আর জি কর কাণ্ডে দোষীদের শাস্তি-সহ নানা দাবিতে রাজভবনের সামনে বিক্ষোভ কংগ্রেসের। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
প্রাক্তন ও বর্তমান সভাপতি পাশাপাশি। মঞ্চে প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে এআইসিসি-র প্রতিনিধিরাও। সেই মঞ্চ থেকেই দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া হল ‘প্রতিঘাতে’র বার্তা। রাজপথে উত্তপ্তও হয়ে উঠল রাজভবন অভিযান। গ্রেফতার হলেন দলের শীর্ষ নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে বদলের পরে এই প্রথম বার রাস্তায় লড়াই করার চেহারায় দেখা গেল রাজ্য স্তরের কংগ্রেসকে!
আদানি-কাণ্ড ও মণিপুরে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ব্যর্থতা’র প্রতিবাদে বিক্ষোভের কর্মসূচি নিয়েছিল এআইসিসি। তার সঙ্গেই প্রদেশ কংগ্রেস জুড়ে নিয়েছিল আর জি কর-কাণ্ডকে। আবার ‘নেশা নয়, চাকরি চাই’— এই স্লোগানকে সামনে রেখে বুধবারই রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিল প্রদেশ যুব কংগ্রেস। সব বিষয়কে একত্রিত করে প্রদেশ ও যুব কংগ্রেস এ দিন একসঙ্গেই রাস্তায় নেমেছিল। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে প্রতিবাদ-সভায় ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন ও বর্তমান সভাপতি অধীর চৌধুরী ও শুভঙ্কর সরকার, এআইসিসি-র সম্পাদক ও রাজ্যের সহ-পর্যবেক্ষক অম্বা প্রসাদ, যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি উদয়ভানু চিব এবং প্রদেশ সভাপতি আজ়হার মল্লিক। বক্তা ছিলেন প্রদেশ ও যুব কংগ্রেসের দুই প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ও অমিতাভ চক্রবর্তীও। সভা শেষে শুভঙ্কর, আজ়হারদের নেতৃত্বে মিছিল রাজভবনের সামনে পৌঁছলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে। এক জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বিক্ষোভকারীরা চড়াও হন পুলিশ ব্যারিকেডে। টেনে-হিঁচড়ে অনেককে ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রতিবাদে রাস্তায় ধর্নায় বসে পড়েন শুভঙ্কর, অম্বা, অমিতাভ, তপন আগরওয়ালেরা। পরে তাঁদেরও গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যায় তাঁরা ছাড়া পান।
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে একসঙ্গেই আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। অধীর বলেছেন, এক দিকে কর্মসংস্থান ও সংবিধান রক্ষার জন্য এবং অন্য দিকে রাজ্যে দুর্নীতি, অপশাসনের বিরুদ্ধে কোনও লড়াই থেকেই সরে থাকবে না কংগ্রেস। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আর জি করের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে বলেছিলেন, এক জন ধরা পড়েছে। বাকিরাও ধরা পড়বে। আর এখন তিনি চুপ। তৃণমূল নেতাদের প্রায় উল্লাস শোনা যাচ্ছে, সিবিআই কিছু করতে পারল না! দুর্গাপুজোয় মুখ্যমন্ত্রী কার্নিভাল করেন। ভয় হচ্ছে, রাজ্যের অপরাধীদের নিয়ে দিদি না একটা কার্নিভাল করে দেন!’’ প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর বলেছেন, ‘‘আদানির প্রসাদ যারা পেয়েছে, তারাই সংসদে প্রতিবাদ থেকে সরে থাকছে। তারাই আর জি করের ঘটনা ধামাচাপা দিতে কেন্দ্রের মদত পাচ্ছে। আদানির হাতে এত বন্দর, এত কিছু, জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিতে সেটাও তো কারণ। সুতরাং, এটা অবশ্যই সাধারণ মানুষের বিষয়।’’ দলের যুব কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘প্রতিবাদ অনেক হয়েছে, এ বার প্রতিঘাত চাই। আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে থানায়, হাসপাতালে!’’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে অম্বেডকরকে ‘অপমান’ করেছেন, এই অভিযোগে সরব হয়েছেন উদয়ভানু ও কংগ্রেসের অন্য নেতারা। আর আজ়হারের ঘোষণা, আগামী ১৬ই জানুয়ারি হবে যুব কংগ্রেসের সিইএসসি অভিযান।