কড়া নির্দেশ কোর্টের। — ফাইল চিত্র।
আগামী ৩ অক্টোবর মঙ্গলবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করেছে ইডি। সেই দিন দলের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিতে দিল্লিতে থাকার কথা অভিষেকের। তিনি যে দিল্লিই যাবেন তা স্বয়ং অভিষেকও জানিয়ে দিয়েছেন। এরই মধ্যে অভিষেকের নাম না-নিয়েও ইডিকে ৩ অক্টোবরের তদন্ত বা অনুসন্ধান নিয়ে কড়া নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ। ইডিকে বিচারপতির নির্দেশ, ৩ অক্টোবরের তদন্ত বা অনুসন্ধান যেন কোনও ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তার জন্য যে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে। এই নির্দেশে প্রকারান্তরে মঙ্গলবার অভিষেক যাতে হাজিরা দেন তা নিশ্চিত করতেই বললেন ইডিকে। ওই তদন্তে যুক্ত ইডির সহকারী ডিরেক্টর মিথিলেশকুমার মিশ্রকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি সিংহ। তিনি ইডিকে জানিয়ে দেন, আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকায় মিথিলেশকুমারকে সরিয়ে ৩ অক্টোবরের তদন্তে উপযুক্ত অফিসারকে পদক্ষেপ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারই জানা যায়, লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থা সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিষেককে ৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার সময়ে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হতে বলেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এ দিকে আগামী ২ এবং ৩ অক্টোবর বাংলার বকেয়া পাওনা আদায়ের দাবিতে দিল্লিতে কর্মসূচির কথা আগেই ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। গোটা কর্মসূচি চলাকালীন অভিষেকের দিল্লিতে থাকার কথা। সেই সময়েই ইডির তলব ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই শুক্রবার অভিষেক জানিয়ে দেন, ইডির ডাকে নয়, তিনি দলের কর্মসূচিতে যোগ দিতে দিল্লিতেই যাবেন। শুক্রবার এ নিয়ে সমাজমাধ্যমে একটি বিস্তারিত বিবৃতি দিয়েছেন অভিষেক। সেই পোস্টের শেষাংশে ইংরেজিতে লেখেন, ‘‘স্টপ মি ইফ ইউ ক্যান।’’ অর্থাৎ, পারলে আমায় আটকান।
নিজের এক্স হ্যান্ডলে অভিষেক আরও লেখেন, ‘‘বাংলাকে বঞ্চনা এবং বাংলার ন্যায্য পাওনার বিরুদ্ধে লড়াই সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে অব্যাহত থাকবে। বাংলার মানুষের মৌলিক অধিকারের জন্য আমার এই লড়াই পৃথিবীর কোনও শক্তিই দমাতে পারবে না।’’ এর পর অভিষেক লেখেন, ‘‘আমি আগামী ২ এবং ৩ অক্টোবর দিল্লিতে থাকব বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার জন্য।’’ শুক্রবার আদালতে নাম না-করে এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। এর পরে বিচারপতি সিংহ বলেন, ‘‘৩ অক্টোবরের তদন্ত বা অনুসন্ধান যেন কোনও ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তদন্তের স্বার্থে যে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারবে ইডি।’’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর এই মামলাতেই ইডিকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি সিংহ। তৃণমূল সাংসদ অভিষেকের সম্পত্তির যে বিবরণ ইডি আদালতকে জানিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। ইডির আইনজীবীর কাছে গত সোমবার বিচারপতি সিংহ জানতে চান, সাংসদের মাত্র তিনটি বিমা ছাড়া কিছু নেই! কী ভাবে? ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত খুঁটিনাটি নেই কেন? বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়ে গত আট মাস ধরে ইডি যে তদন্ত করেছে, তার নিট ফল শূন্য। এ বিষয়ে ইডিকে বিশদে তথ্য জমা করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সিংহ। অভিষেকর মা লতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি সে প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি। এর পরেই ইডি নতুন করে সমন পাঠায় অভিষেককে। তাঁর মা এবং বাবা অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়কেও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।
আগেই লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার সিইও (চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার) এবং ডিরেক্টরদের সম্পত্তির বিবরণ ইডিকে জমা দিতে বলেছিল হাই কোর্ট। সেই মতো ইডি আদালতে তা জমা দেয়। ওই বিবরণ নিয়েই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি সিংহ। বিবরণে অভিষেকের কোনও ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টের কথা জানায়নি ইডি। বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘এটা কি হতে পারে? সাংসদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই? তা হলে তিনি বেতন নেন কী ভাবে?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অভিষেকের বাড়ির ঠিকানা জানে না ইডি? ১৮৮এ হরিশ মুখার্জি রোডে কার নামে বাড়ি রয়েছে?’’ এখানেই থামেননি বিচারপতি। সোমবার তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘অভিষেক লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থার সিইও, তাঁর কী সম্পত্তি দেখানো হয়েছে? আপনারা যে তথ্য দিয়েছেন, তা কি বিশ্বাসযোগ্য?’’
এই প্রসঙ্গে ইডির বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর মিথিলেশকুমারের বিরুদ্ধেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি সিংহ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আপনি কি তদন্ত থেকে অব্যাহতি চান? এটা কি পোস্ট অফিস? কেউ কিছু দিল, এসে প্রকাশ করলেন! কার কত সম্পত্তি কিছু দেখলেন না?’’ শুক্রবার সেই মিথিলেশকুমারকেই সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি সিংহ।