চারপতি অমৃতা সিংহ এবং সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে গতি আনতে চায় কলকাতা হাই কোর্ট। আগেই এই তদন্ত ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে বলেছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিংহ। মঙ্গলবার ইডি জানিয়েছে, অনেক তথ্য হাতে এসে যাওয়ায় আরও সময় দরকার। এর পরেই ইডির জয়েন্ট ডিরেক্টরকে বুধবার আদালতে আসতে বলেছেন বিচারপতি সিংহ। একই সঙ্গে এই মামলায় অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ নিয়েও ইডিকে তৎপর হতে বলল আদালত। দ্রুত এ নিয়ে চিকিৎসকের মতামতও জানতে চেয়েছেন বিচারপতি। তিনি ইডিকে জানিয়েছেন কী ভাবে গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে হয় তা আদালতে এসে জানাতে হবে কোনও চিকিৎসককে। বিস্তারিত ভাবে বললে জোকার ইএসআই হাসপাতালকে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের দল গড়তে হবে এবং সেই দলের প্রধানকে বুধবার বেলা সাড়ে ৩টেয় এসে আদালতকে নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতি জানাতে হবে।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ এখন এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। যাঁকে শিক্ষক নিয়োগ মামলায় ধৃত তাপস মণ্ডল ‘কালীঘাটের কাকু’ বলে উল্লেখ করেন। অনেক আগেই এসএসকেএম হাসপাতালে ‘কাকু’র চিকিৎসা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইডি। আদালতে ইডি জানিয়েছে, ওই হাসপাতালের উপর তাদের কোনও আস্থা বা বিশ্বাস নেই। এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার পীযূষকুমার রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে অভিযোগও তুলেছে ইডি। ইডির দাবি, পীযূষ মেডিক্যাল রিপোর্টে কারচুপি করছেন। ইডির বক্তব্য শুনে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের কাছে ‘কাকু’র চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত রিপোর্ট আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে চেয়ে পাঠিয়েছে হাই কোর্ট।
এর মধ্যেই মঙ্গলবার একটি মামলা করেছে বিজেপি। গুরুতর অসুস্থ না হয়েও কেন সুজয়কৃষ্ণ এসএসকেএম হাসপাতালের শয্যা দখল করে রয়েছেন তা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। মঙ্গলবার এই বিষয়ে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। প্রধান বিচারপতি জানান, বৃহস্পতিবার মামলাটির শুনানি হবে। সব পক্ষকে নোটিস দিতেও বলে হাই কোর্ট। এরই মধ্যে নতুন নির্দেশ বিচারপতি সিংহের।
বরাবরই তদন্তকারী সংস্থা জানিয়ে এসেছে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের জন্য কাকুর কণ্ঠস্বর পরীক্ষা জরুরি। একাধিক বার ইডি এসএসকেএম হাসপাতালে কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতেও যায়। কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। গত জুলাই মাসে কণ্ঠস্বরের নমুনার পরীক্ষার উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেন সুজয়কৃষ্ণ। কিন্তু সে আবেদন হাই কোর্টে নাকচ হয়ে যায়। তীর্থঙ্কর ঘোষের একক বেঞ্চ জানিয়ে দেয় কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে ইডি।
এর পরেও এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, মানসিক চাপের কারণেই গলার স্বরের নমুনা দিতে পারছেন না সুজয়কৃষ্ণ। এখন সত্যিই কণ্ঠস্বরের নমুনা দেওয়া কঠিন কি না তা জানতে চিকিৎসকদের মতামত জানতে চায় আদালত।