Patharpratima Firecracker Blast

এনআইএ দাবি সুকান্তদের, তৃণমূলের হাতিয়ার গুজরাত

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতের বনাসকাণ্ঠায় বাজি কারখানায় ১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিজেপি এনআইএ তদন্ত চাইছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলে পাল্টা সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:০৫
সোমবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমায় বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডে আট জনের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমায় বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডে আট জনের মৃত্যু হয়েছে। — নিজস্ব চিত্র।

বাজি-বিস্ফোরণে মৃত্যুর ঘটনাকে সামনে রেখে মঙ্গলবার দিনভর রাজ্যের শাসক-বিরোধীর তরজায় থাকল বাংলা এবং গুজরাত! দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার বিস্ফোরণ-কাণ্ডের তদন্তভার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকে (এআইএ) দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে মঙ্গলবার চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এই ঘটনায় পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিশানা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পক্ষান্তরে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতের বনাসকাণ্ঠায় বাজি কারখানায় ১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিজেপি এনআইএ তদন্ত চাইছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলে পাল্টা সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সঙ্গে মোদী গুজরাতের ঘটনা নিয়ে ট্যুইট করলেও বাংলা কেন ‘ব্রাত্য’, সে প্রশ্নও তুলেছে তারা।

Advertisement

রাজ্যে ভূপতিনগর, এগরা, বজবজ, কাল্যাণীর পরে পাথরপ্রতিমা, বাজি-কাণ্ডের এই ‘তালিকা’ দিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে জবাব দিতে হবে। এমন ঘটনা ঘটতে দেওয়ার জন্য রাজ্যের অদক্ষ পুলিশমন্ত্রী মমতাই দায়ী।” তমলুকে এ দিন তিনি আরও বলেছেন, “সব প্রমাণ নষ্ট করে দিয়েছে। পুলিশ বলেছে, বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়নি। অর্থাৎ প্রথম কাজ শেষ, যাতে এনআইএ তদন্তভার না-নিতে পারে।” যদিও এনআইএ তদন্তের দাবিতেই অনড় রয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “বাংলাকে বোমা, বারুদের স্তূপের উপরে বসিয়ে রেখেছেন তিনি (মমতা)। এত বিস্ফোরক জমা হল, অথচ গোয়েন্দা বিভাগ জানতে পারল না? না কি গোয়েন্দা বিভাগকে চোখ বন্ধ করে রাখতে বলা হয়েছিল? এনআইএ তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি।” এনআইএ তদন্ত চাওয়ার পাশাপাশি তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই ধরনের ঘটনার মাধ্যমে ‘রাজ্যে ভয়ের পরিবেশ’ তৈরির অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও।

যদিও বিজেপির আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে গুজরাতের ঘটনাটিকে হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। প্রধানমন্ত্রী মোদী এ দিন গুজরাতের ঘটনায় সমবেদনা জানিয়ে ক্ষতিপূরণের কথা জানালেও, সেখানে বাংলার উল্লেখ নেই কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। এই সূত্রেই বিজেপিকে ‘বাংলা-বিরোধী, বহিরাগত’ তকমা দিয়ে কুণালের বক্তব্য, “দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি। গুজরাতে বাজি-বিস্ফোরণে অনেকে মারা গিয়েছেন। এনআইএ যেতে হলে, তারা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজ্য থেকে শুরু করুক।” এই প্রেক্ষিতে গুজরাত এবং পশ্চিমবঙ্গে বাজি বিস্ফোরণের সংখ্যাতত্ত্বকেই হাতিয়ার করেছেন সুকান্ত। তাঁর বক্তব্য, “গত ছ’মাসে গুজরাতে আর কি বিস্ফোরণ হয়েছে? বাংলায় ছ'মাসে কতগুলো বিস্ফোরণ হয়েছে, সেটা তৃণমূল আগে বলুক।”

পাথরপ্রতিমায় বিস্ফোরণ স্থলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপাতি শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল।

পাথরপ্রতিমায় বিস্ফোরণ স্থলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপাতি শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল। — নিজস্ব চিত্র।

পাথরপ্রতিমার ঘটনায় প্রশাসনকে নিশানা করেছে কংগ্রেসও। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেছে। তার পরেই শুভঙ্কর বলেছেন, “ক্যানিং, কল্যাণীর পরে এখন পাথরপ্রতিমা। গ্রামে বাড়িতে বাজি তৈরি করছে। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিয়ে আড়াল করছে। এমন ঘটনা ঘটলে বিষয়টি না-জানার জন্য দায় নিতে হবে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিকে। পাথরপ্রতিমায় এখনও ফরেন্সিক তদন্ত হয়নি। প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটনের ইচ্ছা প্রশাসনের নেই। হাই কোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত হোক। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে ব্যবস্থা নিক।” এ দিন আলাদা ভাবে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বিজেপির মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি অশোক পুরকাইত, রাজ্যের মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা প্রমুখ। তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার জানিয়েছেন, নবান্ন ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশের থেকে রিপোর্ট তলব করেছে। তাঁর বক্তব্য, “কারও গাফিলতি থাকলে ছাড় দেওয়া হবে না। রাজ্য সরকার এই সব বিষয় বিন্দুমাত্র বরদাস্ত করে না।”

Advertisement
আরও পড়ুন