Buddhadeb Bhattacharjee Death

‘সুভাষবাবুকে শান্ত থাকতে বলো, বলেছিলেন বুদ্ধদা’

রাজনীতি ও সংগঠন নিয়ে বুদ্ধ-সুভাষ ‘লড়াই’ সিপিএমের ভিতরে ও বাইরের চর্চাও শিরোনামে ছিল বহু দিন। সেই তিক্ততা সরিয়ে রেখে ব্যক্তিগত সৌহার্দ্যের ছোঁয়া রেখেছেন সুভাষও।

Advertisement
রবিশঙ্কর দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৪ ০৭:১৯
সুভাষ চক্রবর্তী এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

সুভাষ চক্রবর্তী এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।

দুই নামে অলিখিত দুই শিবির তৈরি হয়ে গিয়েছিল তত দিনে। কেউ ‘বুদ্ধবাবুর টিম’, কেউ ‘সুভাষদার ‘লোক।

Advertisement

এই রকম এক সময়েই ভোট সেরে ক্ষমতায় বসে কর্মসংস্কৃতি নিয়ে সুর চড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছড়িয়ে দেওয়া সেই ‘ডু ইট নাও’ তখন মুখে মুখে। তা নিয়েই বিঁধে বসলেন সুভাষ চক্রবর্তী। বলে দিলেন, ‘জ্যোতি বসুর সরকারকে খাটো (আন্ডারমাইন) করার চেষ্টা’!

এই ঘটনা তাঁদের দু’জনের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ফারাক অনেকটা বড় হওয়ার পরেই। দল ও সরকারে নিজেদের ভূমিকা পালন করছেন ঠিকই তবে পরস্পরের মধ্যে সেই ফারাক ‘ফাটল’ হয়ে গিয়েছে। সম্পর্কের সেই তিক্ততা প্রকাশ্যে প্রতিষ্ঠাও পেয়েছে নানা ভাবে। তবু আলিমুদ্দিন স্ট্রিট ও মহাকরণের একই ব্যবস্থা এগিয়ে নিয়ে যেতে পায়ে পায়ে হেঁটেছেন সিপিএমে প্রমোদ দাশগুপ্তের দুই ‘শিষ্য’ বুদ্ধ আর সুভাষ।

সেই রকম এক টানাপড়েনের মধ্যেই অসুস্থ সতীর্থের খোঁজ করে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেবের ফোন এসেছিল সুভাষ-পত্নী রমলা চক্রবর্তীর কাছে। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক সেরে বুদ্ধদেব জানতে চেয়েছিলেন, ‘কী খবর সুভাষবাবুর?’ মৃত্যুর দিন কয়েক আগে গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে পরিবহণ মন্ত্রী সুভাষ তখন হাসপাতালে ভর্তি। সেখান থেকেই ওই বৈঠকে যোগ দিতে জামা-কাপড় পরে তৈরিও হয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকদের পরামর্শে বেরোতে পারেননি। সে কথা জানতেন বুদ্ধদেব। সেই ফোনেই রমলাকে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সুভাষবাবুকে বোলো, তিনি যা চেয়েছেন, মন্ত্রিসভায় সেই সিদ্ধান্তই হয়েছে।’ তার পরে পরামর্শের সুরেই বলেন, ‘ওঁকে শান্ত থাকতে বলো।’

রাজনীতি ও সংগঠন নিয়ে বুদ্ধ-সুভাষ ‘লড়াই’ সিপিএমের ভিতরে ও বাইরের চর্চাও শিরোনামে ছিল বহু দিন। সেই তিক্ততা সরিয়ে রেখে ব্যক্তিগত সৌহার্দ্যের ছোঁয়া রেখেছেন সুভাষও। রমলার কথায়, ‘‘সুভাষ তাঁকে বুদ্ধ বলে ডাকতেন। আর বুদ্ধদা বলতেন সুভাষবাবু। বুদ্ধদা বাইরে থেকে বরাবরই একটু আলাদা ছিলেন। খুব বেশি পারিবারিক যোগাযোগ বা যাতায়াত ছিল না আমাদের। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার দু’বছর আগে ছিলেন তিনি। আর ওঁর স্ত্রী মীরা তো কলেজে আমার সহপাঠী ছিল।’’

একই প্রজন্মের হলেও সুভাষ ও বুদ্ধদেবের কাজের ধরনে ফারাক ছিল। সেই ফারাকই সিপিএমের মতো শৃঙ্খলায় বাঁধা দলে দুই শিবিরের ধারণা কার্যত প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছিল। সুভাষ ছিলেন খোলা আকাশের নীচে খোলা মাঠে আর বুদ্ধদেব বেছে নেওয়া পরিসরে। এই ঘরানাই ছিল তাঁদের ফারাকের ভিত্তিরেখা। আবার সিপিএমের প্রতিষ্ঠার পরে দলের
মধ্যে জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রিত্বের বিতর্কে দুই মেরুর এই দুই নেতা ছিলেন একই দিকে।

ঘরে-বাইরে এ নিয়ে ঝড় সামলেছেন রমলাও। তবে আপাদমস্তক রাজনীতিক সুভাষ-পত্নী সে সবকেই লঘু করে দেখেন। তাঁর কথায়, ‘‘কমিউনিস্ট পার্টিতে গণতন্ত্র আছে বলেই সকলের মত দেওয়ার সুযোগ থাকে। তাই পার্থক্যও হয়। তবে বাইরে তা নিয়ে যে বিরোধের কথা প্রচার হয়েছে, তা ঠিক নয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সে সবের জন্য ব্যক্তিগত সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়েনি। মিছিল, মিটিংয়ে দেখা হতেই কাছে ডেকেছেন আমাকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement