Anupam Hazra Security Withdrawn

দলকে অস্বস্তিতে ফেলার শাস্তি! বিজেপির অনুপমকে নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত শাহের, আরও অনেককেই বার্তা

একদা বোলপুরের তৃণমূল সাংসদ ছিলেন অনুপম। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে লোকসভা ভোটে যাদবপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হন। তবে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করা হয়নি। সে সময়েও দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:৪৬
Central Government withdraws security of BJP leader Anupam Hazra

(বাঁ দিকে) অনুপম হাজরা। অমিত শাহ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

পদাধিকার বলে তিনি কেন্দ্রীয় নেতা। বিজেপিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ পদ না হলেও অনুপম হাজরা দলের সর্বভারতীয় সম্পাদকদের অন্যতম। তবে বাংলায় তাঁর কোনও দায়িত্বই নেই। কিন্তু ইদানীং তিনি রাজ্যে নেতৃত্বের ‘চোখে আঙুল দাদা’ হয়ে উঠতে চাইছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে দলবিরোধী মন্তব্য করে রাজ্য নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলছিলেন। বিজেপির মধ্যেই অনুপমকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি উঠেছিল। সেই সবের মধ্যেই ‘চুপচাপ’ একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্ত্রক ঠিক করে থাকে কোন নেতা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পাবেন এবং কোন পর্যায়ের পাবেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন কেন্দ্রের ‘ওয়াই ক্যাটেগরি’-র নিরাপত্তা পেতেন তিনি। গত ৫ ডিসেম্বর অনুপমকে জানিয়ে সেই নিরাপত্তা তুলে নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। জানা গিয়েছে, এর পরেই বোলপুর ছেড়ে দিল্লি চলে গিয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে একাধিক বার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

Advertisement

এক সময়ে বোলপুরের তৃণমূল সাংসদ ছিলেন অনুপম। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে গত লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর আসনে প্রার্থীও হন। তবে বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি। সেই সময়ে নানা ভাবে তিনি রাজ্য নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন। বিজেপির অনেকেই বলেন, সেই কারণে রাজ্য থেকে সরিয়ে অনুপমকে কম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বিহারের সংগঠন দেখতে বলা হয়।

ইদানীং একের পর এক মন্তব্যে রাজ্য বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলে যাচ্ছিলেন অনুপম। বিশ্বভারতীর ফলক বিতর্কের সময়ে তিনি শান্তিনিকেতনে তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে চলে যান। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথাও বলেন। তার আগে রামপুরহাট এবং পরে খয়রাশোলে দু’টি বিজয়া সম্মিলনীতে যোগ দেওয়ার কর্মসূচি ছিল অনুপমের। তার মাঝে তিনি ফেসবুক লাইভে রাজ্য নেতৃত্বকে তীব্র আক্রমণ করেন। অভিযোগ করেন, রাজ্য সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)-এর মদতেই জেলা বিজেপিতে অরাজকতা চলছে। জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা লোক দিয়ে তাঁর প্রাণনাশের চেষ্টা করতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন অনুপম। সেই সঙ্গে জেলারই এক নেতা তাঁর ‘জাত’ উল্লেখ করে আক্রমণ করেছে, এমন অভিযোগ তুলে এর বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা বলেন অনুপম। এ প্রসঙ্গে তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘‘আমার জাত তুলে কথা বলা হয়েছে। আমি তফসিলি জাতির অন্তর্ভুক্ত। সেই মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ করব।’’

দলকে অস্বস্তিতে ফেললেও অনুপমের যুক্তি ছিল ভালর জন্যই তিনি সব কিছু করছেন। বলেছিলেন, ‘‘দলের কোণঠাসা কর্মীদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে চলেছি আমি। তবে যে কোনও কাজ করার ক্ষেত্রেই বাধা পাচ্ছি আমি। আমাকে রাজ্য বিজেপির তরফে কোনও কর্মসূচিতে ডাকা হয় না। কখনও ডাকা হলেও এমন সময়ে জানানো হয়, যাতে আমি সময়ে আসতে না পারি।’’ অনুপমের দাবি, রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বের কয়েক জনের অঙ্গুলিহেলনেই এই সব হচ্ছে। সেই সময়েই রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘উনি আগে বালুরঘাট সামলান। ক’দিন আগেই দেখলাম ২০ জন লোক নিয়ে ঘুরছেন। তার মধ্যে ১৮ জনই নিরাপত্তাকর্মী।’’ এর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সুকান্ত বলেছিলেন, ‘‘সবটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জানেন। কয়েক দিনের মধ্যে আপনারা এর ফল দেখতে পাবেন।’’

সুকান্তের নিরাপত্তা নিয়ে কটাক্ষ করা অনুপমেরই আর কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নেই। তবে কি সুকান্তের বলা ‘ফল’ পেলেন অনুপম? রাজ্য বিজেপিতে এই প্রশ্ন যেমন উঠেছে, তেমনই অন্য জল্পনাও রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, রাজ্যের নেতাদের সমালোচনা করা যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভাল চোখে দেখছেন না সেটাই অনুপমের নিরাপত্তা তুলে নিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা শুধু অনুপমের প্রতি ‘বার্তা’ নয়, বিভিন্ন সময়ে যাঁরা দলবিরোধী কথা বলেন, কথায় কথায় রাজ্য নেতাদের সম্পর্কে বিষোদ্গার করেন, বা দলীয় দফতরে এসে বিক্ষোভ দেখান তাঁদের প্রতিও ‘বার্তা’। এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘‘সকলকেই বুঝিয়ে দেওয়া হল, দলীয় শৃঙ্খলাই মূল কথা। কেউই তার উপরে নয়। সমালোচনা করতে হলে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে করতে হবে। তা না হলে তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন, কাউকে রেয়াত করা হবে না।’’ প্রসঙ্গত, অতীতে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি থাকার সময়ে দলকে অস্বস্তিতে ফেলার জন্য দিলীপ ঘোষকেও মুখ বন্ধ রাখতে বলে নির্দেশ দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

Advertisement
আরও পড়ুন