Abhishek Banerjee

সাংসদ অভিষেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই? বাড়ির ঠিকানা জানেন না? ইডিকে ভর্ৎসনা হাই কোর্টের

সোমবার বিচারপতি জিজ্ঞেস করেন, সাংসদের মাত্র তিনটি বিমা ছাড়া কিছু নেই কী ভাবে? ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিশদ তথ্য নেই কেন? এই নিয়ে ইডিকে তীব্র ভর্ৎসনা হাই কোর্টের।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৪০
image of justice amrita sinha

ইডির দেওয়া অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে)-এর সম্পত্তির বিবরণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ বিচারপতি অমৃতা সিংহ (ডান দিকে)-এর। — ফাইল চিত্র।

ইডিকে তীব্র ভর্ৎসনা করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ। তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির যে বিবরণ ইডি আদালতকে জানিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। ইডির আইনজীবীর কাছে সোমবার বিচারপতি সিংহ জানতে চান, সাংসদের মাত্র তিনটি বিমা ছাড়া কিছু নেই! কী ভাবে? ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খুঁটিনাটি (ডিটেলস) নেই কেন? বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়ে গত আট মাস ধরে ইডি যে তদন্ত করেছে, তার নিট ফল শূন্য। এ বিষয়ে ইডিকে বিশদে তথ্য জমা করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সিংহ। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর।

Advertisement

ইডির আট মাসের তদন্তের নিট ফল ‘শূন্য’ জানিয়ে বেশ কিছু তথ্য বিশদে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সিংহ। লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার ছ’জন ডিরেক্টরের নাম, তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ, সংস্থার লেনদেন, তার মূল্য, এই সংস্থায় কারা ক্লায়েন্ট, তাঁদের নাম, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, সংস্থার রোজের কাজ কে দেখতেন, সিইও অভিষেকের সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ, তাঁর মা লতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ, সংস্থার সব কর্মীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কারা, কবে সংস্থায় যোগ দিয়েছেন, কেন সংস্থার ঠিকানা পরিবর্তন এবং কার কাছে তদন্ত নিয়ে ইডি সাহায্য চায়, তা জানাতে হবে হাই কোর্টে। বিচারপতি এ-ও জানিয়েছেন, আদালত ফল আশা করে।

লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার সিইও (চিফ এগ্‌জিকিউটিভ অফিসার) এবং ডিরেক্টরদের সম্পত্তির বিবরণ ইডিকে জমা দিতে বলেছিল হাই কোর্ট। সেই মতো ইডি আদালতে তা জমা দেয়। ওই বিবরণ নিয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি সিংহ। বিবরণে অভিষেকের কোনও ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টের কথা জানায়নি ইডি। বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘এটা কি হতে পারে? সাংসদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই? তা হলে তিনি বেতন নেন কী ভাবে?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অভিষেকের বাড়ির ঠিকানা জানে না ইডি? ১৮৮এ হরিশ মুখার্জি রোডে কার নামে বাড়ি রয়েছে?’’ এখানেই থামেননি বিচারপতি। সোমবার তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘অভিষেক লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার যে সিইও, তাঁর কী সম্পত্তি দেখানো হয়েছে? আপনারা যে তথ্য দিয়েছেন, তা কি বিশ্বাসযোগ্য?’’

ইডি সংস্থার সম্পত্তির যে বিবরণ দিয়েছে, তাতে তার মালিকানাধীন জমি দেখানো হয়েছে। ওই জমি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘আপনারা সংস্থার জমি দেখাচ্ছেন? তার বিশদ তথ্য কোথায়? কোথায় রয়েছে জমি? জমির কত দাম, কিছু জানাননি? আপনাদের এই তদন্তের হাল? আপনারা যে নথি দিচ্ছেন, তা সত্য কি মিথ্যা যাচাই করেননি। কোন এলাকায় জমি তা-ও যাচাই করেননি।’’

