Sand Mining

বালি তোলায় জলের সঙ্কট, ব্যবস্থার দাবি

জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে জলের চাহিদা মেটায় এই দুই নদ। এখান থেকে জল তুলে তা পরিশোধন করে জেলার আটটি ব্লক ও দু’টি পুরসভা এলাকায় সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে পিএইচই এবং পুরসভা।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৪ ০৮:০৪
দামোদরে বালি চুরি।

দামোদরে বালি চুরি। —ফাইল চিত্র।

দামোদর ও অজয় থেকে যথেচ্ছ বালি তোলায় সঙ্কটে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের (পিএইচই) পাম্পগুলি। তার ফলে জলের আকাল তৈরি হচ্ছে জেলা জুড়ে। জেলা প্রশাসনের কাছে এমনই অভিযোগ জানিয়ে অবৈজ্ঞানিক ভাবে বালি তোলা বন্ধে ব্যবস্থার আর্জি জানিয়েছে পিএইচই। পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস পুন্নমবলম জানান, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। বিজেপির দাবি, তৃণমূলের মদতে বালি মাফিয়ারা এই কাজ করছে। এমনকি, আসানসোল পুরসভাও এ বিষয়ে পদক্ষেপের আবেদন করেছে বলে দাবি বিজেপির। যদিও পুর কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছেন।

Advertisement

পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুই দিক দিয়ে বয়ে গিয়েছে অজয় ও দামোদর নদ। জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে জলের চাহিদা মেটায় এই দুই নদ। এখান থেকে জল তুলে তা পরিশোধন করে জেলার আটটি ব্লক ও দু’টি পুরসভা এলাকায় সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে পিএইচই এবং পুরসভা। গ্রীষ্মের শুরু থেকে পশ্চিম বর্ধমানের নানা প্রান্তে জলের সঙ্কট তৈরি হয়। কিন্তু এ বছর তা যেন লাগামছাড়া হয়েছে বলে অভিযোগ। পিএইচই কর্তৃপক্ষের দাবি, দিনরাত এক করেও জেলায় পর্যাপ্ত জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, দামোদর ও অজয়ের বিভিন্ন প্রান্তের বালি ঘাটগুলিতে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে বালি তোলা হচ্ছে। ফলে, নদীবক্ষে পাম্প হাউসগুলির ‘ইনফিলট্রেশন গ্যালারি’ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পর্যাপ্ত জল তোলা সম্ভব হচ্ছে না। উচ্চ ও ভূগর্ভস্থ জালাধারগুলি পূর্ণ হচ্ছে না। এলাকাতেও সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

পিএইচই-র কার্যনির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার রূপম ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা এই সমস্যা ও সঙ্কটের কথা জেলাশাসককে জানিয়ে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে বালি খনন রোখার আবেদন করেছি।’’ তিনি জানান, দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা দামোদর ও অজয়ের দু’পারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পর্যবেক্ষণ করে প্রায় এক ডজন এমন অঞ্চল চিহ্নিত করেছেন যেখানে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে বালি তোলা হচ্ছে। চিহ্নিত হওয়া জায়গাগুলি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

জেলাশাসক বলেন, ‘‘আমরা জানার পরেই প্রশাসনিক স্তরে তৎপরতা শুরু করেছি। দু’বার এলাকায় ঘুরে তদন্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত হওয়া অঞ্চলগুলি পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্তর্গত নয় বলে মনে হয়েছে। সেই সব অঞ্চল বাঁকুড়া জেলার অধীনে রয়েছে। প্রশাসনিক ভাবে ওই জেলার সঙ্গে আলোচনা চলছে।’’ বালি খনন কী ভাবে চলছে, সেই প্রশ্নে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলাশাসক। তবে প্রশাসনেক এক কর্তার দাবি, অজয় ও দামোদরে বহু অবৈধ বালিঘাটও রয়েছে। সেগুলির দৌরাত্ম্যও এমন পরিস্থিতির কারণ।

এই ঘটনার নেপথ্যে অবৈধ বালি মাফিয়াদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির। তাঁর দাবি, ‘‘বরাকর থেকে কাঁকসা পর্যন্ত যথেচ্ছ হারে অবৈধ বালিঘাট তৈরি করে বালি তুলছে এক দল মাফিয়া। এরা তৃণমূলের ছায়ায় থেকে অপকর্ম চালাচ্ছে। ফল ভুগছেন জেলার বাসিন্দারা।’’ তাঁর অভিযোগ, রাতে ট্রাক, ট্র্যাক্টর ও ডাম্পারে বালি বোঝাই করে ছোট-বড় রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় পাচার করা হচ্ছে। রাস্তা বেহাল হচ্ছে। বালির ট্রাকের বেপরোয়া গতির জন্য দুর্ঘটনাও ঘটছে। সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে জিতেন্দ্রর দাবি, অবৈধ বালি তোলার জন্য যে জলের সঙ্কট তৈরি হচ্ছে, তা স্বীকার করে আসানসোল পুর কর্তৃপক্ষও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।

আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায় অবশ্য তা মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘জল শুকিয়ে যাওয়ায় সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ডিভিসি জল ছাড়লেই জল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।’’ বালি খননের সঙ্গে দলের যোগ নেই দাবি করে তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অবৈধ কাজ দল প্রশ্রয় দেয় না। প্রশাসন তদন্ত করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন