West Bengal

ট্রেনে জোর করে ওঠা যাবে না, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে গোটা গোটা ট্রেন ভাড়া নিতে চায় বিজেপি

কলকাতায় বড় সমাবেশ মানেই বিনা টিকিটে ট্রেন ভরে কর্মীদের নিয়ে আসার রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এর ফলে অনেক সময়েই সংরক্ষিত কামরার যাত্রীরা সমস্যায় পড়েন। বিজেপির বক্তব্য, তারা সেই সংস্কৃতি বদলাতে চায়।

Advertisement
পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৮:১৮
কলকাতায় সমাবেশ মানেই বিনা টিকিটে ট্রেন ভরে কর্মীদের নিয়ে আসার রাজনৈতিক সংস্কৃতি।

কলকাতায় সমাবেশ মানেই বিনা টিকিটে ট্রেন ভরে কর্মীদের নিয়ে আসার রাজনৈতিক সংস্কৃতি। —ফাইল চিত্র

আগামী মঙ্গলবার বিজেপির ‘নবান্ন অভিযান’ কর্মসূচি। দীর্ঘ দিন পরে বড় মাপের জমায়েতের লক্ষ্য নিয়েছে রাজ্যের গেরুয়া শিবির। তাতে মূলত দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিকে বেশি করে কর্মী-সমর্থক আনতে বলা হলেও উত্তরবঙ্গকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু উত্তর থেকে দক্ষিণে আসার এক্সপ্রেস ট্রেনে জোর করে যাতে বিজেপি কর্মীরা না ওঠেন, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দিল্লির সেই নির্দেশ কার্যকর করতে বিভিন্ন রুটে এক্সপ্রেস ট্রেন ভাড়া নিতে চায় রাজ্য বিজেপি। সেই সব ট্রেনে চেপেই উত্তরবঙ্গের কর্মীরা আসবেন ও ফিরবেন। বাকি সময়টা বিভিন্ন স্টেশনে অপেক্ষা করবে বিজেপির ট্রেন।

শুধু উত্তরবঙ্গই নয়, জঙ্গলমহল এলাকার বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলার দলীয় কর্মীদের আনতেও এমন ট্রেন ভাড়া নেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে রাজ্য বিজেপি।

Advertisement

কলকাতায় সমাবেশ মানেই বিনা টিকিটে ট্রেন ভরে কর্মীদের নিয়ে আসার রাজনৈতিক সংস্কৃতি। দীর্ঘ দিন ধরেই এই সংস্কৃতি চলছে। এর ফলে অনেক সময়েই সংরক্ষিত কামরার যাত্রীরা সমস্যায় পড়েন। দলবদ্ধ রাজনৈতিক কর্মীদের সামনে অসহায় অবস্থায় আসন ছেড়ে দিতে হয় যাত্রীদের। সেই সংস্কৃতিতে বদল আনতে চায় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেই মর্মেই রাজ্যকে ট্রেন ভাড়া করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বালুরঘাট, আলিপুরদুয়ার, নিউ জলপাইগুড়ি ও মালদহ টাউন স্টেশন থেকে ট্রেন নেওয়া হবে। যেগুলি সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মীদের কলকাতায় নিয়ে আসবে এবং কর্মসূচির শেষে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। এর জন্য কোথায় কত কামরার ট্রেন দরকার, তা জানিয়ে রেলের কাছে আবেদনও করা হয়েছে।

ট্রেন সংক্রান্ত প্রস্তুতির কথা জানিয়ে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তথা ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মন বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আমরা রেলযাত্রীদের সমস্যায় ফেলার বিপক্ষে। সেই কারণেই আলাদা করে দলের খরচে ট্রেন ভাড়া নেওয়ার পরিকল্পনা করছি। তবে এখনও সবটা চূড়ান্ত হয়নি। সেটা হয়ে গেলেই কোন ট্রেন, কোন স্টেশন থেকে কখন ছাড়বে এবং কী ভাবে ফিরবে তা সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতা-কর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’’ বিজেপির এমন উদ্যোগ অবশ্য একেবারে নতুন নয়। গত মে মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্য সফরে এসে শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গের জন্য একটি সমাবেশ করেছিলেন। সেখানে জমায়েতের জন্য মালদহ টাউন স্টেশন থেকে একাধিক ট্রেনে করে কর্মীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

তবে উত্তরবঙ্গ থেকে বেশি কর্মী আনার পরিকল্পনা দলের নেই বলেই জানিয়েছেন দীপক। তিনি বলেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলি থেকেই বেশি মানুষ আসবেন। তাঁরা নিজেদের মতো আসবেন এবং যাবেন। কোনও কোনও জেলা বাস ভাড়া করতে পারে। তবে উত্তরের জন্য ট্রেন ভাড়া নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।’’ একই সঙ্গে দীপকের দাবি, ট্রেনযাত্রীদের পাশাপাশি কর্মীদের সুবিধার কথা ভেবেও এই ব্যবস্থা। উত্তরবঙ্গ থেকে যাঁরা আসবেন, তাঁদের আগের দিন নিয়ে আসতে হলে কলকাতায় থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তার পরিবর্তে ট্রেনে করে সারা রাত ধরে এসে কর্মসূচি শেষে আবার রাতে ফিরে যাওয়াটা সুবিধার।

বিজেপি নবান্ন অভিযানে জমায়েতের লক্ষ্যে দক্ষিণবঙ্গের উপরে জোর দিলেও প্রচারে গুরুত্ব দিচ্ছে উত্তরেও। মঙ্গলবারই কোচবিহারে সমাবেশ করেছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বৃহস্পতিবার বালুরঘাট এবং শুক্রবার তাঁর সফর মালদহে। অন্য দিকে, শুক্রবার উত্তরের জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে নবান্ন অভিযানের প্রচারে যাচ্ছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই প্রসঙ্গে সুকান্ত বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের সব কর্মীই যে নবান্ন অভিযানে যোগ দেবেন সেটা হয়তো নয়। কিন্তু যে কারণে এই কর্মসূচি তা গোটা রাজ্যের কাছে কলঙ্কের। বাংলায় যে ভাবে নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরাধমূলক কাজ হয়েছে তার প্রতিবাদেই রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ ও প্রচারের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।’’

উত্তরবঙ্গ থেকে কর্মীদের আনতে ট্রেন ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেলেও এখনও বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার বিষয়টি আলোচনা স্তরেই রয়েছে বলে রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনের ফলের প্রেক্ষিতে দক্ষিণবঙ্গের অন্য জায়গার তুলনায় ওই দুই জেলায় বিজেপির ফল ভাল হয়েছে। সেখানে সাংগঠনিক শক্তিও তুলনায় বেশি। সেই কারণে দক্ষিণবঙ্গের ওই দুই জেলার জন্যও ট্রেন ভাড়া নেওয়া হতে পারে। একান্ত না হলে বাসের ব্যবস্থা হবে। তবে যে সব কর্মী লোকাল ট্রেনে আসবেন, তাঁরাও যাতে রেলের ক্ষতি না করেন সেই মর্মে দলের পক্ষে জেলায় জেলায় নির্দেশ পাঠিয়েছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘আমাদের যে নীতি, তাতে রাষ্ট্রের ক্ষতি করে রাজনীতি নয়। কিন্তু রাজনৈতিক দলে অনেক সময়েই সবটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তবু আবেদন জানানো হয়েছে যাতে নেতা-কর্মীরা লোকাল ট্রেনে টিকিট কেটেই কলকাতায় আসেন।’’

আরও পড়ুন
Advertisement