‘অন্ন বস্ত্র আবাস’ শীর্ষক একটি সিরিজ় শুরু করতে চলেছে আনন্দবাজার অনলাইন। গ্রাফিক : শৌভিক দেবনাথ।
সত্তরের দশকে অমিতাভ বচ্চন অভিনীত একটি ছবি জনপ্রিয় হয়েছিল— ‘রোটি, কাপড়া অওর মকান’। প্রবীণ অভিনেতা মনোজ কুমার প্রযোজিত, পরিচালিত এবং লিখিত সেই ছবি সাধারণ মানুষের জীবনে অবশ্য প্রয়োজনীয় তিনটি বস্তুর কথা বলেছিল। ১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সেই ছবির আগেই অবশ্য ১৯৬৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে ওই শব্দবন্ধ দেশবাসীকে শুনিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। প্রধানমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত স্লোগানই হোক বা বলিউডের ছবি— প্রায় অর্ধশতাব্দী পেরিয়েও সেই স্লোগান এখনও সমান প্রাসঙ্গিক।
যেমন প্রাসঙ্গিক এই পশ্চিমবঙ্গে। ২০২২ সালের শেষ পর্বে এবং ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্পর্বে দাঁড়িয়ে।
তথাকথিত কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ইতিহাস বলে, গরিবের যে অভাবই থাক, তার জন্য তৈরি করা সরকারি প্রকল্পের কোনও অভাব নেই। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান— সব কিছুরই ‘যোজনা’ রয়েছে। অন্নের সংস্থান জোগাতে কেন্দ্র, রাজ্য— দুই সরকারই ভর্তুকির চাল-গম দিয়ে থাকে। কেন্দ্র যেমন ইদানীং বিনামূল্যে রেশনে চাল-গম বিলি করছে, রাজ্যেরও দু’টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার প্রকল্প রয়েছে। আর যতই অভাব থাক, আধপেটা খেয়ে হলেও চেয়েচিন্তে বস্ত্রের সংস্থানও করে নেন গরিব মানুষ। কিন্তু যত সমস্যা মাথার উপর ছাদ নিয়েই!
তবে দুঃস্থ মানুষকে ন্যূনতম একটি ঘর দেওয়ার প্রকল্পও আছে। যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ (যা আগে ছিল ‘ইন্দিরা আবাস যোজনা’), তেমনই রাজ্য সরকারে ‘গীতাঞ্জলি’। কিন্তু সব যোজনা বা প্রকল্পের সফল হয়ে ওঠার পথে যেমন বাধা তৈরি হয়, কেন্দ্রীয় আবাস প্রকল্পেও তা-ই হয়েছে এ রাজ্যে। যার মূল কারণ, সুবিধা যাঁর পাওয়ার নয়, তিনি দিব্য সেই সুবিধা পাচ্ছেন। আর সুবিধাগুলি সরকার যাঁদের জন্য দেয়, বাদ পড়ে যাচ্ছেন তাঁরাই! পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামেগঞ্জে এ নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা তুঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে।
এই আবহে বুধবার থেকে ‘অন্ন বস্ত্র আবাস’ শীর্ষক একটি সিরিজ় শুরু করছে আনন্দবাজার অনলাইন। যেখানে আমরা খোঁজার চেষ্টা করেছি, রাজনীতির পাকেচক্রে পড়ে কী ভাবে মৌলিক চাহিদার প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কী ভাবে মানুষের ‘অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান’-এর চাহিদা ভোট-রাজনীতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে।
আগামী বছরের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় শাসকদলের ‘দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ’-এর অভিযোগ তুলে সরব বিরোধীরা। প্রকৃত গরিব হওয়া সত্ত্বেও প্রকল্পের উপভোক্তাদের তালিকা থেকে নাম বাদ গিয়েছে, এই অভিযোগ ঘিরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নিত্য প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। উল্টো দিকে, বেনিয়মের অভিযোগ ওঠায় রাজ্য সরকারও কেন্দ্রের বেঁধে দেওয়া নিয়ম মেনে ‘স্বচ্ছ’ ভাবে প্রকল্প রূপায়ণে বদ্ধপরিকর। পাঁচ বছর আগের পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের মনোনয়নে ‘বাধা’ বা নিজেদের ‘কর্তৃত্ব স্থাপনে বলপ্রয়োগ’ যেমন ঘাসফুল শিবিরের কাছে কাঁটা হয়ে বিঁধছে এখনও, এ বার আবাসেও সেই রকম হলে কি হিতে বিপরীত হতে পারে?