ইডির তদন্তে জানা গিয়েছে, লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার একটি কারখানা ছিল। বিচারপতি অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, সেই কারখানার বিষয়েও বিশদে কিছু জানায়নি ইডি। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা বলছেন, সংস্থার কারখানা ছিল? তা কবে, কোথায় তৈরি হয়েছে, জানাননি। সংস্থার সম্পত্তির বিবরণ দেননি। আপনারা জানিয়েছেন, সংস্থার এসি রয়েছে, গাড়ি রয়েছে, লরি রয়েছে। কিন্তু কার নামে সেই গাড়ি, লরি, কিছুই জানাননি।’’ এর পরেই বিচারপতি কড়া সুরে বলেন, ‘‘আপনারা কি সঠিক ভাবে তদন্ত করবেন না? সংস্থার ৬ জন ডিরেক্টর রয়েছেন। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ছাড়া কারও বিরুদ্ধে কি কোনও তদন্ত করেছেন? সুজয়ের গলার নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তা কি তদন্ত করে দেখেছেন?’’

ইডির বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর মিথিলেশকুমার মিশ্রের বিরুদ্ধেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘আপনি কি তদন্ত থেকে অব্যাহতি চান? এটা কি পোস্ট অফিস? কেউ কিছু দিল, এসে প্রকাশ করলেন! কার কত সম্পত্তি কিছু দেখলেন না?’’ বিচারপতি জানিয়েছেন, ওই সংস্থা প্রথমে কেন তৈরি করা হয়েছিল, তা জানায়নি ইডি। বড় অঙ্কের লেনদেন হয়েছে বলেছে ইডি। কিন্তু সেই লেনদেন নিয়েও কিছু জানায়নি। ইডির তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিচারপতি জানিয়েছেন, ‘টানেলের শেষে’ কবে পৌঁছনো যাবে? তাদের কি কারও সাহায্যের প্রয়োজন? ইডির তরফে জানানো হয়েছে, তাদের লোক কম। ‘ফিনান্সিয়াল ইন্টালিজেন্স ইউনিট’-এর সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে। তবে ইডির আইনজীবী এখনই এই নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি বিচারপতিকে অনুরোধ করে বলেন, ‘‘একটু সময় দিন। ইডির ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছি, কার সাহায্য নেওয়া যায়।’’

ইডির তদন্তে উঠে এসেছে, লি‌প‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার একটি কারখানা রয়েছে। কারখানায় পানীয় জলের বোতল তৈরি হয়। প্রথমে সংস্থাটি এক ঠিকানা ছিল। পরে তা পরিবর্তিত হয়। এই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি সিংহ। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন কারখানা তৈরি করা হয়েছিল, কেন তার ঠিকানাবদল হল, এ সব কিছুই জানায়নি ইডি। এই তদন্তে ছবির জগতের এক জনের নামও জড়িয়েছে। কেন এক জন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘ছবির জগতের এক জনেরই নাম? বাকিদের তদন্তের আওতায় আনবেন না? আদালতের পক্ষে সম্ভব নয় অভিযুক্তদের পিছনে দৌড়নো। এক তদন্তকারী সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা সঠিক তথ্য দিতে না পারলে আদালত কী করবে?’’

সিইও অভিষেক-সহ লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার ডিরেক্টরদের সম্পত্তির বিবরণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি সিংহ। এই সংক্রান্ত বিষয়গুলি স্পষ্ট করার জন্য সোমবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি এবং সিবিআইয়ের আধিকারিকদের তিনি আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিচারপতি সিংহের নির্দেশে লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার সিইও এবং অন্য ডিরেক্টরদের সম্পত্তির বিস্তারিত তথ্য আদালতে জমা দিয়েছিল ইডি। সেই সঙ্গে নিয়োগ মামলায় জড়িত এক অভিনেতার নাম এবং সম্পত্তির বিবরণও আদালতে জমা পড়েছিল। অভিষেকের সংস্থার পাশাপাশি, এক টলিউড অভিনেতার সম্পত্তি নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি সিংহ। তাঁর মন্তব্য, সম্পত্তির যে বিবরণ জমা পড়েছে, তা নিয়ে কিছু সন্দেহ রয়েছে। কিছু বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন। দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদেরই আদালতে হাজির থাকতে বলেছিলেন তিনি। তাঁদের উপস্থিতিতে সোমবার বিকেলে ইডিকে ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি সিংহ। তদন্ত নিয়ে আরও বিশদ তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন
Advertisement