আগামী রবিবার সরকারি কর্মসূচিতে হলদিয়ায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রথমে সরকারি অনুষ্ঠান। তার পরে স্থানীয় রাজনৈতিক সমাবেশ। মোদীর সফরসূচিতে প্রথম সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তবে তারও আগে আমন্ত্রণ পৌঁছেছে তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর কাছে। ক্রমশ তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকা দিব্যেন্দুকে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে যখন রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে, তখন আবার ওই একই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেলেন তৃণমূলের আরও দুই সাংসদ শিশির অধিকারী এবং অভিনেতা দীপক অধিকারি ওরফে দেব।
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের যুক্তি, স্থানীয় সাংসদ হিসেবেই আমন্ত্রণ পেয়েছেন দিব্যেন্দু। কারণ, হলদিয়া তমলুক লোকসভা এলাকার মধ্যে। কিন্তু তার সঙ্গে কাঁথির সাংসদ শিশির কেন? তার জবাব হতে পারে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সাংসদ হিসেবে তিনি ডাক পেয়েছেন। কিন্তু সেই সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের দুই সাংসদ মেদিনীপুরের দিলীপ ঘোষ এবং ঘাটালের সাংসদ দেবকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে মোদীর অনুষ্ঠানে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ জানাচ্ছে, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপকে মঞ্চে রাখার জন্যই দেবকে আমন্ত্রণ জানানোটা ‘রাজনৈতিক কৌশল’। তবে অনেকে এমনও মনে করছেন, তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির চেয়ারম্যান শিশির এবং তৃণমূলের অভিনেতা-সাংসদ দেবকে আমন্ত্রণের পিছনে ‘রাজনৈতিক বার্তা’-ই দিতে চাইছে বিজেপি।
তবে আমন্ত্রণ পেলেও যাচ্ছেন না শিশির এবং দেব। আনন্দবাজার ডিজিটালকে শিশির জানিয়েছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ইদানীং একেবারেই বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না। চিকিৎসকের বারণ আছে। তবে আমন্ত্রণ পেয়ে যে তিনি ‘খুশি’, তা জানিয়েছেন শিশির। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা আমাকে অনেক সম্মান দিয়েছেন। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী নিজে আমায় ফোন করেছিলেন। কিন্তু আমি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছি, চিকিৎসকের বারণ থাকায় যেতে পারছি না।’’ অন্যদিকে, দেব বুধবার টুইট করে জানিয়েছেন, তিনিও হলদিয়ায় মোদীর অনুষ্ঠানে যেতে পারছেন না। প্রসঙ্গত, বুধবার বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ একটি সংবাদ উল্লেখ করে টুইটারে জানান, হলদিয়ায় মোদীর সঙ্গে একই মঞ্চে থাকবেন দেব। তারই জবাবে দেব জানিয়েছেন, আমন্ত্রণ পেয়ে খুশি হলেও তিনি ওই অনুষ্ঠানে থাকতে পারছেন না। বস্তুত, পেশাদারি ব্যস্ততার কারণে দেব ইদানীং রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে দূরে দূরে থাকছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাঁকে কমই দেখা যাচ্ছে। মেদিনীপুরের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাতেও তিনি যেতে পারেননি পেশাগত ব্যস্ততার কারণেই।
irrespective of our political ideologies, as I still cherish the good old times we spent together, when you represented the same party as me.
— Dev (@idevadhikari) February 3, 2021
All the very best for this and my best wishes are always with you & your Party.Take care. https://t.co/x9jfDBAlae
সৌমিত্রর উদ্দেশে দেব টুইটে লিখেছেন, ‘রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও এক দলে থাকার সময়ে আপনার সঙ্গে অনেক ভাল সময় কাটিয়েছি এবং উপভোগ করেছি। আমার পক্ষ থেকে আপনার ও আপনার দলের প্রতি সব সময় শুভকামনা থাকবে। ভাল থাকবেন’। আরও একটি টুইটে সৌমিত্রর নাম উল্লেখ করে দেব লিখেছেন, ‘আমি আপনার লড়াই ও সাফল্যের জন্য গর্ব অনুভব করি। আমি খুবই দুঃখিত যে ওই অনুষ্ঠানে আমি যেতে পারছি না, তবে আমি আমন্ত্রণ পেয়ে আনন্দিত। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও আপনি সব সময় আমার কাছে বিশেষ ভালবাসা ও শ্রদ্ধার’।
এখনও পর্যন্ত যা খবর, রবিবার মোদীর সরকারি অনুষ্ঠান ও রাজনৈতিক সমাবেশের মধ্যে খুব একটা ভৌগোলিক দূরত্ব থাকবে না। দু’টি অনুষ্ঠানই হওয়ার কথা হলদিয়ার হেলিপ্যাড ময়দানে। এমনিতেই বিধানসভা নির্বাচনের মুখে এসে যে প্রকল্পের সূচনা ও শিলান্যাসে মোদী আসছেন, তার মধ্যেও কেন্দ্রীয় সরকারের ‘রাজনৈতিক লক্ষ্য’ রয়েছে বলে সরব বিরোধীরা। ওই দিন ধোবি-দুর্গাপুর পাইপলাইন প্রকল্পের সূচনা করবেন মোদী। ৩৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইন বানাতে খরচ হয়েছে ২,৪৩৩ কোটি টাকা। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে দুর্গাপুরের ‘ম্যাটিক্স ফার্টিলাইজার প্ল্যান্ট’-এ গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়াও হাজারিবাগ, বোকারো, ধানবাদ, জামশেদপুর, পুরুলিয়া, আসানসোল এবং দুর্গাপুর শহরের বিভিন্ন সংস্থায়ও গ্যাস সরবরাহ করা যাবে বলে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে হলদিয়ায় ‘এলপিজি ইমপোর্ট টার্মিনাল’-এরও সূচনা করবেন তিনি। পূর্ব ভারতে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহের জন্য ১,১০০ কোটি টাকা খরচে এই টার্মিনাল বানিয়েছে ভারত পেট্রোলিয়াম। হলদিয়ায় ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের তৈল সংশোধনাগারে দ্বিতীয় ‘ক্যাটালিটিক ডিওয়াক্সিং ইউনিট’-এর শিলান্যাস করবেন মোদী। ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের রানিচকে ১৯০ কোটি টাকায় তৈরি চার লেনের উড়ালপুলেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে এখন সরকারি অনুষ্ঠানের থেকেও বেশি করে আলোচনায় মোদীর রাজনৈতিক সমাবেশ। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরে যা পূর্ব মেদিনীপুর গেরুয়া শিবিরের কাছে বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। হলদিয়াও শুভেন্দুর অন্যতম ‘শক্তিকেন্দ্র’ বলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি। দীর্ঘ দিন হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন শুভেন্দু। সেই হলদিয়া থেকেই নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে বাংলার মোদীর নির্বাচনী অভিযান শুরু হচ্ছে। ওই দিন মোদীর মঞ্চে প্রথমবার থাকতে চলেছেন শুভেন্দু। তার আগে সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বাবা শিশির ও ভাই দিব্যেন্দু। যা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ তো বটেই।