Mamata Banerjee

দুর্যোগে কপ্টার, জরুরি অবতরণ, আহত মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে আর বেরোতে পারবেন কি?

চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীকে হাঁটুতে পরার জন্য নিক্যাপ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে নিয়ন্ত্রিত হাঁটাচলারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩ ২৩:৩৩
An image of Mamata Banerjee

এসএসকেএম থেকে বেরিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

খারাপ আবহাওয়ার দরুন জরুরি অবতরণ করতে হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেলিকপ্টারকে। মঙ্গলবার দুপুরের ওই ঘটনার জেরে পা এবং কোমরে চোট পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা ফিরে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একাধিক পরীক্ষানিরীক্ষার পর সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মমতার বাঁ পা এবং বাঁ দিকের হিপ জয়েন্টের লিগামেন্টে চোট রয়েছে। তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি হাসপাতালে থাকতে চাননি। বরং চিকিৎসকদের পরামর্শ বাড়িতে থেকেই মেনে চলার কথা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে এ কথা জানিয়েছেন এসএসকেএমের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির মালবাজারে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার শেষে কলকাতা ফেরার কথা ছিল মমতার। বাগডোগরা থেকে বিমান ধরবেন বলে হেলিকপ্টারে চড়েছিলেন ক্রান্তি থেকে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একই কপ্টারে ছিলেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষী স্বরূপ গোস্বামী এবং সাংবাদিক বিশ্ব মজুমদার। পূর্বাভাস ছিল, আবহাওয়া সামান্য খারাপ থাকতে পারে। তবে পাইলট ভেবেছিলেন, ১৩ মিনিটের উড়ানপথ পেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে নিরাপদে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌছে দেবেন। কিন্তু নাহ্! উড়ানের কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিন দিক কালো করে আসে। নীচে বৈকুণ্ঠপুরের ঘন জঙ্গল। চাইলেও পাইলট নামবেন কোথায়! জঙ্গলে তো আর নামা যাবে না! অগত্যা আকাশের যে দিক পরিষ্কার ছিল, অর্থাৎ, গতিপথ দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল, সে দিকেই কপ্টারের মুখ ঘোরান পাইলট। কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না, কোথায় অবতরণ করবেন। বাগডোগরার দিকে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। তিনি উড়তে থাকেন শিলিগুড়ির দিকে। শেষ পর্যন্ত শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে শালুগাড়ার কাছে সেবক এয়ারবেসে জরুরি অবতরণ করে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার। নিরাপদে অবতরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীরা। অন্য রকম কিছু হলেই বড়সড় বিপদ হতে পারত। সেবক এয়ারবেস থেকে গাড়িতে বাগডোগরা, সেখান থেকে বিমানে হয়ে কলকাতা পৌঁছন মমতা। প্রশাসন সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রীর পা এবং কোমরে চোট লেগেছে। বিমানবন্দর থেকেই মুখ্যমন্ত্রীকে সোজা এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এমআরআই করে জানা যায়, তাঁর বাঁ হাঁটুর এবং বাঁ দিকের হিপ জয়েন্টের লিগামেন্টে চোট রয়েছে। তার পরেই প্রশ্ন ওঠে, পঞ্চায়েত ভোটে আর প্রচারে বেরোতে পারবেন তো মুখ্যমন্ত্রী?

Advertisement

এসএসকেএমের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি থাকতে চাননি। জানিয়েছেন, বাড়িতে থেকেই চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো চিকিৎসা করাবেন। চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীকে হাঁটুতে পরার জন্য ‘নিক্যাপ’ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে নিয়ন্ত্রিত হাঁটাচলার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এই অবস্থায় তিনি কী ভাবে প্রচার করবেন? জুলাই মাসের শুরুতেই বীরভূমে প্রচারে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে বীরভূম জেলা সংগঠনের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন মমতা। এ বার ভোটের প্রচারে তিনি সময় দেবেন বলেও তৃণমূল সূত্রে খবর ছিল। কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনার পর তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিরোধীরা এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার প্রশ্ন তোলেন, ‘‘ভোট এলেই কেন বার বার পায়ে আঘাত পান মুখ্যমন্ত্রী? বার বার পায়ে চোট মানেই শুভ লক্ষণ নয়।’’ একই সুর শোনা গিয়েছে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের গলাতেও। মুখ্যমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য কামনা করেও কটাক্ষ করে তিনি তুলে এনেছেন ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের প্রচারে গিয়ে মমতার চোট পাওয়ার প্রসঙ্গ। সেলিমের খোঁচা, ‘‘নির্বাচনের আগে এ রকম দুর্ঘটনা হলে আমার আশঙ্কা হয়, আবার তিনি মাথায় ফেট্টি বেঁধে হুইলচেয়ারে বসে সিপিএমকে গাল দিয়ে প্রচার করবেন।’’ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সেলিম। আর এই পরিস্থিতিতে মমতার সক্রিয় থাকা জরুরি বলেও জানিয়েছেন।

তৃণমূল যদিও গোটা বিষয়টিতে ‘সৌজন্য’র অভাব দেখছে। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানান, রাজনৈতিক নেতা হতে গেলে কিছু শালীনতা ও সৌজন্য শিখতে হয়। কারও অসুখ বা আঘাত নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য না করার শিক্ষা তাঁরা পাননি বলেও জানান মন্ত্রী। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনও সরব হয়েছেন এ নিয়ে। তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার কী ঘটনা ঘটেছে, তা সারা বাংলার মানুষ দেখেছে। আমাদের সঙ্গে বাংলার মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছেন। দুর্ঘটনা তো আর বলে আসে না। মুখ্যমন্ত্রী প্রচারে নামুন বা না-নামুন, তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে করে যাওয়া কাজের নিরিখে মানুষ তাঁকে ভোট দেন। এ ক্ষেত্রে যদি তিনি কোনও কারণে প্রচারে না-নামতে পারেন, তাঁর কাজের মূল্যায়ন করেই মানুষ তাঁকে ভোটে দেবে বলে মনে করি।’’

প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী ৮ জুলাই পঞ্চায়েত ভোটের আগে আদৌ প্রচারে নামতে পারবেন? অতীত যদিও অন্য কথাই বলে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন ১০ মার্চ নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া বাজারে পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন মমতা। এর পরে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে সেই পা প্লাস্টারে বাঁধা অবস্থায় বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে নেমে পড়েন তিনি। হুইলচেয়ারে বসেই একের পর এক পদযাত্রায় অংশ নেন। সভাও করেন। এ বারও কি সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে? না কি চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করাবেন মুখ্যমন্ত্রী! চিকিৎসকদের সূত্রে যা খবর, তাতে তাঁকে আপাতত সাবধানে চলতে হবে। নিয়ন্ত্রিত হাঁটাচলা করতে হবে। এ ভাবে প্রচারে যেতে পারবেন কি না, বলবে সময়।

কপ্টারের জরুরি অবতরণ

মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির মালবাজারে সভা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। দুপুর ১টা নাগাদ সেই সভা শেষ হয়। তার পর ক্রান্তি থেকে হেলিকপ্টারে মুখ্যমন্ত্রী বাগডোগরার অভিমুখে রওনা দেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একই কপ্টারে ছিলেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষী স্বরূপ গোস্বামী এবং সাংবাদিক বিশ্ব মজুমদার। ঠিক ছিল, হেলিকপ্টারে বাগডোগরা পৌঁছে সেখান থেকে বিমানে কলকাতা ফিরবেন সকলে। কিন্তু মাঝ আকাশে বিপত্তি। ক্রান্তি থেকে বাগডোগরা কপ্টারে যেতে সময় লাগার কথা ছিল ১৩ মিনিট। পূর্বাভাস ছিল, উড়ানপথে আবহাওয়া সামান্য খারাপ থাকতে পারে। যদিও ওড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই প্রবল দুর্যোগের মুখে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার। কিছু ক্ষণের মধ্যেই তিন দিকের আকাশ কালো করে আসে। সঙ্গে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। পাইলট বোঝেন, আর এগোনো ঠিক হবে না। নীচে বৈকুণ্ঠপুরের ঘন জঙ্গল। ফলে অবতরণ করার উপায়ও ছিল না। আকাশের যে দিকে পরিষ্কার ছিল, অর্থাৎ, গতিপথ দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল, সে দিকেই কপ্টারের মুখ ঘোরান পাইলট। কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না, কোথায় অবতরণ করবেন। বাগডোগরার দিকে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। অগত্যা তিনি উড়তে থাকেন শিলিগুড়ির দিকে। শেষ পর্যন্ত শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে শালুগাড়ার কাছে সেবক এয়ারবেসে জরুরি অবতরণ করে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার। বস্তুত, ওখানে যে কোনও এয়ারবেস রয়েছে, তা কারওরই সে ভাবে জানা ছিল না। অনেকটা কপালজোরেই এয়ারবেসটি চোখে পড়ে পাইলটের। সেখানে জরুরি অবতরণ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী-সহ কপ্টারের অন্য যাত্রীদের ওই এয়ারবেসের কর্তারা নিরাপদে কাছের সেনা কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানেই তাঁদের রাখা হয়। প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর জন্য শালুগাড়ার সেনা কার্যালয়ে পুলিশি প্রহরায় গাড়ি পাঠানো হয়। সেই গাড়িতেই মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীরা বাগডোগরা বিমানবন্দরে ফেরেন। সেখান থেকে বিমানে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা।

মুখ্যমন্ত্রীর চোট

কপ্টার বিভ্রাটে পা এবং কোমরে চোট পান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার কিছু ক্ষণ আগে কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন তিনি। বিমানবন্দরে তাঁর জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নিজের গাড়িতেই হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন। হাসপাতালে পৌঁছলে হুইলচেয়ার এনে দেন সেখানকার কর্মীরা। মুখ্যমন্ত্রী যদিও হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে সম্মত হননি। গাড়ি থেকে নামার সময় শরীরের ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলতে দেখা যায় তাঁকে। তখনই তাঁকে ধরে নেন হাসপাতালের এক মহিলা কর্মী। মমতাকে ধরে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢোকেন। স্পষ্ট বোঝা যায়, তাঁর হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে। মমতার চোট পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখেন এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা। তাঁর এমআরআই পরীক্ষাও করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর জন্য তৈরি রাখা হয়েছিল উডবার্ন ওয়ার্ডের সাড়ে ১২ নম্বর কেবিন। সেখানেই পরীক্ষানিরীক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই সেখানে পৌঁছন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, স্বরাষ্ট্রসচিব বিপি গোপালিকা, স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম এবং বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।

