Susanta Ghosh

‘মহিলাঘটিত’ অভিযোগে দলীয় তদন্তের মুখে সুশান্ত ঘোষ! পার্টি সম্মেলনের মুখে ‘চক্রান্ত’ দেখছেন ঘনিষ্ঠেরা

কঙ্কালকাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ কয়েক মাস জেলে ছিলেন সুশান্ত। জেল থেকে বার হওয়ার কয়েক বছর পরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের তীব্র সমালোচনা করে কলাম লিখেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের এই নেতা।

Advertisement
শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৪ ১৯:০৯
CPM leader Susanta Ghosh again faces  party\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s inquiry commission

সুশান্ত ঘোষ। —ফাইল ছবি।

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ আবার সিপিএমের মধ্যে তদন্তের মুখোমুখি। এ বার ‘মহিলাঘটিত’ অভিযোগে।

Advertisement

সুশান্ত এখন সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক। সূত্রের খবর, এক মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে দল তদন্ত শুরু করেছে একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী এই নেতার বিরুদ্ধে। সুশান্ত অবশ্য এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। বুধবার আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘এ নিয়ে যা বলার দল বলবে।’’ রাজ্য সিপিএমের প্রথম সারির একাধিক নেতা এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া এড়িয়েই গিয়েছেন। তবে তাঁরা কেউ বিষয়টি ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়েও দেননি। সুশান্তের ঘনিষ্ঠেরা অবশ্য ঘরোয়া আলোচনায় দাবি করছেন, দলে সুশান্তের বিরোধী গোষ্ঠী সম্মেলন পর্বের আগে সাজিয়ে-গুছিয়ে গোটা বিষয়টি করিয়েছে।

সুশান্ত সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য। সূত্রের খবর, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের অনেকেই সুশান্তের বিরুদ্ধে এই অভিযোগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানেন না। তাঁরা যা শুনেছেন, সবটাই কানাঘুষো। সিপিএম সূত্রের খবর, অভিযোগকারিণীর লিখিত বয়ানের ভিত্তিতে কয়েক জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিলে আলাপ-আলোচনা করে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছেন। সেই কমিশন দু’পক্ষের সাক্ষ্যও গ্রহণ করেছে। সিপিএমে এখন জল্পনা, সুশান্ত কি জেলা সম্পাদক পদ ছেড়ে দেবেন? এই নিয়েও সুশান্ত কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে দলের সম্মেলন পর্বের ঠিক আগে এই ধরনের ঘটনা নিয়ে সিপিএমে বিভিন্ন জল্পনা তৈরি হয়েছে।

সূত্রের খবর, ঘটনাটি ২০০৬ সালের। সেই মর্মেই সংশ্লিষ্ট মহিলা সিপিএমের কাছে অভিযোগ করেছেন। তিনিও পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা। সুশান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগটি নিয়ে তিনি প্রথমে জেলার নেতাদের কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরাই ওই মহিলাকে পরমার্শ দেন, রাজ্য দফতরে গিয়ে বিষয়টি জানাতে। তখন তিনি সরাসরি আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে গিয়ে রাজ্যনেতাদের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেন। এবং যথাবিহিত অভিযোগ জানান। তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, সুশান্ত তাঁকে চাকরি পাইয়ে দেবেন বলে তাঁর সঙ্গে সহবাস করেছিলেন। ঘটনাচক্রে, সুশান্ত তখনও রাজ্যের মন্ত্রী। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের ভার ছিল তাঁর উপর।

প্রসঙ্গত, সুশান্তের ঘনিষ্ঠেরা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের প্রথম প্রশ্ন, ওই মহিলা এত দিন পরে কেন এই অভিযোগ করছেন। ঘটনা ঘটার পরে ১৮ বছর কেটে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, মহিলা পুলিশের কাছে না গিয়ে কেন দলের কাছে অভিযোগ জানালেন? অভিযোগকারিণীর সঙ্গে দলের যোগাযোগ রয়েছে, এমন কোনও তথ্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।

সিপিএম ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরে দলের বড় নেতাদের মধ্যে সুশান্তকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। বেনাচাপড়া কঙ্কালকাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ কয়েক মাস জেলে ছিলেন সুশান্ত। জেল থেকে বার হওয়ার কয়েক বছর পরে একটি ওয়েবসাইটে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের তীব্র সমালোচনা করে কলাম লিখেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের এই নেতা। সেই সময়েও দলের তদন্তে ‘দোষী’ সাব্যস্ত হয়ে তিন মাস দল থেকে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) হতে হয়েছিল সুশান্তকে। ওই পর্বে দল থেকে সুশান্তকে বহিষ্কারেরও দাবি উঠেছিল। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দলে রেখে দেওয়া হয় দীপক সরকারের ‘আস্থাভাজন’ এই নেতাকে।

২০২১ সালে সুশান্তের ‘কামব্যাক’ হয় সংগঠনে। জেলা সম্মেলনে ভোটাভুটি করে জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। বড় ব্যবধানে পরাস্ত করেছিলেন তাপস সিংহকে। সিপিএমের অনেকের মতে, তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র চেয়েছিলেন যুব সংগঠনের একদা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তাপসকে জেলা সম্পাদক করতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। জেলার রাজনীতিতে সূর্যকান্তের সঙ্গে সুশান্তের সম্পর্ক কতটা ‘মধুর’, তা সিপিএম জমানায় সর্বজনবিদিত ছিল। সুশান্তের এক ঘনিষ্ঠের বক্তব্য, ‘‘যারা সংগঠনে ভোটাভুটিতে জিততে পারবে না, তারা এই নোংরা খেলায় নেমেছে!’’ গোটা ঘটনাপ্রবাহে সুশান্ত ‘হতাশ’ বলেই মত তাঁর ঘনিষ্ঠদের। কেশিয়াড়ির এক সিপিএম নেতার বক্তব্য, ‘‘দাদা যদি গত বার জেলা সম্পাদক না হতেন, তা হলে এই বয়সে তাঁকে এই অভিযোগে বিদ্ধ হতে হত না।’’

সন্দেহ নেই, গোটা ঘটনায় সিপিএম ‘বিড়ম্বনায়’। দলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘আমাদের জন্য সবটাই অস্বস্তির। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এক রকম অস্বস্তি। না হলে অন্য রকম।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘যদি দেখা যায় অভিযোগ সাজানো, তা হলে বুঝতে হবে ভোটে সর্বহারা হয়েও কমিটির মোহ এই ঘটনা ঘটালে দু’-চারটে সিট জিতে গেলে তো খুনোখুনি হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement