এই ধরনের খবরের ক্ষেত্রে আসল ছবি প্রকাশে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকে। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
মাস পাঁচেক আগে বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়েছে। তার পর থেকেই মনমরা ছিল বছর সতেরোর তরুণী। থাকতেন মায়ের কাছে। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া থানার দাঁইহাটের সেই বাড়ি থেকেই তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করল পরিবার। এই ঘটনায় শোরগোল পাড়ায়। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ তরুণ চক্রবর্তী এবং তনুকা চক্রবর্তী। প্রতিবেশী এবং ঘনিষ্ঠদের দাবি, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেননি দ্বাদশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্রীটি। বেশ কিছু দিন ধরে তিনি অবসাদে ভুগছিলেন। সেখান থেকেই আত্মহত্যা না কি মৃত্যুর নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তার উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, দাঁইহাট গার্লস হাই স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন তৃষিকা চক্রবর্তী। পড়াশোনায় ছোট থেকেই ভাল। নাচ-গান, আবৃত্তিতে যথেষ্ট পারদর্শী। ওই সমস্ত বিষয়ে নানা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থানাধিকারী মেয়েটিকে পাড়ার সকলেই ভালবাসতেন, স্নেহ করতেন। সোমবার সন্ধ্যায় তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পর চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। জানা যাচ্ছে, সোমবার সন্ধ্যায় একটি ঘর থেকে তৃষিকাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন পরিবারের সদস্য এবং প্রতিবেশীরা। ছাত্রীটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসক জানান, তিনি মৃত।
তৃষিকার বাবা তরুণ প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন। মা তনুকা গৃহবধূ। স্বামীর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের পর দাঁইহাটের বকুলতলায় বাপের বাড়িতে থাকতেন তনুকা। মেয়ে থাকতেন তাঁর কাছে। মেয়ের মৃত্যুর জন্য প্রাক্তন স্ত্রীকে দায়ী করেছেন তরুণ। তাঁর অভিযোগ, মায়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছেন মেয়ে। তরুণ বলেন, ‘‘তখন করোনা পরিস্থিতি। ওই সময় থেকে স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য শুরু হয়। নিজের ওজন কমানোর জন্য একটি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাকেন্দ্রে যাতায়াত করতেন তনুকা। সেখানেই এক জনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন।’’ যদিও তনুকার কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ওই নিয়ে তরুণ-তনুকার দাম্পত্য কলহ চলতে থাকে বেশ কিছু দিন। শেষে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন তাঁরা। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে আদালতে আবেদন ডিভোর্সের আবেদন করেন তরুণ। চলতি বছরের ৪ জুন দু’জনের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তবে বাবা-মা দু’জনের সঙ্গেই মেয়ের ভাল সম্পর্ক ছিল বলে দাবি করেছেন ঘনিষ্ঠেরা। তাঁদের দাবি, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ মেনে নিতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছেন তৃষিকা। মৃতার বাবা জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যায় পরিচিত এক জনের ফোন পেয়ে তিনি কাটোয়া হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানে মেয়ের মৃতদেহ দেখতে পান। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, তরুণীর মৃত্যু নিয়ে এখনও পর্যন্ত কেউ কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি। স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তদন্ত করছে তারা।