Shiva temple controversy

বাংলার মন্দিরেও দলিতেরা অস্পৃশ্য! ক্রমে জোরালো হচ্ছে প্রবেশের দাবি, মাতব্বরদের সঙ্গে সংঘাতে ছড়াল উত্তেজনা

বিতর্কের সূত্রপাত দু’সপ্তাহ আগে। প্রশাসন দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে বিষয়টি মিটমাট করেছিল বটে, কিন্তু শুক্রবার থেকে ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে মন্দির সংলগ্ন এলাকায়।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৫ ১৮:২৮

—প্রতীকী ছবি।

গ্রামের শিবমন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশের অধিকার দিতে হবে! এই দাবি ঘিরে দু’পক্ষের সংঘাতে উত্তপ্ত হল পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার গীধগ্রাম। বিতর্কের সূত্রপাত সপ্তাহ দুয়েক আগে। প্রশাসন দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে বিষয়টি মিটমাট করেছিল বটে, কিন্তু শুক্রবার থেকে ফের উত্তেজনা তৈরি হয় গ্রামে। শনিবারও ফের সংঘাতে জড়াল দু’পক্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গ্রামে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। কাটোয়ার এসডিপিও কাশীনাথ মিস্ত্রি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’’

Advertisement

গীধগ্রামে প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের পুরনো একটি শিবমন্দির রয়েছে। স্থানীয়েরা জানান, এই শিব ‘গীধেশ্বর’ নামে পরিচিত। শিবরাত্রি আর গাজন উৎসব ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় গ্রামে। সম্প্রতি, শিবরাত্রির দু’-তিন দিন আগে গীধগ্রামের দাসপাড়ার কয়েক জন বাসিন্দা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন যে, গীধেশ্বরের মন্দিরে পুজো দিতে দেওয়া হয় না দাসপাড়ার শতাধিক পরিবারকে। ঢুকতে গেলে গালিগালাজ করা হয়। কাটোয়া মহকুমা প্রশাসনের কাছে তাঁদের আর্জি ছিল, যাতে তাঁরা শিবরাত্রির দিন শিবের পুজো করার অধিকার সমান ভাবে পান।

বিষয়টি নিয়ে গ্রামের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় হস্তক্ষেপ করে প্রশাসন। কাটোয়ার মহকুমাশাসক অহিংসা জৈনের উদ্যোগে গত ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি তাঁর দফতরে বৈঠক হয়। কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, কাটোয়ার এসডিপিও, গীধেশ্বর মন্দির কমিটির কর্মকর্তা এবং দাসপাড়ার কয়েক জন প্রতিনিধি ওই বৈঠকে ছিলেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, মন্দিরে পুজো দেওয়ার অধিকার সকলেই সমান ভাবে পাবেন। দু’পক্ষই তাতে সম্মতি দেয়।

Clashes erupt between two groups over demand to enter Shiva temple in Gidhagram, Purba Bardhaman

পূর্ব বর্ধমানের গীধগ্রামে এই শিবমন্দির প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের পুরনো। —নিজস্ব চিত্র।

পরে একই সমস্যা নিয়ে ফের গীধগ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। দাসপাড়ার বাসিন্দা এককড়ি দাস, মদন দাসদের অভিযোগ, ‘‘আমরা শিবমন্দিরে পুজো দিতে গেলে তালা খোলা হয়নি। পুজো দিতে পারিনি। আমরা দলিত বলেই এই ব্যবহার।’’

গীধেশ্বর শিবের এক সেবায়েত মাধব ঘোষ বলেন, ‘‘প্রতি দিনের পুজোর পর পুরোহিত গর্ভগৃহের দরজা বন্ধ করে চলে যান। সন্ধ্যার আগে ওই দরজা খোলার বিধি নেই। কিন্তু দাসপাড়ার কিছু মানুষ দাবি করছিলেন, গর্ভগৃহ খুলে দিতে হবে। তখনই গ্রামের মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পুলিশ অবশ্য পরিস্থিতি শান্ত করে দেয়।’’

মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে ইতিমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাতে শিবের পুজোর তিন শতাব্দী প্রাচীন রীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, পূর্বপুরুষদের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী গীধেশ্বর শিবের পুজোয় মালাকার সম্প্রদায় মন্দিরের ভিতর পরিষ্কার করে। ঘোষ সম্প্রদায় ভোগের জন্য দুধ-ছানা দেয়। কুম্ভকার মাটির হাঁড়ি সরবরাহ করে। হাজরা সম্প্রদায় মশাল জ্বালানোর দায়িত্বে রয়েছে। নির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে কোটাল এবং বাইন সম্প্রদায়েরও। কিন্তু ব্রাহ্মণ ব্যতীত গর্ভগৃহে কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। তিন শতাব্দী ধরে চলে আসছে এই নিয়ম। তাই এই প্রথা যাতে না ভাঙা হয়, সে জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন গ্রামবাসীদের একাংশ।

পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, ‘‘প্রথমত, এই সব বিষয়ে শুধুমাত্র প্রশাসন দিয়ে হবে না। আগে মানুষকে সচেতন করতে হবে। শুধু গীধগ্রাম নয়, জেলায় আরও কয়েকটি জায়গায় একই রকম ভাবে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয় না। এর জন্য লাগাতার সচেতনতা শিবিরের মাধ্যমে এলাকার মানুষজনকে বোঝাতে হবে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন