Flats at Bardhaman

বিনিয়োগের উপায় হিসাবে ভরসা ফ্ল্যাটে

মূলত ওই তিন ধরনের ক্রেতারাই দামি ফ্ল্যাট কিনে রাখার দিকে ঝুঁকছেন। বর্ধমানের সঙ্গে কলকাতা বা ঝাড়খণ্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল।

Advertisement
সৌমেন দত্ত
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:৫৭
বর্ধমানে আবাসন। নিজস্ব চিত্র

বর্ধমানে আবাসন। নিজস্ব চিত্র

ছেলেমেয়েরা বাইরে। বিশাল বাড়িতে একা থাকা, বাড়ির দেখভাল নিয়ে মুশকিলে পড়ছেন বহু বৃদ্ধ, বৃদ্ধা। মুশকিল আসান বড় আবাসনে খোলামেলা বড় ফ্ল্যাট। আর্থিক ভাবে সম্পন্ন একা থাকতে চাওয়া বহু মহিলাও নিজের মতো করে বাঁচতে বেছে নিচ্ছিন ফ্ল্যাট। আর মোটা টাকা রোজগার করে ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করার প্রবণতা তো রয়েছেই। এই সব কারণেই কলকাতার পরে দক্ষিণবঙ্গে বর্ধমানে দামি আবাসনে বড় ফ্ল্যাটের চাহিদা বাড়ছে বলে দাবি করেছেন বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থার বাজার-সমীক্ষকেরা।

Advertisement

তাঁদের দাবি, মূলত ওই তিন ধরনের ক্রেতারাই দামি ফ্ল্যাট কিনে রাখার দিকে ঝুঁকছেন। বর্ধমানের সঙ্গে কলকাতা বা ঝাড়খণ্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। সেই কারণে ঝাড়খণ্ডের অনেক ব্যবসায়ীও কলকাতার পাশ্ববর্তী এলাকা ছেড়ে বর্ধমানে ফ্ল্যাট কিনে রাখছেন। বিবেকানন্দ কলেজ মোড়ের কাছে একটি আবাসনে ফ্ল্যাট কেনা, ঝাড়খণ্ডের এক ব্যবসায়ীর দাবি, “আমাদের বিভিন্ন কাজে নবান্ন, বড়বাজার কিংবা ধর্মতলা এলাকায় যেতে হয়। বর্তমানে কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনতে গেলে নিউটাউন, কালিকাপুর নাহলে গড়িয়া পার করে কিনতে হয়। তার চেয়ে বর্ধমানে কেনা ভাল। এক-দেড় ঘণ্টায় কলকাতা পৌঁছে যাব। আবার আড়াই ঘণ্টার মধ্যে বর্ধমান থেকে ধানবাদে যেতে পারব।’’ তাঁর মতো অনেকেই বর্ধমানে ফ্ল্যাট কিনে রাখছেন বলে জানান তিনি।

বোরহাটের এক বৃদ্ধ দম্পতি ছ’কাঠা জমির উপরে বড় বাড়িতে থাকতেন। ছেলে-মেয়েরা ভিন্ রাজ্যে থাকেন। বাড়িতে একা থাকতে নানা অসুবিধায় পড়া ওই দম্পতি মোটা টাকায় বাড়িটি বিক্রি করে দেন। এখন থাকেন তিন কামরার বড় ফ্ল্যাটে। আর্থিক উপদেষ্টাদের দাবি, ফ্ল্যাট মানেই দেশলাইয়ের খোপ, এই ধারণা থেকে নির্মাণকারীরা বেরিয়ে এসেছেন। ফ্ল্যাটের চারদিক যতটা সম্ভব খোলামেলা রাখা, বয়স্কদের নিরাপত্তা, শিশুদের কথা ভেবে আবাসন তৈরি করা হচ্ছে। সেই কারণে বোরহাটের ওই দম্পতির মতো অনেকেই দীর্ঘদিনের ‘সঙ্গী’ বাড়ি বিক্রি করে নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কথা ভেবে ফ্ল্যাটে উঠে আসছেন। এক এজেন্টের দাবি, সারা দিন একা থাকাটা যন্ত্রণার। নিরাপত্তারও অভাব রয়েছে। দেড়-দু’কোটি টাকায় বাড়ি বিক্রি করে আবাসনে এসে অনেকেই নিরাপদ মনে করেছেন। আবাসনের নীচে হাঁটাচলা, দু’চার জনের সঙ্গে মেলামেশারও সুযোগ থাকছে।

আবার বাসস্থানের পাশাপাশি বিনিয়োগের জায়গা হিসাবেও চাহিদা বাড়ায় ফ্ল্যাটের দাম বাড়ছে হুড়মুড়িয়ে। কয়েক বছর আগেও কলকাতায় ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ হত। করোনার পরে বর্ধমানের মতো মাঝারি শহরেও ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। বাজার-সমীক্ষক বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, “করোনার সময় শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা কমিয়ে দিয়েছিলেন বিভিন্ন স্তরের বেতনভুক কর্মচারীরা। তাঁরাই এখন ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করছেন।” সমীক্ষকদলের দাবি, ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করে কার্যত এক ঢিলে দু’টি পাখি মারছেন চাকুরিজীবীরা। এক, জমানো টাকা বিনিয়োগ করায় আয়কর দিতে হচ্ছে না। আবার গৃহঋণ নেওয়ায় বেতনের টাকা থেকে আয়কর কাটছে না। দুই, বিনিয়োগ করার বছর দেড়-দুয়েকের মধ্যেই ফের ফ্ল্যাট বিক্রি করে অন্তত ২০-৩০% বাড়তি টাকা পাওয়ার সুযোগ থাকছে।

বর্ধমান আদালতের আইনজীবী রাজদীপ গোস্বামী বলেন, “প্রভিডেন্ড ফান্ড (পিএফ) দিয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা দামি আবাসনে ফ্ল্যাট কিনছেন, সেটা রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে জানতে পারছি। তেমনই বেশির ভাগ ফ্ল্যাটের ক্রেতা চাকুরিজীবীরাও।” এ ছাড়াও বিভিন্ন স্কুল-সহ নানা কাজের জায়গায় মহিলাদের সংখ্যা বাড়ছে। বর্ধমান শহরে বাড়ি ভাড়াও তুলনামূলক বেশি। সেই কারণে ওই সব মহিলারা গৃহঋণ নিয়ে ‘স্টাডি রুম’-সহ ফ্ল্যাট কেনার দিকে ঝুঁকেছেন। বিপ্রদাসের কথায়, “করোনার পর থেকে স্টাডি রুম বা একান্তে কাজ করার একটা পরিসরের চাহিদা বেড়ে গিয়েছে।” (শেষ)

Advertisement
আরও পড়ুন