Teacher Recruitment Scam Case

নবগ্রাম থেকে নলহাটি, বড়ঞা থেকে বেহালা, নববর্ষে দিকে দিকে হানা তৎপর সিবিআইয়ের

সিবিআইয়ের দাবি, শনিবার কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূমের কয়েকটি এলাকায় তল্লাশি চলেছে। উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু নথি। যা নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সাহায্য করবে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৮:৪৮
CBI conducted searches in various districts in connection with teacher recruitment scam case.

কলকাতা, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুরে তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বাংলা নববর্ষের শুরুর দিনেই রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে তৎপর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। শনিবার সকাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা হানা দিয়েছেন। একাধিক বাড়িতে চলেছে চিরুনিতল্লাশি। সন্ধ্যার পরেও একাধিক জায়গায় অভিযান চলছে।

সিবিআইয়ের দাবি, হাই কোর্টের নির্দেশে তাঁরা প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির যে তদন্ত করছে তার সূত্রেই কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূমে তারা তল্লাশি চালিয়েছে। শুক্রবার মুর্শিদাবাদের বড়ঞায় তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে সিবিআই হানা দেয়। তল্লাশি অভিযানের সূচনা সেখান থেকেই। শনিবার সকালেও সেই বাড়িতে তল্লাশি এবং জীবনকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে সিবিআই। তল্লাশির মাঝে নিজের মোবাইল ফোন পুকুরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক। পুকুরের জল ছেঁচে সেই মোবাইল খুঁজছে সিবিআই।

Advertisement

এ ছাড়া, শনিবার সকালে সিবিআই গিয়েছে বীরভূমের নলহাটির-২ ব্লকের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি বিভাস অধিকারীর বাড়ি। তাঁর আশ্রম এবং ফ্ল্যাটেও তন্ন তন্ন করে তল্লাশি চালিয়েছেন গোয়েন্দারা। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত বিভাস। নিয়োগ দুর্নীতিতে গত বছর গ্রেফতার করা হয়েছে মানিককে। মানিকের গ্রেফতারের পর পরই তদন্তকারীদের নজরে এসেছিলেন বিভাস। তবে গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই দুর্নীতিতে হুগলির বলাগড়ের প্রাক্তন তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের মুখেই প্রথম বিভাসের নাম শোনা গিয়েছিল। দুর্নীতিতে বিভাস যুক্ত বলে দাবি করেছেন কুন্তল।

বাংলা বছরের প্রথম দিন সিবিআইয়ের একটি দল গিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরেও। সেখানে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে নাম জড়ানো গোপাল দলপতির বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। পটাশপুরে গোপালের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দারা।

গোপাল এবং তাঁর ‘স্ত্রী’ হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়ের কলকাতার ফ্ল্যাটেও সিবিআই হানা দিয়েছে শনিবার। বিকেলের দিকে বেহালার ৮০/৩ রাজা রামমোহন রায় রোডের ফ্ল্যাটে কয়েক জন সিবিআই আধিকারিক পৌঁছন। তাঁরা প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ফ্ল্যাটে ছিলেন। পরে ফ্ল্যাটটি সিল করে দিয়ে চলে গিয়েছেন। মাস দুয়েক আগে হৈমন্তীদের এই ফ্ল্যাটের বাইরে থেকে বেশ কিছু নথি মিলেছিল। অভিযোগ, সেই কাগজগুলি নিয়োগ সংক্রান্ত। তাতে চাকরিপ্রার্থীদের নাম এবং রোল নম্বরের তালিকা ছিল বলে অভিযোগ। এক সময় সেই ফ্ল্যাটে গোপাল এবং হৈমন্তী থাকতেন। বর্তমানে ফ্ল্যাটটি বন্ধ অবস্থায় ছিল।

শুক্রবার জীবনকৃষ্ণের বাড়িতে হানা দিয়ে প্রায় দু’বস্তা নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থার। যার মধ্যে প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি এবং নবম-দশমের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার চাকরিপ্রার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড রয়েছে বলে সূত্রের খবর। তৃণমূল বিধায়কের কাছ থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার হয়েছে। সিবিআইয়ের অনুমান এই ডায়েরিতে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত লেনদেনের হিসাব পাওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি শনিবার সকাল থেকে জীবনকৃষ্ণের দুই আত্মীয়ের বাড়িতেও নতুন করে তল্লাশি চালাতে শুরু করেছেন সিবিআই আধিকারিকেরা।

সিবিআইয়ের দাবি, শনিবার সকাল থেকে দিকে দিকে এই তল্লাশি অভিযানে নানা তথ্য তাদের হাতে উঠে এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত নথি এবং অপরাধমূলক তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। শনিবার যাঁদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement