বিধানসভা চত্বরে বিক্ষোভ শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি বিধায়কদের। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বিধানসভার গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ অন্য বিজেপি বিধায়কেরা। আলুর প্যাকেট এবং থার্মোকলের থালার উপর লেখা স্লোগান তুলে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। বিধায়কেরা স্লোগান দেন, “এত দাম খাব কী? মমতা যাবে কি?” বিভিন্ন সব্জির দাম নামতার আকারে লিখে প্রতিবাদ জানান পদ্ম বিধায়কেরা। পাল্টা ‘মোদী হটাও দেশ বাঁচাও’ স্লোগান দেন তৃণমূল বিধায়কেরা।
রাজ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সে বিষয়ে আলোচনা চেয়ে শুক্রবার বিধানসভায় মুলতবি প্রস্তাব এনেছিল বিজেপি। আলোচনায় অংশ নিয়েও পরে বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়কেরা। বিজেপি বিধায়কদের এই আচরণকে ‘অনভিপ্রেত’ বলে জানিয়েছেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিধানসভার চলতি অধিবেশনে একাধিক বার বিজেপির তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, বিভিন্ন জরুরি বিষয়ে মুলতবি প্রস্তাব আনা হলেও, সে সব বিষয়ে আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয় না। স্পিকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগও তোলা হয়। শুক্রবার অবশ্য স্পিকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেন। আলোচনার জন্য ২০ মিনিট সময় বরাদ্দ করা হয়।
বিজেপির পরিষদীয় দলের তরফ থেকে অভিযোগ তোলা হয় যে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে গরিব মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। কালোবাজারি বন্ধ এবং ফড়েদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়। বিজেপির তরফে পুরুলিয়ার জয়পুরের বিধায়ক নরহরি মাহাতো প্রস্তাবটি বিধানসভায় পাঠ করেন। জবাবে রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পেট্রোপণ্যের দাম বাড়লে জিনিসের দাম বাড়ে। আপনারা সেটা জানেন। অতএব বিরোধিতা করার জন্যই বিরোধিতা করছেন।” মন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচনী বন্ড, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিজেপি চুপ কেন?
এর পরেই শোভনদেব এবং শুভেন্দুর মধ্যে বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় থামাতে মাঝেমধ্যেই হস্তক্ষেপ করতে হয় স্পিকারকে। শোভনদেব বলতে থাকেন, “যাঁরা বাজেট ঘোষণা করে মেডিক্যাল সামগ্রীর উপরও জিএসটি নেয়, তাঁদের মুখে এই সব দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা মানায় না।” মন্ত্রী জানান, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক করেছেন। টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। সব্জির দামও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
শোভনদেব যখন বিজেপির প্রস্তাবের পাল্টা জবাব দিচ্ছেন, তখন বিধানসভার ভিতরেই চিৎকার করতে থাকেন বিরোধী দলের সদস্যেরা। অধ্যক্ষ বিজেপি বিধায়কদের উদ্দেশে বলেন, “মন্ত্রী বিধানসভায় উত্তর দিচ্ছেন। আপনাদের শোনার ধৈর্য নেই।” বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করে বাইরে বেরিয়ে আসেন বিজেপি বিধায়কেরা। তার পর বিধানসভার গেটের বাইরে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
পরে স্পিকার বিমান এই প্রসঙ্গে বলেন, “উত্তর কারও পছন্দ হতে পারে, না-ও হতে পারে। সবাইকে শুনতে হবে। এটাই তো সংসদীয় গণতন্ত্রে বাঞ্ছনীয়।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “ওরা (বিজেপি) বার বার বলে, আলোচনা করতে দেওয়া হয় না। আজ আমরা আলোচনা করতে দিই। কিন্তু ওরা চলে গেল। এটা অনভিপ্রেত।” অন্য দিকে, শোভনদেব দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “এটা কেন্দ্রের বিষয়। পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ছে। তাতে জিনিসের দাম বাড়ছে। এই সত্যকে আলাদা করব কী ভাবে? তা ছাড়া টাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে দাম কমানো হয়েছে।”