মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে ‘পাখির চোখ’ করেই মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে রাজ্য সরকারের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। নিউটাউনের বিশ্ব বঙ্গ কনভেনশন সেন্টারে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্মেলনে থাকার কথা মুকেশ অম্বানী, নিরঞ্জন হীরানন্দানি, সজ্জন জিন্দল, হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা-সহ দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের। উপস্থিত থাকার কথা ইংল্যান্ড, ইটালির মতো বিভিন্ন দেশের শিল্পপতিদেরও। মুখ্যমন্ত্রী মমতার পৌরোহিত্যে বাণিজ্য সম্মেলনের প্রাথমিক লক্ষ্য রাজ্যের জন্য বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান।
এই বাণিজ্য সম্মেলনের আগে বিনিয়োগ টানার লক্ষ্যেই গত সেপ্টেম্বরে স্পেন ও দুবাই সফরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। স্পেনীয় ও মরুদেশের বণিকমহলের সামনে বাংলায় বিনিয়োগের যে নতুন নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছে গত এক দশকে, তা তুলে ধরা হয়েছিল রাজ্য সরকারের তরফে। দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের একটি দলও মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছিল। তারাও আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলায় শিল্পবান্ধব পরিবেশ ও নতুন পরিসরের কথা তুলে ধরেছিল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা এবং দুবাইয়ে।
প্রসঙ্গত, তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পরে মমতা স্পষ্ট করেছিলেন, এই মেয়াদে তাঁর লক্ষ্য শিল্পায়ন। রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্রের বক্তব্য, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানই যে ভবিষ্যতের রাস্তা, তা আরও স্পষ্ট হবে দু’দিনের বাণিজ্য সম্মেলনে। রাজ্য সরকার এবং শাসক দল তৃণমূল— উভয়েরই লক্ষ্য এই দু’টি বিষয়ে মনোনিবেশ করা এবং এই রাস্তায় রাজ্যকে অগ্রসর করা। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১২ বছরে রাজ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ বেড়েছে নজরকাড়ার মতো। পাশাপাশি পর্যটন, চার্মশিল্প-সহ বিনিয়োগের নতুন দিকও উন্মোচিত হয়েছে। রিয়েল এস্টেট বা আবাসন শিল্পেও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ হয়েছে বাংলায়।
যদিও বিরোধীদের সমালোচনা, রাজ্যে মমতার মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময় বড় কোনও শিল্প হয়নি এ রাজ্যে। এবং তাঁদের দাবি, রাজ্য সরকারের ‘ভ্রান্ত’ জমিনীতির কারণেই তা সম্ভব হয়নি। পাল্টা তৃণমূলের বক্তব্য, তারা শিল্পের বিপক্ষে নয়। তবে জোর করে জমি কেড়ে নিয়ে শিল্পায়নের পক্ষে তারা নয়। এটা শাসক দল তথা মুখ্যমন্ত্রীর ‘নীতিগত অবস্থান’। পাশাপাশিই মুখ্যমন্ত্রী মমতার দাবি, গত ১২ বছরে দেশে যখন বেকারত্বের হার বেড়েছে, রাজ্যে তখন ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে। তার কারণ সরকারের ‘বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি’। মঙ্গলবার শুরু হয়ে বুধবার শেষ হবে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। প্রতি বারই সরকারের তরফে হিসাব দিয়ে জানানো হয়, কোন কোন সংস্থা ‘মউ’ স্বাক্ষর করল, তার অঙ্ক কত। শেষ দিনেই তা জানা যাবে বলে সূত্রের খবর। এ বার কোন কোন ক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগ আসে সেটাই দেখার। কারণ বিনিয়োগের পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানও লক্ষ্য নবান্নের। বিনিয়োগের মাধ্যমেই সেই কর্মসংস্থানের লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব। প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক— উভয় স্তরেই এ বিষয়ে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হওয়ার রাস্তা নেওয়া হচ্ছে।