Mamata Banerjee

Dipshita Dhar: মমতা মানুষের নেত্রী হতে সফল, আনন্দবাজার অনলাইনে অকপট সিপিএমের দীপ্সিতা

সিপিএম শূন্যে পৌঁছনো থেকে ‘ফেসবুক-পার্টি’ হয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে দীপ্সিতার দাবি এ বারের হারের পিছনে অনেক কারণ।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১২:৫৪
সিপিএম নেত্রী দীপ্সিতা ধর। -ফাইল চিত্র।

সিপিএম নেত্রী দীপ্সিতা ধর। -ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আপনার কেমন লাগে? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে সিপিএম নেত্রী দীপ্সিতা ধরের সপাট জবাব, ‘‘উনি সাধারণ মানুষের কাছে নিজেকে নেত্রী হিসেবে তুলে ধরতে সফল।’’ তবে গত বিধানসভা নির্বাচনে বালিতে প্রার্থী হয়েও পরাজিত দীপ্সিতা মুখ্যমন্ত্রী মমতার সম্পর্কে মন্তব্যে ততটা দরাজ নন। আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক লাইভে নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শের কথা মাথায় রেখেই উত্তর দিলেন দীপ্সিতা। বললেন, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মানুষের অনেক চাওয়া-পাওয়া ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সেই আশা পূরণ করতে পারেননি তিনি।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আপনার কেমন লাগে? এমন প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে, না রাজনৈতিক ভাবে?’’ জানালেন, ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর পরিচয় নেই মমতার সঙ্গে। আর রাজনৈতিক ভাবে? দীপ্সিতা বললেন, ‘‘আমার মনে হয়, পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের মধ্যে নিজেকে নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তিনি সফল হয়েছেন। আমার মনে হয় রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে তিনি মুখ্যমন্ত্রী, তিনি নেত্রী। বেশ কিছু ক্ষেত্রে বহু মানুষ তাঁকে মাতৃরূপাও মনে করেন।’’ একই সঙ্গে দীপ্সিতার বক্তব্য, ‘‘আমরা তো নয়া জনপ্রিয়তাবাদ (নিউ পপিউলিজম)-এর যুগে বাস করছি। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা যে যুক্তিতে জননেত্রী বলতে পারি, সেই একই কারণে ট্রাম্পকেও (আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প) বলা যায়। কারণ, তিনিও বিপুল জনসমর্থনের মধ্যে দিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। নরেন্দ্র মোদীও বিভিন্ন জায়গায় বিপুল জনসমর্থন উপভোগ করেন। তাঁরা অবশ্যই সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পেয়েছেন। কিন্তু আমরা যখন কোনও নেতাকে দেখি তখন তো শুধু তাঁর জনপ্রিয়তা দিয়ে বিচার করি না।’’ পাশাপাশি এটাও বলেন, ‘‘আমাদের লড়াই বিজেপি-র পাশাপাশি তৃণমূলের বিরুদ্ধেও। আর তৃণমূলের সব সময়ের মুখ মমতা। আবার মোদী বিরোধী আন্দোলনেও তিনি মুখ হতে চাইছেন। সফল রাজনীতিবিদ তো বটেই।’’
একই সঙ্গে প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতাকে নিয়ে গর্বও রয়েছে দীপ্সিতার। তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি এক জন অত্যন্ত সফল মহিলা। এক জন সফল মানুষ। কারণ, আমরা যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজের মধ্যে রয়েছি, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রাজনীতির মতো একটা জায়গায়, সেখানে উনি এত দিন ধরে মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন, এত মানুষের ভালবাসা পেয়েছেন, সেটা অবশ্যই ব্যক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য, মহিলা হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য একটা সাফল্য।’’

Advertisement

তবে একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর কাছে যে আশা ছিল তা পূরণ করতে মমতা ব্যর্থ হয়েছেন।
শনিবার রাতের ফেসবুক লাইভে রাজনৈতিক প্রশ্নের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনের অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছেন দীপ্সিতা। তবে রাজনৈতিক পরিবারে বড় হয়ে ওঠা দীপ্সিতার সেই সব উত্তরেও ছিল রাজনীতির কথা। জীবনসঙ্গী বাছার ক্ষেত্রেও যে তিনি রাজনৈতিক মতাদর্শকে প্রাধান্য দিয়েছেন তা অকপটে জানান দীপ্সিতা। একই ভাবে এখন দিল্লির জেএনইউ-এর ছাত্রী বালির মেয়ে বলেন, ‘‘ছেলেবেলায় আমার বেড়াতে যাওয়া মানে ছিল ব্রিগেডের সমাবেশ। মায়ের কোলে করে পার্টির অনুষ্ঠানে যাওয়া।’’ এই সব দেখে ছোটবেলা থেকে রাজনীতির প্রতি অনীহাই ছিল বলে জানালেন দীপ্সিতা। কোনও দিন এ পথে যাবেন না বলেই ঠিক করেছিলেন। কিন্তু কলেজ জীবনে এসে পথ বদলে যায়। রাজনীতিকে পথ বলে মনে হয় তাঁর।

গত বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম শূন্যে পৌঁছনো থেকে ‘ফেসবুক-পার্টি’ হয়ে যাওয়া, অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে দীপ্সিতা বলেন, ‘‘এ বারের হারের পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু যে ভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ তৈরি হল তার জন্য আমরা তৈরি ছিলাম না। আমাদের বোঝায় ত্রুটি থেকে গিয়েছিল। সেটা ভাবতে পারলে অন্য রকম ফল হতে পারত।’’ দীপ্সিতা মনে করেন, বামেরা ব্রিগেড ভরাতে পারলেও ভোটের ঝুলি না ভরার পিছনেও ছিল পরিকল্পনার ত্রুটি। ব্রিগেড সমাবেশে আসা অনেক মানুষ তৃণমূলকে পছন্দ না করলেও বিজেপি-কে আটকাতে মমতাকে ভোট দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি মনে করেন, সাধারণের কাছে বিশেষ করে যুব সমাজের কাছে পৌঁছতে ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া এখন গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম।

আরও পড়ুন
Advertisement