BGBS 2023

বিনিয়োগ প্রস্তাবের অঙ্ক গত বারকে ছাপিয়ে গেল, মুখ্যমন্ত্রীর ডাক: সবাইকে বলুন, বাংলায় চলুন

এ বারের বাণিজ্য সম্মেলন হয়েছে তিনটি জায়গায়। নিউটাউনের বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে, বাইপাসের ধারের বিশ্ববাংলা মেলা প্রাঙ্গণ ও আলিপুরের ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৪৪
বাণিজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাণিজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।

বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে এ বার যে পরিমাণ বিনিয়োগের প্রস্তাব এল, তা ছাপিয়ে গেল গত বারের অঙ্ককেও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাণিজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি বক্তৃতায় বলেন, ‘‘এ বার তিন লক্ষ ৭৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। ১৮৮টি ‘মউ’ স্বাক্ষরিত হয়েছে।’’ দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের সামনে অভিভূত মুখ্যমন্ত্রী এ বারের বাণিজ্য সম্মেলনকে স্বপ্নপূরণ বলে উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে বণিকমহলের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলা এখন দেশের মধ্যে বিনিয়োগের শ্রেষ্ঠ গন্তব্য। সবাইকে বলুন, বাংলায় চলুন।’’

Advertisement

মঙ্গলবার শুরু হয়েছিল সপ্তম বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। এ বারের দু’দিনের সম্মেলন হয়েছে তিনটি জায়গায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় নিউটাউনের বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে। বুধবার সকালে সরকারি আমলাদের সঙ্গে শিল্পপতিদের বৈঠক হয় বিশ্ববাংলা মেলা প্রাঙ্গণের অডিটোরিয়ামে। সমাপ্তি অনুষ্ঠানটি হয়েছে আলিপুরের ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে। মঙ্গলবার যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ‘বঞ্চনা’র অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন মমতা, বুধবার কেন্দ্রীয় এজেন্সির ‘অপব্যবহার’ নিয়ে গর্জে ওঠেন তিনি। পাশাপাশি মুদ্রাহীন অর্থনীতি নিয়েও তোপ দাগেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে।

বিনিয়োগ ও সম্ভাবনা

এ বার পাঁচ হাজার প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন বাণিজ্য সম্মেলনে। অংশগ্রহণ করেছেন ৪০টি দেশের প্রতিনিধিরা। মোট বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে তিন লক্ষ ৭৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকার। স্বাক্ষরিত হয়েছে ১৮৮টি ‘মউ’। মঙ্গলবার বিপুল বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছিলেন রিলায়্যান্স কর্ণধার মুকেশ অম্বানী। তিনি জানিয়েছিলেন, আগামী তিন বছরে তাঁর সংস্থা বাংলায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। বুধবার বেঙ্গল অম্বুজা গ্রুপের কর্ণধার হর্ষ নেওটিয়া ঘোষণা করেন, স্কুল ও উচ্চশিক্ষায় তাঁর সংস্থা বিনিয়োগ করবে। স্কুল শিক্ষায় বিনিয়োগের অঙ্ক ১৬৭৬ কোটি টাকা ও উচ্চ শিক্ষায় ৩০৬০ কোটি টাকা। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিপুল বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেন রূপক বড়ুয়া।

পর্যটনে নতুন মাইলফলক

ইতিমধ্যেই পর্যটনকে শিল্পের তকমা দিয়েছে রাজ্য সরকার। এ বারের বাণিজ্য সম্মেলনে পর্যটন ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লক্ষ্মী টি-এর কর্ণধার রুদ্র চট্টোপাধ্যায় জানান, পর্যটনে বাংলা অন্য মাইলফলক ছুঁয়েছে। গত বছর রাজ্যে ন’কোটি পর্যটক এসেছিলেন। পাঁচ বছরে দ্বিগুণ বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যা। তাঁর দাবি, বাংলা এখন দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজ্য, যেখানে বিদেশি পর্যটকেরা আসেন।

এজেন্সির সমালোচনা

বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভূমিকা নিয়ে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের প্রথম সারির শিল্পপতি ও বিদেশি অতিথিদের সামনে মমতা সরাসরি বলেন, ‘‘আমাদের শিল্প দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে কেন? কেন এজেন্সি দিয়ে শিল্পপতিদের গলা টিপে ধরা হচ্ছে? কেন তাঁদের সারা ক্ষণ ভয়ের মধ্যে থাকতে হচ্ছে?’’ কর ব্যবস্থা নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার তো কর নেবেই। এতে তো কোনও বাধা নেই। কিন্তু অতিরিক্ত কর বাড়তি চাপ তৈরি করছে।’’

মুদ্রাহীন অর্থনীতিকে তোপ

গত ২০১৬ সালে নোটবন্দির পর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার মুদ্রাহীন (ক্যাশলেস) অর্থনীতির উপরে জোর দিয়েছে। বুধবার, বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের (বিজিবিএস) সমাপ্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে সরাসরি সেই অভিমুখকে নিশানা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘মুদ্রাহীন অর্থনীতি (ক্যাশলেস ইকনমি) কখনও কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে না। কত জন আর ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন? আমি তো করি না!’’ মমতার বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি সরাসরি মোদী সরকারের অর্থনৈতিক অভিমুখকে নিশানা করছেন।

Advertisement
আরও পড়ুন