National Anthem Contempt

‘ছেলেমানুষি মামলা’, হাই কোর্টের ভর্ৎসনা রাজ্যকে, জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে স্বস্তি বিজেপি বিধায়কদের

জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা মামলায় বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে এখনই পদক্ষেপ করা যাবে না, নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্টের। সেই সঙ্গে রাজ্যকে ভর্ৎসনাও করেছেন বিচারপতি সেনগুপ্ত।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:০২
কলকাতা হাই কোর্ট।

কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা মামলায় বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে এখনই কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না। সোমবার মামলার শুনানিতে এমনটাই জানাল কলকাতা হাই কোর্ট। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১১ জন বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

Advertisement

জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার অভিযোগে লালবাজার থেকে বিজেপি বিধায়কদের উদ্দেশে যে সমন পাঠানো হয়েছিল, তার উপরেও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন পুলিশকে কেস ডায়েরি নিয়ে আদালতে হাজির থাকতে হবে। উল্লেখ্য, সোমবার মামলার কেস ডায়েরি আদালতে দেখাতে পারেনি পুলিশ।

বিধানসভায় তৃণমূলের ধর্না কর্মসূচি চলাকালীন গত বুধবার বিজেপি বিধায়কেরাও বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তৃণমূল শিবির থেকে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়। সেখানেই বিতর্কের সূত্রপাত। অভিযোগ, বিজেপি বিধায়কেরা জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন তৃণমূল বিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলেন। এতে জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। স্পিকারের কাছে প্রথমে সেই অভিযোগ জমা পড়ে। পরে হেয়ার স্ট্রিট থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়। লালবাজার থেকে এই মামলায় ডেকে পাঠানো হয় বিজেপি বিধায়কদের।

মঙ্গলবার লালবাজারে তাঁদের হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল। তার আগে সোমবার এফআইআরকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে যায় বিজেপি। বিচারপতি সেনগুপ্তের পর্যবেক্ষণ, জাতীয় সঙ্গীত আচমকা শুরু করা যায় না। সে ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মানা দরকার। তিনি আরও জানান, অম্বেডকর মূর্তির সামনে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে তৃণমূল বিধায়কেরা ধর্না কর্মসূচি পালন করেন। বিধানসভার গেটের সামনে থেকে বিরোধীরা পাল্টা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। অর্থাৎ, দু’টি ঘটনা প্রায় একই সঙ্গে শুরু হয়। জাতীয় সঙ্গীত শুরু হতেই স্লোগান দেওয়া শুরু হয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। ফলে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠছে, জাতীয় সঙ্গীতের সময় বাধা বা বিরক্ত করা কী ভাবে হয়েছে?

পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ কী ভাবছে? কয়েক লাখ টাকা খরচ করে মামলা হচ্ছে। খুনের অভিযোগে পুলিশ এফআইআর নেয় না, এমন উদাহরণ আমার কোর্টে রয়েছে। ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত সঠিক ভাবে করে না পুলিশ। আর জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা নিয়ে দ্রুত মামলা দায়ের হয়ে গেল! এই ধরনের ছেলেমানুষি মামলার জন্য কত মামলা আটকে রয়েছে। স্লোগান চলছিল দেখেও জাতীয় সঙ্গীত করার কী দরকার ছিল?’’

রাজ্যের আইনজীবী কিশোর দত্ত এবং বিজেপি বিধায়কদের তরফে আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন। যে পথে এগিয়েছে সওয়াল—

বিজেপির আইনজীবী: বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে জাতীয় সঙ্গীত অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। হেয়ার স্ট্রিট থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু আইন মেনে এই অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। বিজেপি বিধায়কেরা যা করেছেন, তা অপরাধযোগ্য নয়। সঠিক ভাবে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া উচিত। তা শুরু করার আগে আমাদের জানানো হয়নি। জাতীয় সঙ্গীতের শিষ্টাচার অবলম্বন করা হয়নি। তা ছাড়া, জাতীয় সঙ্গীতের সময় বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কাদের বাধা দেওয়া হয়েছিল, অভিযোগে স্পষ্ট করে তা বলা নেই।

বিচারপতি সেনগুপ্ত: জাতীয় সঙ্গীতের জন্য শিষ্টাচার মেনে চলা উচিত। হঠাৎ করে জাতীয় সঙ্গীত শুরু করা যায় না। এখানে হঠাৎ করে কেউ যদি জাতীয় সঙ্গীত শুরু করেন, তা হলে তো সব কাজ বন্ধ করে সবাইকে দাঁড়িয়ে পড়তে হবে! এমনটা করা যায় না কি? অবশ্যই জাতীয় সঙ্গীতের জন্য শিষ্টাচার মানা উচিত।

রাজ্যের আইনজীবী কিশোর: যে কেউ জাতীয় সঙ্গীত গাইতে পারেন। এটা মৌলিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

বিচারপতি: হ্যাঁ, কিন্তু কোন পরিবেশে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে। যখন খুশি জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া যায় না। নিয়মে স্পষ্ট বলা রয়েছে, জাতীয় সঙ্গীতের নির্দিষ্ট শিষ্টাচার থাকতে হবে।

কিশোর: বিধানসভায় রাজ্যের অনেক মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। এটি সরকারি অনুষ্ঠানেরই মতো। তাই সেখানে জাতীয় সঙ্গীত করা হয়েছে।

বিচারপতি: সব অনুষ্ঠানের সঙ্গে এটাকে গুলিয়ে ফেলবেন না। মন্ত্রী উপস্থিত রয়েছেন বলে জাতীয় সঙ্গীত শুরু হয়ে গেল? শহরের পাঁচতারা হোটেলে মন্ত্রী উপস্থিত রয়েছেন বলে কি সেখানেও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে?

কিশোর: তা নয়। কিন্তু জাতীয় সঙ্গীত চলছে জেনেও তাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বিচারপতি: তা হলে আপনাদের কথা মতো বলতে হবে, রাস্তায় মারামারি হচ্ছে। মাইকে ঘোষণা করা হল জাতীয় সঙ্গীত হবে। তা হলে কি মারামারি থেমে যাবে? না অবমাননা হবে?

কিশোর: এই ঘটনার তদন্ত চলুক। আসল ঘটনা কী হয়েছে তা তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে।

বিচারপতি: ঘটনাটি পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। তদন্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করছি না। পরের দিন পুলিশকে কেস ডায়েরি নিয়ে আসতে হবে। এই সময়ের মধ্যে ওই বিধায়কদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না পুলিশ।

আরও পড়ুন
Advertisement