সুকান্ত মজুমদার। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে প্রশাসনের সমালোচনা করছিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। কিন্তু সেই বৈঠক ‘বুমেরাং’ হয়ে ফিরে এল বিজেপির দিকেই। কারণ, সুকান্তের পাশে বসেছিলেন বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘড়ুই। যাঁর ভাইপো ধর্ষণে অভিযুক্ত এবং এখনও অধরা।
সে প্রসঙ্গ টেনে এনে লক্ষ্মণকে নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। গত বিধানসভা ভোটে দুর্গাপুর পূর্বের বিজেপি প্রার্থী কিন্তু আপাতত বিজেপির সংসর্গ থেকে দূরে থাকা দীপ্তাংশু চৌধুরী টুইট করে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। সুকান্তের নাম করে তিনি লিখেছেন, ‘যিনি ধর্ষণে অভিযুক্ত ভাইপোকে আইন থেকে আড়াল করছেন, আগে তাদের সামলান। তারপর সাংবাদিক বৈঠক করবেন।’
বিজেপির রাজ্য নেতা তথা বিধায়ক লক্ষ্মণের ভাইপো সহদেব ঘড়ুইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। দু’বছরের পুরনো সেই মামলায় এখনও ধরা পড়েননি সহদেব। যার কারণ হিসেবে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীর প্রভাব খাটানোর ইঙ্গিত করেছেন প্রাক্তন বিজেপি প্রার্থী দীপ্তাংশু। ঘটনাচক্রে, ঠিক এই সময়েই দুর্গাপুর শহর ছেয়ে গিয়েছে ওই ঘটনা সংক্রান্ত অজস্র পোস্টারে। যার মূল দাবি— সহদেবের শাস্তি চাই। ধর্ষককে প্রাপ্য শাস্তি দিতে হবে।
.@DrSukantaBJP যাকে পাশে বসিয়ে আজ বিভিন্ন ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে আপনি প্রেস করছেন,এই দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুইয়ের ভাইপো ধর্ষণে অভিযুক্ত। অভিযুক্ত আজও অধরা lপ্রথমে নিজের দলের বিধায়ক কাকা, যিনি ধর্ষণ অভিযুক্ত ভাইপো কে আড়াল করছে, তাদের সামলান, তারপর প্রেস করবেন। pic.twitter.com/RIVXOVDXU9
— Diptangshu Chaudhury (@ColDiptangshu) April 19, 2022
মঙ্গলবারের সাংবাদিক বৈঠক নিয়ে বিতর্কের পর এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণকে। তিনি অবশ্য বিতর্ক উড়িয়ে বলেছেন, ‘‘শুধু ধর্ষণের মামলা কেন, যে কোনও মামলারই আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমার ভাইপো হোক, আমার ছেলে হোক, আমার দলের লোক হোক— যে দোষ করবে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতেই হবে প্রশাসনকে।’’ তবে একই সঙ্গে এই দাবির নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত থাকার অভিযোগও করেছেন বিজেপি বিধায়ক। তাঁর মতে, ‘‘দু’বছরের পুরনো মামলা। আর এখন হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে পোস্টারিং করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হল, সামনে দুর্গাপুর পুরসভা ভোট। বিরোধীরা এই দিয়ে সেখানে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চায়।’’
মঙ্গলবারের বৈঠকের পর দীপ্তাংশু টুইটারে বিজেপির রাজ্য সভাপতির নাম করে যে পোস্ট করেছিলেন, তাতে লেখা ছিল, ‘যাকে পাশে বসিয়ে আজ বিভিন্ন ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে আপনি প্রেস (প্রেস কনফারেন্স) করছেন, এই দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুইয়ের ভাইপো ধর্ষণে অভিযুক্ত। অভিযুক্ত আজও অধরা l কারণ তাঁর কাকা বিজেপির বিধায়ক, যিনি ধর্ষণে অভিযুক্ত ভাইপোকে আড়াল করছেন।’ এর জবাবে লক্ষ্মণ বলেন, ‘‘আমি প্রশাসনকে বলব আইনত সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিন। কেউ বলতে পারবে না, আমি এই ঘটনাটায় কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করছি। আইন আইনের পথে চলবে। বিজেপির কোনও নেতার ক্ষমতা নেই কাউকে আড়াল করার। সামনে পুরসভা ভোট বলেই এই ধরনের অপপ্রচার করা হচ্ছে।’’
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে আসানসোলের জেলা বিজেপি সভাপতি দিলীপ দে বলেন, দীপ্তাংশু চৌধুরী আদৌ বিজেপিতে রয়েছেন কি না, তা তিনি জানেন না। তাঁর সঙ্গে বিজেপির আর কোনও যোগাযোগও নেই।