Kazi Nazrul Islam

নজরুলের পাণ্ডুলিপি, রেকর্ডের সংগ্রহশালা বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নজরুল আর্কাইভে থাকছে প্রায় ৫০০০ গ্রামোফোন রেকর্ড। নজরুলের একটি পাণ্ডুলিপি, প্রায় পাঁচশো সিনেমার লবি কার্ড, ছ’শোর মতো রেকর্ড ক্যাটালগ, পাঁচটি গ্রামোফোন যন্ত্র।

Advertisement
নীলোৎপল রায়চৌধুরী
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৫ ০৮:৪৭
কাজী নজরুল ইসলাম ব্যবহৃত গ্রামোফোন।

কাজী নজরুল ইসলাম ব্যবহৃত গ্রামোফোন। ছবি: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে প্রাপ্ত।

Advertisement

নজরুলের সমস্ত আর্কাইভ কিনে এই বিষয়ে প্রকল্প তৈরি করে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরে পাঠিয়েছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্প দ্রুত অনুমোদনের অপেক্ষায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চন্দন কোনারের কথায়, ‘‘প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে নজরুল সম্পর্কে আগ্রহীরা ঘরে বসেই তাঁর যাবতীয় লেখা পড়তে পারবেন। বিট্রিশ লাইব্রেরির আর্থিক সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় এই কাজ করছে। ব্রিটিশ লাইব্রেরির সংগ্রহশালাতেও সমস্তটা থাকবে। ঘরে বসে পড়তে পারার ফলে নজরুল গবেষণায় নতুন ক্ষেত্র খুলবে।’’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নজরুল আর্কাইভে থাকছে প্রায় ৫০০০ গ্রামোফোন রেকর্ড। নজরুলের একটি পাণ্ডুলিপি, প্রায় পাঁচশো সিনেমার লবি কার্ড, ছ’শোর মতো রেকর্ড ক্যাটালগ, পাঁচটি গ্রামোফোন যন্ত্র। এর মধ্যে একটি ১০৪ বছর আগের গ্রামোফোন ‌যন্ত্র আছে, নজরুল ব্যবহৃত এই যন্ত্র এখনও চলে। রয়েছে রেকর্ড কভার ও অন্য বই। আছে সাপ্তাহিক জার্নাল। ২০২৩ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এগুলি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ‘কিউরেটর’ হিসাবে করে চলেছেন গৌরব চৌধুরী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব কালচারাল টেক্সক্ট অ্যান্ড রেকর্ডস’ বিভাগ থেকে গ্রামোফোন ডিজ়িটাইজেশন-এর উপরে একটি কর্মশালা হয়। এর পরে কী ভাবে এই পদ্ধতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। এই সূত্র ধরেই ২০২৪ সালে‌‌ ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে ১৯২০ সাল থেকে ১৯৫০-এর মধ্যে সমস্ত বাংলা নাটকের (রেকর্ড থাকা), নজরুল সঙ্গীত ও সমকালীন বাংলা গানের উপর ডিজ়িটাইজেশন প্রকল্পের আবেদন করা হয়েছে। এমন কাজ ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে প্রশংসার সঙ্গে গৃহীত হয়েছে‌।‌

এই প্রকল্পে তিন জন গবেষণা সহযোগীও যোগদান করেছেন। তাঁরা হলেন সঞ্চারী মালি, শ্বেতা সেন ও মালিনী ঘোষ। গৌরব জানান, ব্রিটিশ লাইব্রেরির আর্থিক সহযোগিতায় ‌৬ মাসের মধ্যে প্রায় ১৪০০ রেকর্ড ডিজ়িটাইজেশন করা হয়েছে। এই কাজে অনালোচিত ও বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া গিয়েছে, যা বিশেষ গবেষণার অপেক্ষা রাখে। তার মধ্যে রয়েছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের নাট্য প্রযোজনা ও অভিনয়, সন্তোষ সিংহ, তুলসী লাহিড়ি, শিশির ভাদুড়ি প্রমুখের‌ বহু হারিয়ে যাওয়া নাটকের অভিনয়। এ ছাড়া কিছু রেকর্ড আছে, যা বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে গানগুলির সংরক্ষণ এবং গবেষণা এই প্রকল্পের লক্ষ্য। পরবর্তীতে আরও রেকর্ড সংগ্রহ করে ব্রিটিশ লাইব্রেরির প্রকল্পে-এর সঙ্গে যুক্ত করে গবেষণায় নতুন পথের সন্ধানে নজরুলের আর্কাইভের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনাও আছে। নবীন ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন কোনও কাজের ভাবনা বা গবেষণা করা যায় কিনা, ভাবা হচ্ছে বলে জানান ‌বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সংগ্রহশালায় চলছে কাজ।

সংগ্রহশালায় চলছে কাজ। ছবি: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে প্রাপ্ত।

এই প্রকল্পে ‘আর্কাইভাল’ সহযোগী হিসাবে আছেন এইচএমভি-র প্রাক্তন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার ও সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক অভিমন্যু দেব, ভাষাবিদ ও রেকর্ড সংগ্রাহক রাজীব চক্রবর্তী। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ রেকর্ড সংগৃহীত হয়েছে কলকাতার বিখ্যাত রেকর্ড সংগ্রাহক প্রয়াত সুরজলাল মুখোপাধ্যায়ের সংগ্রহ থেকে। এক্ষেত্রে সহযোগিতা করছেন সুরুজলাল শ্রুতি সদনের অধিকর্তা অমিত গুহ। তিনি একসময় ইস্টবেঙ্গল দলের গোলকিপার ছিলেন। তিনি কথা দিয়েছেন সংগ্রহের সমস্ত কিছু গবেষণার ক্ষেত্রে দিতেও প্রস্তুত।

Advertisement
আরও পড়ুন