Country Spirit

দিশি মদের দিন কি ফুরিয়ে এল! বিশ্বকর্মা পুজোর আগেই নতুন রূপে বাজারে আসছে ‘বাংলা’

রাজ্যে যে সব দিনে বাংলা মদের বিক্রি রেকর্ড ছোঁয়, তার মধ্যে একটি বিশ্বকর্মা পুজো। সেই পুজোর আগেই এসে যাবে নতুন নাম। তবে ঝাঁজ বা গন্ধে তেমন কিছু ফারাক আসছে না এখনই। দিশি মদের দোকানের নামও যাবে বদলে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:১৩
বাংলাকে ‘দিশি মদ’ বলে আর ডাকা যাবে না।

বাংলাকে ‘দিশি মদ’ বলে আর ডাকা যাবে না। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বাংলা মদকে আর ‘দিশি’ বলে ডাকা যাবে না। উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দফতরের হলেও নতুন রূপে পাওয়া যাবে নরেন্দ্র মোদীর স্লোগান ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’-র ছোঁয়া। রাজ্যে যে সব দিনে বাংলা মদের বিক্রি রেকর্ড ছোঁয়, তার মধ্যে একটি বিশ্বকর্মা পুজো। তার দু’দিন আগেই ‘কান্ট্রি লিকার’ হয়ে যাবে ‘ইন্ডিয়া মেড লিকার’। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন নাম হলেও ঝাঁজ বা গন্ধে তেমন কিছু ফারাক আসছে না এখনই। তবে দিশি মদের দোকানের নামও যাবে বদলে। এখন থেকে ডাকতে হবে ‘আইএমএল শপ’ নামে। আবগারি দফতর সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি সব জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন এই নামবদল? এই প্রসঙ্গে আবগারি সচিব গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘আসলে কান্ট্রি লিকার বলতে আমরা যা বুঝি তার উপাদান মূলত আখ থেকে যে চিনি পাওয়া যায় তা। বলা যেতে পারে ঝোলা গুড়কে পরিশোধিত করে তাতে জল মেশানো হয়। কিন্তু সেটা এখন বদলে গিয়েছে। এখন চালের খুদ, ভুট্টা-সহ নানা শস্যদানা থেকে দেশি মদ তৈরি করা হয়। সেটা আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিশোধিত। সেই কারণে এটাকে আর কান্ট্রি লিকার বলা চলে না। সেই কারণেই এ বার নতুন নামকরণ হচ্ছে।’’

ঝাঁজ ও গন্ধের ফারাক অবশ্য আগেই এসেছে। সস্তায় কম ঝাঁজের দিশি মদ আগেই এসেছে বাংলার বাজারে। এমনকি বাংলা মদ প্রস্তুতকারীদেরই তৈরি রাম, হুইস্কি পাওয়া যাচ্ছে কম দামে। বিদেশি মদের মতো স্বাদ না হলেও কম দামে সেই রাম, হুইস্কির চাহিদাও ভাল। সুরাপ্রেমীরা অনেকেই বাংলা মদ ছেড়ে অল্প দামের বিলিতির দিকে ঝুঁকেছেন। আবগারি দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের পছন্দ বদলায়। ব্যবসায়ীদের থেকে জানার পরেই নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এ বার যে নামবদল হচ্ছে তার সঙ্গে মানের ফারাক কিছু হচ্ছে না। দফতরের লক্ষ্য, সুরাপ্রেমীদের চোলাই মদের থেকে সরিয়ে আনা। সেই কারণেই বিভিন্ন স্বাদের, বিভিন্ন মানের দিশি ও বিলিতি আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হয় সর্বত্র যেন তা পাওয়া যায়।’’

Advertisement

গত কয়েক বছরে রাজ্যে দিশি মদ নিয়ে অনেক রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষাই চালিয়েছে আবগারি দফতর। মূল লক্ষ্য ছিল, চোলাই মদ থেকে সুরাপ্রেমীদের দূরে রাখা। একের পরে এক বিষক্রিয়ায় বিপর্যয়ের খবর আসার পরেই কম খরচে দিশির ব্যবস্থা করা হয়। ২৮ টাকা এমনকি ২৩ টাকাতেও ৩০০ মিলিলিটারের দিশি মদ বাজারে আনা হয়। সম্প্রতি তার থেকেও এক কদম এগিয়ে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়, যাতে মাত্র ১০০ টাকায় সুরারসিকরা ৩৭৫ মিলিলিটারের হুইস্কি বা রামের বোতল পান। তবে সাধারণ রাম, হুইস্কির তুলনায় এই মদের মানগত ফারাক রয়েছে। সস্তার রাম বা হুইস্কিতে ঝাঁজ কম। নতুন ব্র্যান্ডের হুইস্কি এবং রামে অ্যালকোহলের মাত্রা ৫০ ডিগ্রি। আগে কয়েকটি বিলিতি মদ প্রস্তুতকারী সংস্থা ৫০ ডিগ্রি অ্যালকোহলের মাত্রার মদ বানাত। কিন্তু এখন তাদের সংখ্যা কম। সেই কারণেই দিশি মদ প্রস্তুতকারীদেরই বিলিতি তৈরির ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সেই মদগুলি ফরেন লিকার হিসাবেই বিক্রি হয়। সেই সঙ্গে বাকি দিশি মদের নাম ছিল ‘কান্ট্রি স্পিরিট’। এ বার সেই নামটাই আর ব্যবহার হবে না।

ঘটনাচক্রে, গত কয়েক বছরে রাজ্যে মদের চাহিদা বাড়তির দিকে। চলতি বছরের গ্রীষ্মে বিয়ারের চাহিদা এতটাই বেড়ে যায় যে, ‘রেশনিং’ ব্যবস্থা চালু করতে হয় আবগারি দফতরকে। আগের বছরে যে দোকানে যে পরিমাণ বিয়ার বিক্রি হয়েছিল, সেটা দেখে এ বার বোতল সরবরাহ করা হয়। এর পরে বাজারে আসে ‘ক্যালিপসো অরিজিনাল থ্রি এক্স রাম’, ‘কসমস ফিফটি থ্রি এক্স রাম’, ‘এমবস থ্রি এক্স রাম’, ‘হিমালয়ান বিয়ার ফাইন ইন্ডিয়ান রাম’, ‘টপ টেন থ্রি এক্স রাম’ ইত্যাদি। যেগুলির শুধু ৩৭৫ মিলিলিটারের বোতলই পাওয়া যায়। সবেরই দাম ১০০ টাকা। এই দামে হুইস্কির তালিকায় ‘অ্যাস্ট্রা ক্লাব’, ‘কসমস ফিফটি ডিলাক্স’, ‘কান্ট্রি ক্লাব ডিলাক্স’, ‘এমবস ফাইন’, ‘পিটার ক্যাট ফাইন গ্রেইন’, ‘রক সি ফাইন’ ইত্যাদি নানা ব্র্যান্ড রয়েছে।

বাংলায় বাংলা মদের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এককালে বাংলা মদ ‘কালীমার্কা’, ‘তারামার্কা’ হয়ে উঠেছিল। এখন সেখান থেকে বাংলা মাতাচ্ছে ‘দাদা’, ‘জোশ’, ‘পলাশ’, ‘মহুল’, ‘বাজিগর’-সহ আরও অনেক সুন্দর নামের কান্ট্রি স্পিরিট। না, এই নামে আর ডাকা যাবে না। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ব্র্যান্ড নাম যাই হোক না কেন সবাই ‘আইএমএল’।

আরও পড়ুন
Advertisement