CPM

‘ব’-এ ব্যালট আর ‘ব’-এ বয়স, সম্মেলনে নতুন করে বর্ণপরিচয় লিখল সিপিএম, ‘ফাঁপরে’ পক্ককেশ প্রজন্ম

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম গত কয়েক সপ্তাহ বিদেশে ছিলেন। সেলিম বাইরে থাকাকালীনই দলের তরফে শ্রীদীপ ভট্টাচার্যের সই করা একটি নির্দেশিকা পৌঁছেছে জেলায় জেলায়।

Advertisement
শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৫:০০
CPM issued a circular mentioning the age limit for the conference

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

নিয়ম অনুযায়ী সব কিছু চললে আগামী বছর সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে পলিটব্যুরো থেকে বিদায় নিতে চলেছেন সাত নেতা-নেত্রী। অর্থাৎ, সর্বভারতীয় সিপিএমে প্রজন্ম বদলে যেতে পারে আগামী এপ্রিলে। তার আগে বাংলাতেও সিপিএম তরুণ প্রজন্মের নেতানেত্রীদের গুরুত্ব দিতে ‘নজিরবিহীন’ নির্দেশিকা জারি করল দলে। যে নির্দেশিকায় এরিয়া কমিটি স্তরে নেতৃত্বের বয়স বেঁধে দেওয়া হয়েছে তো বটেই, সেই সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি সম্মেলনে কমিটি নির্বাচনে ভোটাভুটি হয়, তা হলে ব্যালট পেপারে প্রত্যেকের নামের পাশে তাঁদের বর্তমান বয়স উল্লেখ করে দিতে হবে।

Advertisement

সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম গত কয়েক সপ্তাহ বিদেশে ছিলেন। শনিবার রাতে তাঁর কলকাতায় ফেরার কথা। সেলিম বাইরে থাকাকালীনই রাজ্য সিপিএমের তরফে একটি নির্দেশিকা পৌঁছেছে জেলায় জেলায়। দলের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্যের সই করা সেই নির্দেশিকায় মূলত এরিয়া স্তরের সম্মেলন সংক্রান্ত নিয়মাবলি লেখা রয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে সিপিএম দলের অন্দরে ‘বয়সবিধি’ চালু করেছে। তবে এ বার তাতে শৈথিল্য রাখতে চাইছে না আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। শুধু বয়সের ঊর্ধ্বসীমাই নির্ধারিত করে দেওয়া নয়, কমিটির আকার অনুযায়ী কত জন, কত বছর বয়সি নেতৃত্বকে জায়গা দিতে হবে, তা-ও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। যেমন, তিন পাতার নির্দেশিকার প্রথম পাতাতেই একটি ‘এজ টেব্‌ল’ করে দিয়েছে সিপিএম। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনও এরিয়া কমিটি যদি ১৩ জনের হয়, তা হলে তার ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ পাঁচ জনের বয়স হতে হবে ৫০-এর কম। সেখানেও ভাগ রয়েছে। ওই পাঁচ জনের মধ্যে এক জন অনূর্ধ্ব ৩১, এক জন অনূর্ধ্ব ৪০ এবং তিন জন অনূর্ধ্ব ৫০ হতে হবে। একই ভাবে দু’জন মহিলাকে জায়গা দিতে হবে কমিটিতে।

