TMC

পুজোর ২৫৮ কোটিতে রাজ্যে কী কী উন্নতি হত, হিসাব বিজেপির, পাল্টা যুক্তি দিল তৃণমূল

রাজ্যের তরফে দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে দেওয়া হবে এককালীন ৬০ হাজার টাকা। ঘোষণা অনুযায়ী, রাজ্যে এমন কমিটি ৪৩ হাজার। মোট খরচ ২৫৮ কোটি টাকা।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২২ ১৭:১৬
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী পুজো কমিটিগুলির জন্য অনুদান ঘোষণার পর থেকেই সরব বিরোধীরা।

সোমবার মুখ্যমন্ত্রী পুজো কমিটিগুলির জন্য অনুদান ঘোষণার পর থেকেই সরব বিরোধীরা।

রাজ্যের হাতে টাকা নেই বলে ‘কান্নাকাটি’ করা হলেও ‘খয়রাতি’ করতে অর্থের অভাব নেই। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজো কমিটিগুলির জন্য অনুদান ঘোষণার পর থেকেই বিরোধীরা এই সুরে সরব। মঙ্গলবার আরও এক ধাপ এগিয়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির দাবি, ওই টাকায় রাজ্যের অনেক উন্নয়ন সম্ভব ছিল।

শুধু মাত্র বলা নয়, রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য ওই অর্থে কী কী উন্নয়ন সম্ভব ছিল, তার একটি হিসাবও দাখিল করেছেন। যদিও সেই দাবি উড়িয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘দুর্গাপুজোর সঙ্গে রাজ্যের অর্থনীতিও যুক্ত। প্রান্তিক অসংগঠিত শ্রমজীবীদের হাতে অর্থ পৌঁছে দিতেই বছরে এক বার রাজ্য সরকার এই উদ্যোগ নেয়।’’

Advertisement

রাজ্যের ওই উদ্যোগকে ‘দিশাহীনতা’ বলে দাবি করে মঙ্গলবার শমীক বলেন, ‘‘সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য মহার্ঘভাতা দিতে পারছে না রাজ্য সরকার। কোনও ক্ষেত্রেই কোনও উন্নয়ন নেই। হাসপাতালে ওষুধ কেনার টাকা নেই। দিশাহীন সরকার এই পরিস্থিতিতে টাকা বিলোচ্ছে! কোনও ক্লাবকর্তা এই অনুদান নিয়ে উদ্বাহু নৃত্য করলে তাঁদের বাড়ির লোকেরাই তাড়া করবেন! কোনও দুর্গাপুজো কমিটি তৃণমূল সরকারকে প্রবল জনরোষ থেকে রক্ষা করতে পারবে না।’’

ওই ‘দানছত্র’ রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি তথা দুর্নীতির অভিযোগে বিভিন্ন তদন্ত থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা বলেও দাবি শমীকের। তিনি বলেন, ‘‘আসলে ক্লাবগুলিকে কিনে ‘চোর-চোর’ আওয়াজ বন্ধ করতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাতে কাজ হবে কি? বরং উনি যদি ওই টাকাটা রাজ্যের উন্নয়নে খরচ করতেন, তা হলে বাংলার লাভের লাভ হত। বাংলার যে সংস্কৃতি, তাতে দুর্গাপুজো মানে বারোয়ারি। বারো ইয়ারের পুজো। সর্বজনীন। সকলের উদ্যোগ, তন-মন-ধন দিয়ে পুজো। সেই পুজোকে তৃণমূল ‘সরকার পোষিত’ পুজো করে দিতে চাইছে।’’

পুজোর অনুদান খাতে বরাদ্দ টাকার হিসাব দিতে গিয়ে শমীক বলেন, ‘‘সাধারণ হিসেবেই দেখা যায় ওই টাকায় কী কী হতে পারত। মুখ্যমন্ত্রী যে হিসাব দিয়েছেন, তাতে মোট ৪৩ হাজার পুজো কমিটিকে ৬০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। তাতে সরকারের মোট খরচ হবে ২৫৮ কোটি টাকা। এর পরেও সরকারি খরচে ১ সেপ্টেম্বর কলকাতা ও জেলায় জেলায় শোভাযাত্রা, রাজ্য জুড়ে পুজোর কার্নিভালেও কোটি কোটি টাকা খরচ হবে। কিন্তু শুধু যদি ওই ২৫৮ কোটির হিসাব কষা যায়, তাতেও অনেক কিছু সম্ভব ছিল বাংলায়।’’

শমীকের হিসাবে দাবি করা হয়েছে, বাংলায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু মিড ডে মিল বাবদ বাজেট ৪.৯৭ টাকা। তার মানে ওই টাকায় প্রায় ৫২ কোটি মিড ডে মিল হত। উচ্চ প্রাথমিকে (৭.৪৫ টাকা প্রতি পড়ুয়া) ৩৪ কোটি ৬৩ লাখের বেশি মিড ডে মিল বাবদে খরচ করা যেত। রাজ্যের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে রোগীদের মেঝেতে শুতে হয়। প্রতিটি বেডের জন্য ৫০ হাজার টাকা খরচ ধরলে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ৫১,৬০০ শয্যা বাড়ানো যেত। এক একটি নলকূপ তৈরিতে ৭০ হাজার টাকা খরচ ধরলে রাজ্যে পানীয় জলের সমস্যা অনেকটা মিটত। গ্রামাঞ্চলে ৩৬,৮৬০টির মতো নলকূপ বানানো যেত।

সেখানেই না থেমে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রেও ওই টাকা বিনিয়োগ করা যেত বলে দাবি করেন শমীক। তিনি বলেন, ‘‘উচ্চমানের ল্যাবরেটরি বানানোর জন্য রাজ্যের ২৫৮টি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলকে এক কোটি টাকা করে দেওয়া যেত। মাত্র ১০ লাখ টাকা করে দিলে ২,৫৮০টি প্রাথমিক স্কুলের উন্নয়ন সম্ভব ছিল। আর সবচেয়ে বড় কথা, রাজ্য সরকার ২ টাকা কেজি দরে ১ কোটি ২৯ লাখ কেজি চাল কিনতে পারত।’’

শমীকের বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি এত দিন বলত, বাংলায় দুর্গাপুজো হয় না। এখন ইউনেস্কোর সম্মান ও অনুদান নিয়ে গা জ্বলছে কেন?’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘দুর্গাপুজো যেমন ধর্মীয় আচার, তেমনই এর সঙ্গে এক বিশাল অর্থনৈতিক বিষয়ও জড়িত। বর্তমানের কঠিন আর্থিক পরিস্থিতির সময়ে অসংগঠিত শ্রমজীবী পরিবারের হাতে যাতে টাকা যায়, তার জন্যই সরকারের এই উদ্যোগ। এটা বোঝে না বলেই বিজেপি মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন।’’ একই সঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণালের দাবি, ‘‘বিজেপি যদি রাজ্যের উন্নয়ন নিয়েই এতই চিন্তিত হয়, তবে কেন্দ্র যাতে রাজ্যের প্রাপ্য টাকা দিয়ে দেয়, সে বিষয়ে উদ্যোগী হোক!’’

আরও পড়ুন
Advertisement