Bus

বাসভাড়া কি বাড়বে? না কি হাই কোর্টের নির্দেশের পর সরকারের সঙ্গে সংঘাত বাড়বে বাসমালিকদের

বাসভাড়া নিয়ে মামলায় বুধবার কলকাতা হাই কোর্ট জানায়, সরকারের ঠিক করে দেওয়া ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া কোনও ভাবেই নেওয়া যাবে না। শেষ বার ২০১৮ সালে বাসভাড়ার তালিকা প্রকাশ করেছিল রাজ্য সরকার।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৩৩
Bus owners may engage in conflict with the Transport Department after the Calcutta High Court\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s order regarding bus fares

বাসের ভাড়া কত হবে? ছবি: সংগৃহীত।

বাসভাড়া নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের পর পরিবহণ দফতরের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে পারেন রাজ্যের বেসরকারি বাসমালিকেরা। বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, সরকারের ঠিক করে দেওয়া ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া কোনও ভাবেই নেওয়া যাবে না। শেষ বার ২০১৮ সালে বাসভাড়ার তালিকা প্রকাশ করেছিল রাজ্য সরকার। তার পর বাস এবং মিনিবাসের ভাড়ার আর কোনও তালিকা প্রকাশ করেনি পরিবহণ দফতর। তাই হাই কোর্টের নির্দেশে আপাতত সেই ভাড়াই নিতে হবে বাসমালিকদের। কলকাতা হাই কোর্টে আরও নির্দেশ, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি বেসরকারি বাস এবং মিনিবাসে ভাড়ার তালিকা ঝোলাতে হবে। এ ছাড়া, অভিযোগ জানানোর জন্য এলাকাভিত্তিক টোল ফ্রি ফোনের নম্বর প্রতিটি বাসের ভিতরে এবং বাইরে লিখে রাখতে হবে। এই নির্দেশের পর পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেছেন, “এখনও নির্দেশের কপি হাতে পাইনি। রায় পড়ে সরকার অবস্থান স্পষ্ট করবে।”

পরিবহণ ভবনের একাংশ মনে করছে, হাই কোর্টের এমন নির্দেশের পর দফতরের সঙ্গে বেসরকারি বাসমালিকদের সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ছে। কারণ, করোনা সংক্রমণ কমার পর বাস পরিষেবা শুরু হওয়া থেকে অনুদানের ভিত্তিতে ভাড়া নিচ্ছে বেসরকারি বাসগুলি। প্রথম তিন কিলোমিটারের জন্য বাসে উঠলেই দিতে হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা। আর তার পর দূরত্ব অনুযায়ী ১৫-১৮ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের পর এই অনুদান ভিত্তিক ভাড়া আর নেওয়া যাবে না বলেই মনে করছে বাসমালিকদের একাংশ। এ ক্ষেত্রে তাদের দাবি, বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে পরিবহণ দফতর মহামান্য উচ্চ আদালতকে ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়ে অবগত করান। যাতে বাস্তব পরিস্থিতি প্রসঙ্গে যেমন কলকাতা হাই কোর্ট অবগত হতে পারবে, তেমনই বাসভাড়া নিয়ে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে বাসমালিকদের সংঘাতের পরিস্থিতিও এড়ানো যাবে। কারণ, ২০১৮ সালের সরকারি নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী, বাসে উঠলে প্রথম তিন কিলোমিটারের জন্য সাত টাকা করে দিতে হত। পরে দূরত্ব অনুযায়ী সেই ভাড়া ১০ থেকে ১৫ টাকার মধ্যে নির্ধারিত হত। এমন পরিস্থিতিতে পরিবহণ দফতরকেই বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়ে ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টিকে নিষ্পত্তি করতে বলছেন বেসরকারি বাসের মালিকেরা।

Advertisement

সিটি সাবারবান বাস সার্ভিসের পক্ষে টিটু সাহা বলেন, “মহামান্য হাই কোর্টের রায়কে আমরা স্বাগত জানাই। তবে ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে। বুঝতে হবে, পরিবহণ পরিষেবা দিতে ২০১৮ সালে যে খরচ হত, তা ২০২৩ সালে অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালের সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিলে বেসরকারি পরিবহণ রাজ্য থেকে উঠে যাবে। তাই আমরা বলব বেসরকারি পরিবহণ এবং বেসরকারি পরিবহণের সঙ্গে যুক্তরা যাতে বেঁচে থাকতে পারেন সরকারকে অবশ্যই সে কথা ভাবতে হবে।” ২০১৮ সালে যখন শেষ বার বেসরকারি বাসের ভাড়া নির্ধারিত হয়েছিল সেই সময় রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ছিলেন বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই সময় তাঁর প্রস্তাব ছিল, বাসের জ্বালানির দাম ৯ টাকা করে বাড়লে ১ টাকা করে ভাড়া বৃদ্ধি করা হোক। কিন্তু সেই প্রস্তাবে সায় দেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার পর থেকে নতুন করে বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঝুলে রয়েছে।

কলকাতা হাই কোর্টের রায় প্রসঙ্গে মিনিবাস অপারেটরসের স্বপন ঘোষ বলেন, “হাই কোর্টের রায়কে আমাদের সকলকে সম্মান জানাতে হবে। কিন্তু পরিবহণ দফতর যেন তাদের দায়িত্ব ভাল ভাবে পালন করে। কলকাতা শহর এবং রাজ্য জুড়ে অটো আর ট্যাক্সির ক্ষেত্রে ভাড়ার উপর কোনও রকম নিয়ন্ত্রণ নেই পরিবহণ দফতরের। তাই আমরা বলব বেসরকারি বাসের ভাড়া নির্ধারণের দায়িত্ব আমাদের উপর ছেড়ে দেওয়া হোক। তা হলে আমরা বাস ইউনিয়নগুলি বসে যুক্তিসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করে মানুষকে পরিষেবা দিতে পারব।” জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর থেকেই রাজ্যের বেসরকারি বাস পরিষেবা কোমায় চলে গিয়েছে। এ বার যদি ২০১৮ সালের সরকারের নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নিতে হয়, তাহলে বেসরকারি পরিবহণ পরিষেবা আর কোনও দিনও কোমা থেকে বেরোবে না। এ বার পরিবহণ দফতর কী সিদ্ধান্ত নেয় তার উপরই নির্ভর করবে বেসরকারি বাস পরিষেবার ভবিষ্যৎ। কারণ মহামান্য হাই কোর্টের রায়কে সম্মান জানানো আমাদের সকলের কর্তব্য। কিন্তু, আদালতের কাছেও বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরা সরকারেরও অন্যতম কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে।” বাসভাড়া নিয়ে বেসরকারি বাস ইউনিয়নগুলির এমন মনোভাবের পর পরিবহণ দফতরের সঙ্গে তাদের সংঘাত অনিবার্য বলে মনে করছে পরিবহন প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ।

আরও পড়ুন
Advertisement