মহিলা ভোটে লক্ষ্য বিজেপির। — ফাইল চিত্র।
মহিলা ভোট দলের ঝুলিতে ভরার ক্ষেত্রে বরবরই এগিয়ে তৃণমূল। সৌজন্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বিভিন্ন প্রকল্পের দৌলতে এখন মহিলা ভোটের বড় অংশকে নিশ্চিত করে ফেলেছে বাংলার শাসক দল। মহিলারা এমনিতেই মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতার প্রতি সমর্থন দেখিয়েছে সাম্প্রতিক সব নির্বাচনে। এই পরিস্থিতিতে লোকসভা ভোটে দেশ জুড়ে নতুন কর্মসূচি নিল বিজেপি। বাংলায় তো বটেই, গোটা দেশে মহিলা ভোট পেতেই এই কর্মসূচি। ঠিক হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের ঋণ নির্ভর দেশের প্রায় এক কোটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছতে চায় বিজেপি। লক্ষ্য, এই সব গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ১৫ কোটির মতো মহিলার পাশাপাশি তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মিলিয়ে ৬০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছনো। যা দেশের মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক। প্রসঙ্গত, অতীতের কোনও লোকসভা ভোটে এমন কর্মসূচি নিতে দেখা যায়নি বিজেপিকে।
শুধু তৃণমূল নয়, বিজেপিও সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে মহিলা ভোটের জোরেই ভাল ফল করেছে বলে দাবি করে। ভোটের আগে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান ‘লাডলি বহেন যোজনা’য় মহিলাদের আর্থিক সাহায্যের অঙ্ক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন হাজার টাকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভোটের ফল বলছে, মধ্যপ্রদেশে যে যে কারণে বিজেপি তথা শিবরাজ নির্বাচনে জিতেছেন, তার অন্যতম বিপুল মহিলা ভোট। একই ভাবে তুলনা করা যায় যে, গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পরে সেই প্রকল্প চালুও হয়। নবান্নের হিসাব অনুযায়ী, রাজ্যের দু’কোটির বেশি এই প্রকল্পের সুবিধা পান। প্রসঙ্গত, রাজ্যের মোট মহিলা ভোটার ৩,৭০,৫২,৪৪৪। এর মধ্যে প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া মহিলা অর্ধেকেরও বেশি। এ ছাড়াও ‘কন্যাশ্রী’ থেকে ‘রূপশ্রী’— অনেক প্রকল্পই মহিলাদের জন্য রয়েছে বাংলায়।
বিজেপির ভাবনা অবশ্য শুধু বাংলা নিয়ে নয়। গোটা দেশেই শুরু হতে চলেছে এই নতুন জনসংযোগ কর্মসূচি। এর জন্য দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা ন’জনের একটি কমিটিও তৈরি করেছেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কমিটির মাথায় রয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তরুণ চুঘ। কমিটিতে বাকি সকলেই মহিলা। বাংলা থেকেও রয়েছে মালদহের ইংরেজবাজারের বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। কেমন হবে এই কর্মসূচি তা শ্রীরূপার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি অবশ্য এই কর্মসূচি নিয়ে কোনও কথা বলতেই রাজি হননি।
কবে থেকে এই কর্মসূচি বিজেপি শুরু করবে তা না-জানালেও দলের দাবি, গোটা দেশে অতীতে এত বড় কোনও জনসংযোগ কর্মসূচি হয়নি। প্রসঙ্গত, বাংলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ঋণ দেওয়ার ‘জাগো প্রকল্প’ চালু করেন মমতা। তবে বিজেপির লক্ষ্য অন্য গোষ্ঠী। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের ঋণে চলা গোষ্ঠীর সদস্যদের কাছেই পৌঁছতে চায় গেরুয়া শিবির। কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তালিকা অনুযায়ী বাংলায় এমন গোষ্ঠীর সংখ্যা ১০ লাখ ৭০ হাজারের বেশি। নতুন কর্মসূচিতে রাজ্যের এই সব গোষ্ঠীর সদস্যদের বাড়ি বাড়ি যাবে বিজেপি।