Suvendu Adhikari

২১ জুলাই তৃণমূলের সমাবেশের দিনেই থানায় থানায় প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা শুভেন্দুর

২১ জুলাই বেলা ১টায় যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভামঞ্চ থেকে বক্তৃতা শুরু করবেন, ঠিক সেই সময় রাজ্যের সব থানার সামনে বিজেপি নেতা-কর্মীরা গণতন্ত্র হত্যা দিবস কর্মসূচি পালন করবে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪ ১৭:০২
Bjp leader Suvendu Adhikari announces political program on Tmc\'s 21st July Martyr\'s Day

(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী। রাজভবনের বাইরের রাস্তায় ধর্না অবস্থানে থাকা বিজেপি সমর্থকেরা (ডান দিকে)। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

একুশে জুলাই, রবিবার তৃণমূলের শহিদ দিবসের কর্মসূচি হবে ধর্মতলায়। ওই দিনই রাজ্য জুড়ে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের ডাক দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রবিবার কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে রাজভবনের বাইরের রাস্তায় চার ঘণ্টা ধর্না অবস্থান করেন তিনি। ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনার প্রতিবাদে এই ধর্না কর্মসূচির শেষ বক্তা ছিলেন তিনি। সভার শেষ লগ্নে বক্তৃতা করতে উঠে একের পর এক কর্মসূচি ঘোষণা করলেন বিরোধী দলনেতা। জানালেন, ২১ জুলাই বেলা ১টায় যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভামঞ্চ থেকে বক্তৃতা শুরু করবেন, ঠিক সেই সময় রাজ্যের সব থানার সামনে বিজেপি নেতা-কর্মীরা গণতন্ত্র হত্যা দিবস কর্মসূচি পালন করে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কুশপুত্তলিকা দাহ করবেন। ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হবেন তিনি। সম্প্রতি একটি বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে কলকাতার মেয়রের বিরুদ্ধেও সরব হবেন শুভেন্দুরা। সম্প্রতি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিরোধী দলনেতা। তার পরেই একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক।

Advertisement

শুভেন্দু বলেন, ‘‘২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রায় এক কোটি লোককে ভোট দিতে দেয়নি। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের হাত-পা কার্যত বেঁধে রাখা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনের আধিকারিক আরিজ আফতাব কী ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজ করতে দেননি, তার প্রমাণ আমরা তুলে ধরব। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বুথের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, আইকার্ড চেক করতে দেওয়া হয়নি।’’ শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘২০২৪-এর লোকসভা ভোট এবং চারটি উপনির্বাচনে হিন্দুদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। রায়গঞ্জে অন্তত ৫০ হাজার মানুষকে, রানাঘাটে ৭০ হাজার মানুষকে এবং বাগদায় ১০ হাজার লোককে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। মানিকতলার আটটি ওয়ার্ডে ভোট লুট হয়েছে। তাই ২১ জুলাই রাজ্যের সর্বত্র বেলা ১টায় গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করতে দলমত নির্বিশেষে আমি সবাইকে রাস্তায় নামতে বলব।’’

এ ছাড়াও সোমবার থেকে এলোপি (লিডার অফ দ্য অপোজ়িশন) পোর্টাল চালু করা হচ্ছে বিরোধী দলনেতার উদ্যোগে। যাঁরা পঞ্চায়েত লোকসভা এবং উপনির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি, তাঁরা ওই পোর্টালে গিয়ে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। এই পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করলে তাঁদের নাম গোপন রাখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘রানাঘাট দক্ষিণের একশো জন, রায়গঞ্জ এবং মানিকতলায় যাঁদের আঙুলে কালি পড়েনি— তাঁরা সবাই আইকার্ড নিয়ে আমার সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি রাজভবনে যাবেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে আমি এমন ১০০ জনকে হাজির করাব, যাঁদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি।’’ শুভেন্দুর সংযোজন, ‘‘আমি একটি বড় লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি। নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি গড়েছিলাম, পরে তা গণ আন্দোলনের রূপ নিয়েছিল। যাঁরা ভোট দিতে পারেননি, বা অত্যাচারিত হয়েছেন, বিজেপি মনোনীত বিরোধী দলনেতা হিসাবে তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। আগামী দিনে তাঁদের নিয়ে আমি বড়সড় আন্দোলনে নামব।’’

তিনি জানান, প্রাক্তন বিচারপতি তথা তমলুকের বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত বিজেপির ৮ জন সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলার উপদ্রুত এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার জন্য সময় চাইবেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা রাষ্ট্রপতি শাসন চাই না। মুখ্যমন্ত্রী বসে থাকুন নবান্নে। আমরা চাই, মণিপুরের মতো ডিস্টার্বড এরিয়া-১ চিহ্নিত করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে গুন্ডাদের উচিত শিক্ষা দিক প্যারা মিলিটারি ফোর্স।।’’ পাশাপাশি তিনি জানান, ‘এত দাম খাব কী, মমতা যাবে কি’ এই স্লোগান সামনে রেখে ১৮ জুলাই নন্দীগ্রামে একটি গণ রাজনৈতিক কর্মসূচি ডাক দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর কথায়, ‘‘আলু-সহ রাজ্যে উৎপাদন হওয়া বিভিন্ন জিনিসের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জমি কেনাবেচার ওপর দুই শতাংশ সেস বৃদ্ধি হয়েছে, পেট্রোল-ডিজেলের দাম এক টাকা করে লিটার পিছু বাড়ানো হয়েছে। এ সবের প্রতিবাদে ওই মিছিল হবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘নিজ নিজ এলাকায় বিজেপি বিধায়কেরাও এই কর্মসূচি পালন করবেন। লোকসভা এবং সদ্যসমাপ্ত বিধানসভার উপনির্বাচনে যাঁরা ভোট দিতে পারেননি, বা যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন, আগামী ১৯ জুলাই থেকে বিরোধী দলনেতা-সহ বিজেপি বিধায়কেরা তাঁদের বাড়ি পরিদর্শনে যাবেন। ২২ জুলাই কলকাতার ভিক্টোরিয়া হাউসের সিইএসসি অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘এই সব কর্মসূচি শেষ হলে আমি আমার দলের সঙ্গে কথা বলব। আগামী দিনে নবান্ন অভিযানের মতো কর্মসূচি আবারও প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি। ১৭ তারিখ আমাদের দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠক রয়েছে। সেখানে আমি দলের কাছে এই প্রস্তাব রাখব।’’

আরও পড়ুন
Advertisement