adhir chowdhury

‘মনু-বিড়ম্বনা’! রাজ্যের হয়ে অভিষেক মনু  সিঙ্ঘভির সওয়াল রুখতে দিল্লিকে বার্তা অধীরের

ইডি-সিবিআই মামলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে সম্প্রতি সিঙ্ঘভি সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করায় বিতর্ক বেধেছিল।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৩ ১০:৫৭
প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী।

প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী। — ফাইল চিত্র।

রাজ্য সরকার বা শাসক দলের হয়ে আদালতে কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির লড়াই ঘিরে জলঘোলা হয়েছে বারবার। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহারের প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের মামলায় যাতে সিঙ্ঘভিকে একই ভূমিকায় দেখা না যায়, তার জন্য আগাম সক্রিয় হল প্রদেশ কংগ্রেস। সুষ্ঠু পঞ্চায়েত ভোট এবং তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয়তার কথা বলে কলকাতা হাই কোর্টে অন্যতম আবেদনকারী ছিলেন লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। হাই কোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের হয়ে সর্বোচ্চ আদালতে যাতে সিঙ্ঘভির মতো দলের কেউ সওয়াল না করেন, তার জন্য কংগ্রেস হাই কম্যান্ডকে আর্জি জানিয়েছেন অধীরই। রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের তরফে বিষয়টা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের দফতরের আগাম নজরেও আনা হয়েছে।

সারা রাজ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন। অধীরের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার নির্দেশ ঠেকাতে সর্বোচ্চ আদালতে রাজ্যের হয়ে সওয়াল করতে পারেন আইনজীবী সিঙ্ঘভি, এমনই আঁচ করছেন তাঁরা। তার পরেই সিঙ্ঘভিকে নিরস্ত করার লক্ষ্যে দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের যুক্তি, পঞ্চায়েতে শাসক দলের ‘সন্ত্রাসে’র শিকার কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা। মুর্শিদাবাদে এক জন নিহত হয়েছেন, চোপড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এমতাবস্থায় এ রাজ্য থেকেই রাজ্যসভার সাংসদ সিঙ্ঘভি শাসক পক্ষের হয়ে আদালতে লড়লে কংগ্রেস দলের জন্য খুবই ‘ভুল বার্তা’ যাবে। বিশেষত, প্রদেশ সভাপতি নিজেই যেখানে মামলায় আবেদনকারী। কংগ্রেস সূত্রের খবর, এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপালকে তাঁদের ‘বিড়ম্বনা’র কথা ব্যাখ্যা করেছেন অধীর। বেণুগোপালও বিষয়টা দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

Advertisement

এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রবিবার অধীর বলেছেন, ‘‘সিঙ্ঘভি এই মামলায় লড়বেন কি না, জানি না। তবে আমরা প্রাথমিক কিছু খবর পেয়েছি, তার ভিত্তিতে দিল্লির নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে। যদি উনি এমন মামলায় লড়েন, তা হলে আমাদের জন্য অত্যন্ত বিড়ম্বনার কারণ হবে, এটা দিল্লিকে বলেছি।’’ এই রাজনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপ হিসেবে রাজ্যের আবেদন সুপ্রিম কোর্টে ওঠার আগে ক্যাভিয়েটও দাখিল করে রেখেছেন অধীর।

ইডি-সিবিআই মামলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে সম্প্রতি সিঙ্ঘভি সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করায় বিতর্ক বেধেছিল। ক্ষোভ গোপন রাখেননি বাংলার কংগ্রেস নেতারা। তার আগেও আইনজীবী সিঙ্ঘভির ভূমিকা নিয়ে একই রকম গোল বেধেছিল। সিঙ্ঘভি অবশ্য বারেবারেই যুক্তি দিয়েছেন, পেশাদার আইনজীবী হিসেবে তিনি কী মামলা লড়বেন, তার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির হয়ে মামলার প্রক্রিয়ায় শামিল হতে এ দিনই দিল্লি গিয়েছেন রাজ্যে দলের আইনজীবী ও মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সরকারের হয়ে কে দাঁড়াবেন, জানি না। সিঙ্ঘভি দাঁড়ালে ফের প্রতিবাদ করব! হাই কোর্টের নির্দেশে বিনা খরচে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিতে পারতো রাজ্য সরকার। অথচ তারা কোষাগারের টাকা খরচ করে সুপ্রিম কোর্টে তার বিরুদ্ধে আবেদন করতে যাচ্ছে, এটা এক অদ্ভুত ব্যাপার!’’ রাজ্য তৃণমূলের নেতা তাপস রায় অবশ্য বলছেন, ‘‘পেশাদার আইনজীবী হিসেবে কেউ কোনও মামলা লড়তেই পারেন। রাজ্য সরকার কাকে আইনজীবী করবে, সরকারের ব্যাপার। আর কংগ্রেস কী করবে, তাদের দলের ব্যাপার।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন, গত বিধানসভা ভোটে আমাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের কে নামেনি? বিষয়টা সেটা নয়। পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচিত রাজ্য সরকার এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপরে। তাদের উপরে ভরসা না রেখে সব কিছু চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতার বিরোধিতা করছি আমরা।’’

আরও পড়ুন
Advertisement