Flood in Bardhaman

বাইরে বেরোন, প্রশাসনের কর্তা থেকে নেতাদের পরামর্শ মমতার

সোমবার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলাশাসকের দফতরে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলার দুই মন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক, রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ ও পাঁচটি দফতরের সচিবেরা।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৮
জেলাশাসকের কার্যালয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক।

জেলাশাসকের কার্যালয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র।

দফতরে বসে নয়, এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে বাস্তব চিত্রটা দেখার পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার থেকে পুলিশ আধিকারিক, জনপ্রতিনিধিদেরও এই পরামর্শ দেন তিনি।

Advertisement

সোমবার বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলাশাসকের দফতরে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলার দুই মন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক, রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ ও পাঁচটি দফতরের সচিবেরা। আধ ঘণ্টার বৈঠকের শুরুতেই তিনি জেলার বন্যা দুর্গত জামালপুর ও রায়না থেকে কারা কারা হাজির হয়েছেন জানতে চান। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, জামালপুর-রায়না যাওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর। কিন্তু পরিস্থিতি শুধরেছে সেখানে। তবে ফের তিন দিন ধরে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফের ডিভিসি জল ছাড়লে আবারও একই পরিস্থিতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। প্রশাসনিক কর্তা থেকে জনপ্রতিনিধিদের বলেন, রাত জেগে খেয়াল রাখতে হবে। মানুষের পাশে থাকতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসক, বিধায়ক থেকে কর্মাধ্যক্ষদের আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেন। বিডিও, আইসি-ওসিদের জানান, আগে তাঁরা এলাকায় বেরিয়ে কোথায় কী হচ্ছে, কী হতে চলেছে তাঁর খবর রাখতেন। এখন তা তুলনামূলক ভাবে কম হচ্ছে। তাঁদেরও সক্রিয় হতে বলেন তিনি।

জল কমে গেলেও চিকিৎসা-শিবির বন্ধ না করার নির্দেশ দেন মমতা। প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পেট খারাপের ওষুধ থেকে অ্যান্টিভেনম যথেষ্ট পরিমাণে রাখার বার্তা দেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ না রাখা নিশ্চিত করতে বলেন। স্বাস্থ্য সচিবকে তিন জনের একটি ‘মনিটরিং কমিটি’ তৈরি করে বন্যা-পরবর্তী স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নজর দিতে বলেন। বন্য-দুর্গত এলাকায় সুষ্ঠু ভাবে জল সরবরাহ সুষ্ঠু ভাবে করতে জোর দেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে। রাস্তা কেটে পাইপ বসানোর পরে তা সংস্কার হয় না বলে অভিযোগ ওঠে নানা জায়গায়। মুখ্যমন্ত্রী তা সংস্কার করা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার সমীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন পূর্ত দফতরকে।

অতিবৃষ্টি, বন্যায় অনেক মাটির বাড়ি ভেঙেছে। সেগুলি তৈরি করে দেওয়ার আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পরামর্শ, ডিসেম্বরে ‘বাংলা আবাস যোজনা’ থেকে ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরি হবে। তালিকায় যাঁদের নাম আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আর যাঁদের নাম নেই তাঁদের নাম তালিকায় ঢোকানো হবে। পরে সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন, “যাঁদের মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে, অথচ তালিকায় নাম নেই, সেগুলো সমীক্ষা করে দেখা হবে। আমরা গত ১৩ বছরে ৫০ লক্ষ পাকা বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। এখনও ৫০ লক্ষর মতো বাকি আছে। যেগুলো একেবারে নষ্ট বা অর্ধেক নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সেগুলোর তালিকা করতে বলা হয়েছে। হয়তো অনেক বাড়ি ১১ লক্ষের তালিকায় আছে। যেটা নেই সেটা আমরা চেষ্টা করব যতটা সম্ভব দেখে দেওয়ার।” বাড়ি না হওয়া পর্যন্ত তিনটে করে ত্রিপল দিয়ে সাহায্য করতে বলেন তিনি।

সাংসদ-বিধায়কদের তিনি বলেন, “আপনাদের তহবিল থেকে গ্রামীণ রাস্তা সংস্কারে সাহায্য করা গেলে ভাল হয়।” ভেঙে পড়া বাড়ির মালিকদের সাহায্য করা ও গ্রামীণ রাস্তা, বাড়ি সংস্কারে জোর দিতে জেলা পরিষদকে এগোতে বলেন তিনি।

বন্যায় জেলার ১৪২টি পঞ্চায়েতের ৯৬২টি মৌজায় ৫০৯৮৭ হেক্টর জমি ডুবে গিয়েছিল। নষ্ট হয় ৩৫৯৫ হেক্টর জমির আনাজ। সব মিলিয়ে ১,৮৭,২৭৭ জন চাষির ক্ষতির মুখে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বন্যার জল নেমে গেলে বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, দুই ২৪ পরগণা ও যে জেলায় শস্য নষ্ট হয়েছে, ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে, তাঁদের জমি মেপে নিয়ে যাতে শস্যবিমার টাকা পান, তা দেখতে হবে। চাষি ভাই-বোনদের চিন্তা করতে বারণ করব।” ধান কেনা যেন সচল থাকে, গাফিলতি না হয়, তা নিয়েও সতর্ক করেন তিনি।

আরও পড়ুন
Advertisement