হাসপাতালে থাকার পরামর্শ

মুখ্যমন্ত্রীর শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষার পর এসএসকেএম হাসপাতালের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঁ হাঁটুর লিগামেন্টে চোট লেগেছে। চোট রয়েছে তাঁর বাঁ দিকের হিপ জয়েন্টের লিগামেন্টেও। তিনি জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে হাসপাতালে থেকে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তবে মমতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, তিনি চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনেই চলবেন। তবে হাসপাতালে থেকে নয়, মুখ্যমন্ত্রী সবটা বাড়িতে থেকেই করবেন। মঙ্গলবার এসএসকেএমে মুখ্যমন্ত্রীর এমআরআই পরীক্ষা করা হয়। সেই পরীক্ষাতেই মমতার চোটের কথা জানা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে হাঁটুতে পরার জন্য ‘নিক্যাপ’ দেওয়া হয়। চিকিৎসকদের সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, মমতার থেরাপি করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত হাঁটাচলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসার সময় উপস্থিত ছিলেন ফিজিক্যাল মেডিসিনের বিভাগীর প্রধান রাজেশ প্রামাণিক, রেডিওলজির বিভাগীয় প্রধান অর্চনা সিংহ এবং নিউরো মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান অলোক রক্ষিত।

কী বলছেন বিরোধীরা

অনেকেই মনে করছেন, মঙ্গলবার একটু এ দিক-ও দিক হলেই বড়সড় কিছু ঘটে যেতে পারত। আরও বড় দুর্ঘটনার মুখে পড়তে পারত মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার। ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রীর সুস্থতা কামনা করেও বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। পাল্টা দিয়েছে শাসকদলও। মঙ্গলবার আসানসোলে সাংগঠনিক বৈঠক করতে গিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহাম্মদ সেলিম। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য কামনা করে বলেন, ‘‘তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উনি রাজনীতিতে ফিরুন। প্রশাসনের দায়িত্ব নিন। কারণ এখন রাজ্য প্রশাসনের খুবই খারাপ অবস্থা।’’ তাঁর আরও কটাক্ষ, ‘‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার খুবই খারাপ অবস্থা। উনি যে গুন্ডাদের কন্ট্রোল করতেন, সেই গুন্ডারা আনকন্ট্রোল হয়ে যাচ্ছে। পুলিশ কন্ট্রোল করতে পারছে না।’’ এখানেই থামেননি সেলিম। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর দুর্ঘটনার মুখে পড়ার প্রসঙ্গও তোলেন। সে সময় হুইলচেয়ারে চেপে প্রচার করেছিলেন মমতা। সেই প্রসঙ্গ তুলে সেলিম বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে এ রকম দুর্ঘটনা হলে আমার আশঙ্কা হয়, আবার উনি মাথায় ফেট্টি বেঁধে হুইলচেয়ারে বসে সিপিএমকে গাল দিয়ে প্রচার করবেন!’’ মুখ্যমন্ত্রীর সুস্থতা কামনা করে কটাক্ষ করেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘ভোট এলেই কেন বার বার পায়ে আঘাত পান মুখ্যমন্ত্রী? বার বার পায়ে চোট মানেই শুভ লক্ষণ নয়।’’ মধ্যপ্রদেশের ভোপালে গিয়ে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সুকান্ত সেই প্রসঙ্গও তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর রক্তচাপ বৃদ্ধির কথা ছিল।’’ তৃণমূল আবার বিরোধীদের এই মন্তব্যকে শালীনতার অভাব বলেই মনে করছে। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘সুকান্ত মজুমদার এবং মহম্মদ সেলিম প্রমাণ করলেন, তাঁরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম! মুক্তোর মালা সবার গলায় মানায় না। রাজনৈতিক নেতা হতে গেলে কিছু শালীনতা ও সৌজন্য শিখতে হয়। কারও অসুখ বা আঘাত নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য না করার শিক্ষা তাঁরা পাননি। দুর্ভাগ্যজনক যে, তাঁরা এক-একটি দলের রাজ্য প্রধান।’’

খোঁজ নিলেন রাজ্যপাল

মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার বিপর্যয়ের পর তাঁর খোঁজ নিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজভবনের তরফে টুইটারে সেই কথা জানানো হয়েছে। টুইটে লেখা হয়েছে, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টারের জরুরি অবতরণের পর তিনি সুস্থ রয়েছেন জেনে স্বস্তি পেয়েছেন রাজ্যপাল। তাঁর সুরক্ষা এবং সুস্থতার খোঁজ নিয়েছেন রাজ্যপাল।

আরও পড়ুন
Advertisement