মালদহের প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
এ সমাজে মাফিয়াদের কোনও জায়গা নেই। মঙ্গলবার মালদহে প্রশাসনিক সভা থেকে আবার মনে করিয়ে দিতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি নিহত তৃণমূল কাউন্সিলর দুলাল সরকারের প্রসঙ্গ তোলেন। এ দিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর দুলালের স্ত্রী চৈতালি সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি চৈতালিকে বলব ও বাবলার (দুলাল সরকার) অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করবে। আমরা সকলেই তোমার সঙ্গে আছি।’’ এর পরই তাঁর হুঁশিয়ারি, মাফিয়াদের জায়গা এই সমাজে নেই। যাঁরা সন্ত্রাস করে এই সমাজে তাঁদের জায়গা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা মানুষকে ভালবাসেন তাঁরাই আমার স্বর্গ। যাঁরা সেবা করেন, যাঁরা গরিব মানুষকে কাছে টেনে নেন, তাঁরাই আমার ভালবাসা, আমার মানবিক দিক।’’ বিহার, ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে সীমানা লাগোয়া মালদহ। এ ছাড়া বাংলাদেশ সীমান্তও রয়েছে। তাই সীমানা এলাকা দিয়ে যাতে এই রাজ্যে কোনও দুষ্কৃতী ঢুকতে না পারে সে বিষয়েও প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে বলেও বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর বার্তা কোনও জঙ্গি, সমাজবিরোধী যেন ‘ঘুঘুর বাসা’ বানাতে না পারে। তা হলে তা দেশ, সমাজ এবং রাজ্যের জন্য ক্ষতি।
এই সভা থেকে প্রশাসনিক আধিকারিক এবং স্থানীয় প্রশাসনগুলির উদ্দেশেও বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মানুষের কী কী অসুবিধা আছে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তা জানার চেষ্টা করতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিডিও, ডিএম, ওসি, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ— সবাইকে বলব সপ্তাহে এক দিন এক ঘণ্টা করে গরিব মানুষের বাড়িতে যান। যাঁর ক্ষমতা নেই তাঁর জন্য চা, দুধ, চিনি কিনে নিয়ে যান। বলুন, আসুন চা খাই। এটুকু কাজ করতে বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। মাটির দাওয়ায় বসবেন। চেয়ার দিলে বসবেন। জিজ্ঞাসা করবেন। আপনার কি কোনও সমস্যা আছে?’’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে আবাস যোজনার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। তাঁর আবার অভিযোগ, কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। কিন্তু তার জন্য কাজ থমকে থাকেনি বলেও দাবি করেছেন তিনি। কেন্দ্র ১ লক্ষ ৬৫ হাজার কোটি টাকা দেয়নি বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। খাদ্যসাথী, স্বাথ্যসাথী, কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কৃষকবন্ধু, সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র, হাসপাতাল, শিক্ষাশ্রী, যুবশ্রী, মেধাশ্রী, স্টুডেন্ট স্মার্ট কার্ড, পরিযায়ী শ্রমিক, বিড়ি শ্রমিকদের জন্য কাজ করছে রাজ্য সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেয় না তিন বছর ধরে। গ্রামের রাস্তা তৈরির কাজ, ১০০ দিনের কাজ থেমে নেই। আবাসন যোজনায় ৪৭ লক্ষ বাড়ি করে দিয়েছি।’’
আর জি কর প্রসঙ্গ উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বলেছিলাম ফাঁসি চাই। যদি কেউ দানবিক, পাশবিক হয়, সমাজ মানবিক হতে পারে? মা-বোনেদের সম্মানের স্বার্থে মানবিক হতে হবে।’’