দত্তপুকুরের সেই বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের পর এ বার উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর। আবার ‘অবৈধ বাজি কারখানা’য় বিস্ফোরণে প্রাণহানি। রবিবার এ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সারা বাংলা আতসবাজি ব্যবসায়ী সমিতির তরফে দাবি করা হল, ওই বিস্ফোরণের সঙ্গে আতসবাজির কোনও সম্পর্ক নেই। সমিতির নেতা বাবলা রায়ের দাবি, দত্তপুকুরের মোচপোলে আতসবাজি তৈরি হত না। তিনি নিজে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন। সেখানে আতসবাজি তৈরির মশলা ছিল না। পাশাপাশি, শাসকদলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাজি ব্যবসায়ী সমিতির নেতার দাবি, এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে আইএসএফ।
রবিবার দত্তপুকুর ঘুরে বাবলা বলেন, ‘‘দত্তপুকুরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা দুঃখজনক। কিন্তু আরও দুঃখজনক ব্যাপার হল, বোমাকে আতসবাজি বলে চালানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’ বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনের পর ব্যবসায়ী সমিতির নেতার দাবি, সেখানে কোনও আতসবাজি তৈরির মশলা ছিল না। ছিল পটাশিয়াম ক্লোরাইড। যার সঙ্গে আতসবাজি বানানোর কোনও সম্পর্কই নেই। পাশাপাশি দত্তপুকুরের মোচপোলের বিস্ফোরণের ঘটনায় যে রাজনৈতিক চাপানউতর তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে বাবলার দাবি, ওই ঘটনায় আইএসএফ নেতারা জড়িত রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওখানে যাঁরা ছিলেন তাঁরা আইএসএফ দলের। যাঁরা মারা গিয়েছেন,তাঁরাও আইএসএফ কর্মী।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে আতসবাজি শিল্প যখন প্রসারণ ঘটাতে চাইছে, তখন তার বিরুদ্ধে একটি চক্রান্ত এটি।’’ তিনি জানান, সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে এ বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে বলবেন তিনি।
উল্লেখ্য, রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ জোরালো শব্দে কেঁপে ওঠে দত্তপুকুরের মোচপোল। বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের সহযোগিতায় এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই রমরমিয়ে বাজির কারবার চালানো হচ্ছিল। একাধিক বার অভিযোগ জানিয়েও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এলাকাবাসীর দাবি, জনৈক কেরামত আলি ওই কারখানার মালিক। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁর ছেলে রবিউল আলির মৃত্যু হয়েছে এই বিস্ফোরণে। মৃতদের তালিকায় রয়েছেন— সামসুল আলি, জাহিদ আলি নামে মুর্শিদাবাদের এক ব্যক্তি ও তাঁর ছেলে।
বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে গিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী রথীন ঘোষ জানান, পুরো ঘটনার পিছনে এক আইএসএফ নেতা রয়েছেন। তিনি মুর্শিদাবাদ থেকে লোক এনে বাজি তৈরি করাতেন। রথীন বলেন, ‘‘এই বুথে আইএসএফ জিতেছে। স্থানীয় আইএসএফ নেতা রমজান আলি রয়েছেন এটার পিছনে। আমরা জানতাম না। পুলিশও জানত না।’’ পাল্টা আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে কেরামতের নাম তোলেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। তিনি দাবি করেন, কেরামতকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। বিধায়ক বলেন, ‘‘স্থানীয়েরা প্রশাসনকে একাধিক বার বেআইনি বাজি তৈরির কথা জানিয়েছিল। আইএসএফ যদি বাজি কারখানা চালাত, তা হলে কি প্রশাসন চুপ করে থাকত? বেআইনি বাজি কারবারের পিছনে তৃণমূলের দুই নেতা রয়েছে— কেরামত আলি আর আজিবর আলি। ওরা ভানু বাগের (এগরাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত) মতো পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ওদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। যারা আমাদের নামে অভিযোগ করছে, তারাই এই সব বাজি কারখানা থেকে টাকা পেত।’’