এসএসসিকে নিয়োগ বন্ধের নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্টের। —ফাইল চিত্র।
উচ্চ প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। আপাতত দু’দিনের জন্য এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। মঙ্গলবার হাই কোর্টের নির্দেশ, কোনও চাকরিপ্রার্থীকে সুপারিশপত্র দিতে পারবে না এসএসসি।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। পরে ২০১৭ সালের জুন মাসে শুধু মাত্র কর্মশিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২০১৮ সালের মার্চে ইন্টারভিউ (পার্সোনালিটি টেস্ট) হয়। চলতি বছরের অক্টোবরে শারীরিক শিক্ষা এবং কর্মশিক্ষা বিষয়ে অতিরিক্ত পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে এসএসসি। তার পরেই একটি মামলা দায়ের হয় হাই কোর্টে। মামলাকারী তথা চাকরিপ্রার্থী সোমা রায়ের অভিযোগ, গত ৩ নভেম্বর কর্মশিক্ষা বিষয়ে যে ‘ওয়েটিং লিস্ট’ প্রকাশ করে এসএসসি, তাতে তাঁর নাম নেই। তিনি তফসিলি জাতিভুক্ত। পরীক্ষা এবং পার্সোনালিটি টেস্ট মিলিয়ে ৭২ নম্বর পেয়েছেন। কিন্তু ‘অ্যাকাডেমিক স্কোরে’ ২২-এর পরিবর্তে তাঁকে ১৮ নম্বর দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ সোমার।
হাই কোর্টে সোমার দাবি, তিনি লিখিত পরীক্ষায় ৫৪ পেয়েছেন। অ্যাকাডেমিক স্কোরে ২২ পাওয়ার পর তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৭৬ হওয়ার কথা। কিন্তু তাঁকে দেওয়া হয়েছে ৭২ নম্বর। পাশাপাশি পার্সোনালিটি টেস্টের নম্বরও যোগ করা হয়নি!
এ নিয়ে সোমার আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং ফিরদৌস শামিমের বক্তব্য, এসএসসি-র ওই তালিকায় এমন ৬০ জন চাকরিপ্রার্থী রয়েছেন, যাঁদের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর তাঁদের মক্কেলের থেকে কম। মঙ্গলবার শুনানিতে বিচারপতি বসু ওই ৬০ জনকে মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারপতি বসুর বক্তব্য, ‘‘প্রতিটি নাম ধরে ধরে দেখতে চাই, কী ভাবে এই নিয়োগ হল।’’
অন্য দিকে, কমিশনের আইনজীবী যুক্তি দেন, যে নামগুলো সামনে আনা হয়েছে, তাঁদের ‘বিশেষ যোগ্যতা’ রয়েছে। ওই তালিকায় অনেক ‘প্যারা টিচার’ (পার্শ্বশিক্ষক) রয়েছেন। তাঁদের একটা সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যদিও এই যুক্তি মানতে চাননি বিচারপতি। এসএসসি-র উদ্দেশে বিচারপতি বসু পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘কী বিশেষ যোগ্যতা রয়েছে ওই প্রার্থীদের? আপনি কি বলতে চাইছেন ভৌমিক পদবি তফসিলি জাতিভুক্ত? এ সব করে আপনারা হয়রানি করছেন চাকরিপ্রার্থীদের।’’
এর পরেই ৭৫০ শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। এসএসসি-র কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানির আগে রিপোর্ট চেয়েছেন তিনি।