রাজ্য সিপিএম তাদের নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে দিয়েছে, সব নির্দেশ মেনে বিদায়ী কমিটি যে প্যানেল পেশ করবে, তার পাল্টা সম্মেলন কক্ষ থেকে কোনও নাম এলে যদি একান্তই ভোটাভুটি করতে হয়, তা হলে প্রত্যেকের নামের পাশে বয়স উল্লেখ করে দিতে হবে ব্যালটে। প্রতিনিধিরা যাতে হিসাব কষে ভোট দিতে পারেন। এর আগে সম্মেলন সংক্রান্ত পার্টি চিঠিতে সিপিএম উল্লেখ করেছিল, যত জনের কমিটি হবে, তত সংখ্যাতেই ভোট দিতে হবে। না হলে ওই ব্যালট বাতিল বলে গণ্য হবে। উদাহরণ দিয়ে সিপিএমের এক নেতা বলেন, ‘‘এরিয়া কমিটি যদি ১৩ জনের হয়, তা হলে প্রথমে বিদায়ী কমিটি সেই তালিকা পেশ করবে। পাল্টা কোনও নাম থাকলে তা হলে কক্ষ থেকে জমা দিতে হবে। কিন্তু ভোট দেওয়ার সময়ে কেউ ১০ জন বা ১৫ জনকে ভোট দিয়ে ব্যালট জমা দিতে পারবেন না। তাঁকে পছন্দমতো ১৩ জনকেই ভোট দিতে হবে। না হলে সেই ব্যালট বাতিল করে দেওয়া হবে।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘শুধু এক ধার থেকে ১৩ জনকেই ভোট দিলে হবে না। বয়সবিধি মেনেই ভোট দিতে হবে। না হলে সেই ব্যালটও গোনা হবে না।’’ জেলা কমিটির যে নেতৃত্ব ভোটগণনার দায়িত্বে থাকবেন, তাঁদেরও গণনা করতে হবে বয়সবিধি মেনেই।

১৩ জনের কমিটি হলে কেন ১৩ জনকেই ভোট দিতে হবে? সিপিএম তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছে নির্দেশিকায়। এর উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লেখা হয়েছে, ‘‘উপদলীয় মনোভাব পোষণের কারণে অনৈতিক ভাবে কোনও কোনও নির্দিষ্ট কমরেডকে শুধু ভোট দিয়ে বাকি স্থান শূন্য রেখে কমিটি গঠনের মূল উদ্দেশ্যকে বানচাল করার প্রবণতা যথাসম্ভব রোধ করা।’’

রাজ্য কমিটির এই ‘স্পষ্ট’ নির্দেশিকার ফলে ফাঁপরে পড়েছেন প্রবীণ নেতাদের অনেকেই। অনেককেই এই নিয়মের ফলে কমিটির মায়া কাটিয়ে ‘নেতা’ থেকে ‘কর্মী’ হয়ে যেতে হবে। তবে আলিমুদ্দিন যে আগ্রাসী ভাবে বয়সবিধি কার্যকর করতে চাইছে দলে, তা নিয়ে দলের মধ্যেই দু’রকম মত রয়েছে। একাংশ খুবই ইতিবাচক ভাবে নিচ্ছেন সমগ্র বিষয়টিকে। তাঁদের বক্তব্য, দলের খোলনলচে বদলাতে গেলে মিনমিন করে কিছু বললে হচ্ছে না। কড়া দাওয়াই দরকার ছিল। এ বার সেটা হবে। আবার অন্য অংশের বক্তব্য, যে ভাবে রাজ্য পার্টি নির্দেশিকা দিয়েছে, তা খুবই ‘যান্ত্রিক’। উত্তর ২৪ পরগনার এক সিপিএম নেতার বক্তব্য, ‘‘এর ফলে অনেক কার্যকরী নেতৃত্বকে কমিটির বাইরে চলে যেতে হবে। আবার শুধুমাত্র বয়সের মাপকাঠিতে অনভিজ্ঞ, বা শুধু ফেসবুকে বুলি আওড়ানো লোক কমিটিতে চলে আসবেন। যা পার্টির জন্য ভাল হবে না।’’ তা ছাড়া গ্রামাঞ্চলে সর্বত্র এত কমবয়সি লোকজন পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে অনেকের।

এত কিছুর পরেও সিপিএমে প্রশ্ন ঘুরছে, সম্মেলন না হয় হল। কমিটিও না হয় তৈরি করা গেল। কিন্তু ভোট কি ফিরবে? প্রার্থীদের জামানত কি থাকবে?

আরও পড়ুন
Advertisement