনি বাজি তৈরির সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে চলা বাজি কারখানাগুলিতে তল্লাশি চালাতে হবে। বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। বাজেয়াপ্ত করা বাজি কী ভাবে নষ্ট করতে হবে, তা-ও জানিয়ে দেয় নবান্ন। বলা হয়েছিল, বাজেয়াপ্ত বাজি আদালতের নির্দেশ মেনে নষ্ট করতে হবে। বিপুল পরিমাণ বাজি উদ্ধার হলে প্রয়োজনে অল্প অল্প করে তা নষ্ট করতে হবে।
বেআইনি বাজি প্রস্তুতকারকেরা যাতে আবার একই কাজ না করেন, তা স্থানীয় থানাকে নিশ্চিত করতে হবে বলেও নির্দেশ দেয় নবান্ন। এগরায় মূল অভিযুক্ত ভানু বাগ বিস্ফোরণের পরে ওড়িশার হাসপাতালে মারা যান। তিনি অতীতেও বাজি কারখানা চালাতেন। পুলিশ গ্রেফতার করলেও মুক্তি পেয়েই আবার তিনি বাজির কারবার শুরু করে দেন। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে নবান্ন স্পষ্ট জানিয়েছিল, বেআইনি বাজি প্রস্তুতকারকেরা যাতে আবার একই কাজ না করেন, তা দেখতে হবে স্থানীয় থানাকেই।
সব বাজি কারখানার বিস্ফোরণের পর দেখা যায়, সেখানে শ্রমিকের কাজ করেন মূলত স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। রাতারাতি কারখানা বন্ধ হলে তাঁদের রোজগার যাতে বন্ধ না হয়ে যায়, তার জন্য প্রয়োজন মনে করলে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে কর্মীদের অন্যত্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তাঁরা বেআইনি বাজি কারখানায় কাজ না করেও সুস্থ ভাবে জীবনধারণ করতে পারেন। সর্বোপরি সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পরামর্শ পুলিশ প্রশাসনকে দিয়েছে নবান্ন।
১৮ মে এই নির্দেশ জেলায় জেলায় পাঠিয়েছিল নবান্ন। কিন্তু তাতে যে কাজের কাজ বিশেষ হয়নি, তারই প্রমাণ মিলল দত্তপুকুরের দুর্ঘটনায়। স্থানীয়রা বলছেন, এখানে কারা বাজি বানায়, কারা কাজ করে— সবটাই পুলিশের জানা ছিল। নির্ভয়ে চলত অবৈধ কারখানা। তারই খেসারত দিত হল রবিবার সকালে।