বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়েছিল রাস্তা। নিজস্ব চিত্র Stock Photographer
পাঁচ বছরে যেমন সরকার বদলে যায়, তেমনই যেন বদলে গিয়েছে গ্রাম।
রোগের ভয়ে একসময় রাস্তায় বেড়া দিয়ে ঘিরে নিজেদের একঘরে করে নিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। এখন বাঁধা খুলেছে। স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনও হয়ে উঠেছেন তাঁরা।
গলসি ২ ব্লকের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে ঢোকার প্রধান রাস্তা দু’টি। একটা খানোপুল থেকে খানো হয়ে গ্রামের পূর্ব পাড়া দিয়ে, অন্যটি গলসি স্টেশন রোড ধরে বাহিরঘন্ন্যা গ্রাম হয়ে পশ্চিম পাড়া দিয়ে। ২০২০ সালে মার্চের শেষে, প্রথম লকডাউনের দিন এই দুই রাস্তায় আড়াআড়ি ভাবে বাঁশ রেখে বেড়া দিয়েছিলেন বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি ছিল, বাইরের কেউ গ্রামে ঢুকলে সংক্রমণ ঢোকার সম্ভাবনা থাকবে। বাড়বে ঝুঁকি। স্বরূপ ঘোষ, শ্রীমন্ত দত্ত, সজল মণ্ডল, নিমাই মালদের মতো একাধিক যুবক দিনরাত জেগে পাহারা দেওয়া শুরু করেছিলেন। শুধু পথ আটকানো নয়, কাজের সূত্রে ভিন্ রাজ্যে থাকা লোকজনও যাতে না জানিয়ে গ্রামে ঢুকে পড়তে না পারেন, সেই ব্যবস্থাও করা হয়।
স্বরূপ, শ্রীমন্তরা বলেন, ‘‘তখন চারিদিকের খবর শুনে আতঙ্কে রাস্তা আটকেছিলাম। যাতে গ্রামের মানুষেরা বাইরে না যান, আবার বহিরাগত কেউ গ্রামে না ঢুকে পড়ে। সংক্রমণের ভয় প্রাণভয়ে পৌঁছে গিয়েছিল।’’ তবে এখন দিন বদলেছে। গ্রামে যে ছ’জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁরা সুস্থ আছেন। গ্রামে একটি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র হয়েছে। পাঁচ বছরে শৌচাগার ব্যবহার, প্রয়োজনে মাস্ক পরা, হাত ধুয়ে খাওয়ার মতো অভ্যাস তৈরি হয়ে গিয়েছে।
গ্রামের পূর্ব পাড়ায় মাচায় বসে গল্প করছিলে প্রৌঢ় সুষেন মণ্ডল, সমীরকুমার পালেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘ওই সব দিনের কথা আর মনে করতে চাই না। বাঁচার জন্য গ্রামের রাস্তা বন্ধ করতে হয়েছিল। বাইরে বেরোতে ভয় লাগত।’’ বধূ অর্পণা দত্ত বলেন, ‘‘ভয়ে উঠোন পার করতে পারতাম না। সব ঠিক হয়ে গিয়েছে এই অনেক।’’ সেই সময় করোনা ভ্যাকসিন নিতে লম্বা লাইন, রাতজাগার কথাও মনে পড়ে যায় অনেকের। শ্রীকান্ত মণ্ডল সুরেন্দ্রনাথ দত্তরা বলেন, ‘‘ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে সারা রাত কুরকুবা পঞ্চায়েতে কাটিয়েছি। সেই দিনের কথা মনে পড়লে আজও আঁতকে উঠি।’’
সেই সময় গ্রামের দু’টি রাস্তায় মোরামের ছিল। এখন সেখানে পিচের প্রলেপ পড়েছে। নলবাহিত জল এসেছে। বহু নিকাশি নালা পাকা হয়েছে। পথবাতি বসেছে প্রতিটি পাড়ায়। দুটো উচ্চ বাতিস্তম্ভও রয়েছে। পাকা বাড়ি, সাবমার্সিবল পাম্পে সেচের জল, পরিষ্কার রাস্তাঘাট দেখলে বোঝা যায় না, কয়েক বছর আগে মৃত্যুভয়ের সঙ্গে যুঝছিল এই গ্রাম।