CPM

তৃণমূল বিধায়কের হাতে হাত রেখে সিপিএম নেত্রীর কালীপুজো উদ্বোধন, ঘোর অস্বস্তিতে হাওড়ার নেতারা

এমনিতে পুজো করা, পুজো উদ্বোধন বা ধর্মাচরণ নিয়ে সিপিএমে বিতর্ক নতুন নয়। প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তী, রেজ্জাক মোল্লা বা তন্ময় ভট্টাচার্যকে ঘিরেও নানা সময়ে বিতর্ক হয়েছে।

Advertisement
শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৪৮
CPM

(বাঁ দিকে) তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরী ও সিপিএম নেত্রী দুলু দাস। হাতে হাত রেখে মোমবাতি প্রজ্বলনের মুহূর্ত (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

কালীপুজোর উদ্বোধনে তৃণমূল বিধায়কের হাতে হাত রেখে মোমবাতি প্রজ্বলন করলেন সিপিএম নেত্রী। যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে হাওড়া জেলা সিপিএমে। ঘটনার একটি ভিডিয়ো ক্লিপ আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরীর হাতে হাত রেখে কালীপুজোর উদ্বোধনে মোমবাতি জ্বালাচ্ছেন সিপিএমের হাওড়া জেলা কমিটির সদস্য তথা জেলার মহিলা সংগঠনের শীর্ষনেত্রী দুলু দাস।

Advertisement

ভিডিয়ো ক্লিপটির সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন দুলু নিজেও। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেই বলেন, ‘‘আপনারা নিশ্চয়ই একটি ভিডিয়ো পেয়েছেন!’’ পাশাপাশিই তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘হাওড়া ফিশ মার্কেটের প্রোগ্রাম ছিল। ওরা আমায় প্রতি বছর ডাকে। এ বারও ডেকেছিল। আর ওটা কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না। আপনারা যা দেখছেন (ভিডিয়োতে) সেটাই! এর বাইরে কিছু নয়।’’ কিন্তু দুলুর দল সিপিএমের অনেকেই এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। বামনেত্রী অবশ্য বলছেন, কোনও বিতর্ক নেই। সব ‘অপপ্রচার’। তিনিও এ-ও জানিয়েছেন, তৃণমূলের রাজনীতির বিরুদ্ধেই তিনি লড়াই করবেন। রাজনৈতিক ভাবে তিনি শাসকদলের বিধায়ককে পছন্দও করেন না।

হাওড়া জেলা সিপিএম অবশ্য দুলুর এই কাণ্ড অনুমোদন করছে না। সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ আনন্দবাজার অনলাইনকে গোটা ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক নই যে, সামাজিক সম্পর্ককে অস্বীকার করতে বলব। আমরা কোনও ধর্মের বিরুদ্ধে নই। কালীপুজোকে কেন্দ্র করে যদি বস্ত্রবিতরণ বা বুক স্টল হয়, সেখানে দলের কেউ যুক্ত হলে তা অনুমোদিত।’’ কিন্তু তৃণমূল বিধায়কের হাতে হাত রেখে যদি দলের কেউ মোমবাতি জ্বালিয়ে কালীপুজোর উদ্বোধন করেন? দিলীপের স্পষ্ট জবাব, ‘‘না। এ রকম হয়ে থাকলে পার্টি তা অনুমোদন করে না।’’ রবিবার রাতে দিলীপ এ-ও জানান, তিনি গোটা ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন।

এ বিষয়ে তৃণমূল বিধায়ক গৌতমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ এক ট্রেড ইউনিয়ন নেতা বলেন, ‘‘পুজো মানে তো মিলন। সেখানে রাজনীতি খোঁজার কিছু নেই। এই সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই সিপিএমের এই অবস্থা।’’

প্রশ্ন হল, হাওড়া জেলা সিপিএমে এই বিতর্কের প্রেক্ষাপট কী? সিপিএম সূত্রের খবর, নব্বইয়ের দশকে এই রাজনীতি নিয়ে দলের মধ্যে বিস্তর বিতর্ক হয়েছিল। বামুনগাছি এলাকার তৎকালীন এক যুবনেতাকে দল সাসপেন্ড করেছিল এই কারণে যে, তিনি একটি ক্লাবের অনুষ্ঠানে কংগ্রেস নেতা অশোক ঘোষের সঙ্গে একই মঞ্চে ছিলেন। সিপিএমের এক নেতার কথায়, যখন তিনিই কংগ্রেসের পাশে বসা যাবে না গোছের নিদান দিয়েছিলেন দলে, তখন পৃথক একটি সামাজিক সংগঠনের মঞ্চে তাঁকেই আর এক কংগ্রেস নেতা মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেয়নি। বরং পরে তাঁকে দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছিল। দুলুর এই ঘটনার পর অনেক পুরনো দিনের নেতা-কর্মীর মুখে মুখে ঘুরছে নব্বইয়ের দশকের সেই ঘটনাও।

এমনিতে সিপিএমে পুজো করা, পুজো উদ্বোধন বা ধর্মাচরণ নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর তারাপীঠে পুজো দেওয়া নিয়ে দলের মধ্যে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। রেজ্জাক মোল্লা সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য থাকাকালীনই হজ করতে গিয়েছিলেন। দলের বাইরে রেজ্জাকের মন্তব্য ছিল, ‘‘মার্কসের চেয়ে মহম্মদ বড়।’’ উত্তর দমদমের বিধায়ক থাকাকলীন তন্ময় ভট্টাচার্যের কালীপুজো উদ্বোধন নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এ বার তাতে জুড়ে গেল হাওড়ার নেত্রী দুলুর নাম।

আরও পড়ুন
Advertisement