সিপিএমের পতাকা। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক। —ফাইল চিত্র।
১০ দিন আগে সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্মেলনে যে ‘বেনজির অশান্তি’ হয়েছিল, তার আঁচ পড়ল দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকেও। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী সরাসরি উল্টো দিকের বিরুদ্ধে ‘দলের মধ্যে উপদলীয় কার্যকলাপ’-এর অভিযোগ করল। মঙ্গলবারের জন্য পাল্টা প্রস্তুতি শুরু করল দক্ষিণ ২৪ পরগনা সিপিএমের ‘সংখ্যালঘু’ অংশও। সোমবার থেকে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে। চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত।
গত ২১ ডিসেম্বর একাধিক ছাত্র-যুব নেতাকে জেলা কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদ হিসাবে জেলা কমিটির প্যানেল থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন ১৮ জন সিপিএম নেতানেত্রী। সেই তালিকায় ছিলেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলি চক্রবর্তী, প্রাক্তন বিধায়ক রামশঙ্কর হালদার, যাদবপুরের দুই নেতৃত্ব সুব্রত দাশগুপ্ত এবং চন্দনা ঘোষ দস্তিদার-সহ অন্যেরা। যা দক্ষিণ ২৪ পরগনা সিপিএমের ইতিহাসে কখনও হয়নি। সেই সময়েই বোঝা গিয়েছিল, জল অনেক দূর গড়াবে। হলও তাই।
রাজ্য কমিটির বৈঠকের প্রথম দিনে জেলার পক্ষ থেকে আলোচনা করেছেন জেলা সম্পাদক রতন বাগচী। সিপিএম সূত্রে খবর, রতন বৈঠকে নাম প্রত্যাহার করা নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে উপদলীয় কার্যকলাপের অভিযোগ তুলেছেন। এ ব্যাপারে রাজ্য কমিটিকে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি। সিপিএম সূত্রে এ-ও খবর, রতন যা-ও বা রেখেঢেকে বলেছেন, তাঁর চেয়েও চড়া সুরে আক্রমণ শানিয়েছেন রাজ্য কমিটির আর এক সদস্য তুষার ঘোষ। তিনিও ওই জেলারই। যদিও তিনি ক্ষেতমজুর সংগঠন থেকে রাজ্য কমিটিতে রয়েছেন। সিপিএম সূত্রে খবর, তুষার রাজ্য কমিটির বৈঠকে দাবি করেছেন, নেতৃত্বের একাংশের মদতেই নিচুতলা থেকে ‘গোষ্ঠীবাজি’ হয়েছে। যার ছাপ পড়েছে জেলা সম্মেলনেও। তুষার এবং রতনের এ-ও অভিযোগ, বোঝাপড়া করেই ওই দিন ১৮ জন একসঙ্গে জেলা কমিটির প্যানেল থেকে নাম প্রত্যাহার করেছিলেন।
যাঁরা জেলা কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহার করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই দলের মধ্যে সুজনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সেই তালিকায় রয়েছেন রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন বিধায়ক রাহুল ঘোষও। মঙ্গলবার রাহুলের বলার পালা। সিপিএমের একাধিক নেতৃত্বের বক্তব্য, পাল্টা যুক্তিতে কী ভাবে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে ‘ফালাফালা’ করতে হয়, সেই প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে উল্টো শিবিরে।
এখনও পর্যন্ত সিপিএমের বেশ কয়েকটি জেলা সম্মেলন হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ছাড়া কোথাও তেমন কোন্দল প্রকাশ্যে আসেনি। স্বয়ং রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম দক্ষিণ ২৪ পরগনার সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন। সূত্রের খবর, উদ্বোধনী বক্তৃতাতে সেলিম দু’টি বিষয়ে সতর্ক করতে চেয়েছিলেন। এক, গুরুবাদ থেকে দলকে মুক্ত করা। এবং দুই, উপদলীয় কার্যকলাপ বন্ধ করা। সিপিএমের অনেকের বক্তব্য, ঘটনাচক্রে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনে গুরুবাদের ফলেই যা ঘটার ঘটেছে। যদিও, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সম্মলনের শেষ দিনে সেলিম ছিলেন না। তিনি চলে গিয়েছিলেন জলপাইগুড়িতে। অনেকের এ-ও বক্তব্য, সেলিম নিজে উপস্থিত থাকলে ‘মধ্যপন্থা’ বার করে সমাধানের পথ বাতলাতেন। কিন্তু শ্রীদীপ ভট্টাচার্যদের কথায় সে চিঁড়ে ভেজেনি। বৈঠকের সমাপ্তি ভাষণে সেলিম দক্ষিণ ২৪ পরগনা নিয়ে কী বার্তা দেন, সে দিকেও তাকিয়ে সিপিএমের রাজ্য কমিটি।