জন্মস্থানে অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র।
তাঁর হাত ধরে সবাক হয়েছিল নির্বাক চলচ্চিত্র। এ দেশের সিনেমায় কৃত্রিম আলোর ব্যবহার এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজ়িক আসে তাঁর হাত ধরে। সিনেমা জগতে স্বীয় অবদানের জন্য পেয়েছিলেন পদ্মশ্রী, সঙ্গীত নাট্য অ্যাকাডেমির মতো একাধিক পুরস্কার। তবে নিজের জন্মভূমিতেই এত দিন উপেক্ষিত, আড়ালে ছিলেন আধুনিক সিনেমার রূপকার দেবকী বসু। সোমবার তাঁর জন্মদিনে কালনা ২ ব্লকের অকালপৌষে জন্মভিটের পাশে বসল তাঁর একটি আবক্ষ মূর্তি।
দাদুর মূর্তি উন্মোচনের অনুষ্ঠানে এসে আনন্দিত চিত্র প্রযোজক দেবাশিস বসু। তিনি জানান, এখানে পারিবারিক শিকড় রয়েছে। এখানে বড় হয়েই দাদু বিখ্যাত হন। দাদুর ভিটেকে সাজিয়ে একটি সংগ্রহশালা তৈরির আশ্বাস দেন তিনি।
দেবকীর পৈতৃক বাসভূমি মন্তেশ্বর ব্লকের কাইগ্রামে। তবে তাঁর জন্মের আগে তাঁর বাবা চলে আসেন শ্বশুরবাড়ি কালনার অকালপৌষ গ্রামে। এই গ্রামে ১৮৯৮ সালে ২৫ নভেম্বর তাঁর জন্ম হয়। পাঠশালায় পড়া, শৈশব, কৈশোর কাটে এখানেই। পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাষায় তিনি ৩৬টি সিনেমা করেন। যার মধ্যে ২৪টি ছিল বাংলা। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নজরুল ইসলামকে নিয়ে কাজ করেছেন। একটি ছবিতে নজরুলের লেখা একটি স্ক্রিপ্টও ব্যবহার করেন। দেবকী মারা যান ১৯৭১ সালে ১৭ নভেম্বর। তাঁর ছেলে দেবকুমার বসু অসম এবং মণিপুরের বেশ কিছু ছবি তৈরি করে দাগ কাটেন। তিনিও পান জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার। সম্প্রতি তাঁর মৃত্যু হয়।
অকালপৌষ গ্রামে এখনও রয়েছে দেবকীর ভাঙাচোরা জন্মভিটে। গাছগাছালিতে ঢাকা বাড়িটি নষ্ট হতে বসেছে। ভিটের আশপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু বাড়ি ঘর। কিন্তু গ্রামের তরুণ প্রজন্মের অনেকেই তাঁকে চেনেন না। সম্প্রতি দেবকীকে নিয়ে বই লেখেন কালনা শহরের লেখক পুলক মণ্ডল। অনেক অজানা তথ্য, তাঁর বিভিন্ন সিনেমার পোস্টার রয়েছে বইটিতে। কালনা ২ ব্লকে তৈরি হয় দেবকী বসুর স্মৃতি রক্ষা কমিটি। এই কমিটি সম্পাদক প্রণব রায় কৃষ্ণনগর থেকে দেবকীর মূর্তি তৈরি করান। ঠিক হয়, জন্মভিটের পাশেই উদ্বোধন করা হবে মূর্তিটি।
রবিবার থেকেই নানা অনুষ্ঠান শুরু হয়। সোমবার আসেন দেবাশিস। তিনি বলেন, ‘‘দাদুকে যে গ্রামের মানুষ এখনও মনে রেখেছেন, তাতে আমরা আপ্লূত। কথা দিচ্ছি, ভিটে সংস্কার করে সংগ্রহশালা গড়ব। পর্যটকেরা এসেও দাদুর কথা জানতে পারবেন। গ্রামে সিনেমার শ্যুটিং করার ভাবনাও রয়েছে।’’ তাঁর সঙ্গে অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন অভিনেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, দেবকী বসুকে বাংলা চলচ্চিত্রের জনক বলা হয়। তাঁর সৃষ্টি ভোলার নয়।