(বাঁ দিকে) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, শেখ শাহজাহান। —ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালিকাণ্ডের পরে নতুন নতুন অভিযোগ উঠতে থাকে শেখ শাহজাহানদের বিরুদ্ধে। তবে এর অনেক আগে শাহজাহানদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং সাধারণ সম্পদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। এর পরে শাহজাহান দুই বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন বলে হুমকিও দিয়েছিলেন শাহজাহান। এখন সিবিআই হেফাজতে শাহজাহান। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে প্রতি দিনই নতুন নতুন অভিযোগ উঠছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার জগন্নাথ দাবি করলেন, গ্রেফতার হওয়ার আগেই শাহজাহান ১০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছিলেন। সেই সঙ্গে যে বিতর্কের জেরে ওই মামলা তা ফের উস্কে দিয়েছেন জগন্নাথ।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে উত্তর ২৪ পরগনা ড্রাগ পাচার নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন সুকান্ত ও জগন্নাথ। সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করা হয়েছিল, কলকাতা বন্দরে আটক হওয়া ২০০ কোটি টাকার হেরোইন কারবারের সঙ্গে জড়িত তৃণমূলের দুই নেতা। বলা হয়েছিল, প্রায় ৪০ কেজি হেরোইন শরিফুল এন্টারপ্রাইজের নামে কলকাতা বন্দরে এসেছিল। বিজেপির দাবি ছিল, ওই সংস্থার মালিক শরিফুল ইসলাম মোল্লা তৃণমূলের ‘ঘনিষ্ঠ’। সন্দেশখালি ১ ও ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শিবু হাজরা এবং শাহজাহানের সঙ্গে শরিফুলের যোগাযোগ রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছিল বিজেপির পক্ষে। সেই সূত্রেই শাহজাহানের মানহানির মামলা। তবে এখন পরিস্থিত অনেক বদলে গিয়েছে। সেই অবস্থায় জগন্নাথের প্রশ্ন, ‘‘শরিফুলের কোনও হদিশ আজও নেই। আমাদের প্রশ্ন তিনি এখন কোথায়? ’’
জগন্নাথরা অভিযোগ তোলার সময়ে দাবি করেছিলেন, গিয়ার বক্সে লুকিয়ে কন্টেনার ভর্তি করে হেরোইন আনা হয়েছিল। এই সংক্রান্ত বিভিন্ন নথি এবং ছবিও পেশ করেছিল রাজ্য বিজেপি। দাবি করা হয়েছিল, ২০২১ সালের মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরে এই মাদকের বরাত দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়, দুবাই থেকে ওই মাদক কলকাতায় আসে। মোট ৬০৫টি প্যাকেটে এবং আড়াই হাজার কিলোগ্রাম স্পেয়ার পার্টসের সঙ্গে ওই মাদক এসেছিল। কিন্তু কলকাতা বন্দরে সেই মাদক পড়ে থাকলেও শরিফুল মোল্লা তা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিয়ে যাননি। পরে ৯ সেপ্টেম্বর গুজরাত এটিএস তল্লাশি চালিয়ে ওই কন্টেনার বাজেয়াপ্ত করে। বিজেপির রাজ্য সভাপতির আরও দাবি, কন্টেনার আটক হওয়ার পর শাহজাহান রাজ্যের এক মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই সময়ে সুকান্তেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, শরিফুল বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন।
মঙ্গলবার বিজেপির সল্টলেক দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে জগন্নাথ বলেন, ‘‘সব চেয়ে উদ্বেগের বিষয়, রাজ্য সরকারের প্রশ্রয়ে গরিব মানুষের জমি কেড়ে নিয়ে নোনা জল ঢুকিয়ে জমির চরিত্র বদল করে ভেড়ি বানানোর চেষ্টা হয়েছে। তৃণমূলের কিছু কেষ্টবিষ্টুদের কালো টাকা সাদা করার চেষ্টা হয়েছে আসলে।’’ বনগাঁয় একটি মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র থেকে বিদেশে টাকা পাচার হত বলেও দাবি করা হয়। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘শাহজাহানের এই তন্ত্রের মধ্যে না থাকলে তৃণমূলের থেকে চাপ আসত ব্যবসায়ীদের উপরে। যাঁরা জেলে রয়েছেন, তাঁরা জোর করে ব্যবসায়ীদের চাপ দিতেন।’’ এর পর আরও মাথা সামনে আসবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জগন্নাথ।