—নিজস্ব চিত্র।
আট বছরের পুরনো তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনার মামলায় অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা আদালতের বিচারক। এর পর সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়ার পথে অসুস্থতা বোধ করেন বর্ধমান-১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারপার্সন কাকলি গুপ্ত, ব্লকের যুব সভাপতি মানস ভট্টাচার্য, পঞ্চায়েত প্রধান কার্তিক বাগ এবং রায়ান-১ অঞ্চলের সভাপতি সেখ জামাল। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে। বুকে তীব্র ব্যথা ও ইসিজি রির্পোটে সমস্যা থাকায় সেখান থেকে কাকলিকে স্থানান্তর করা হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজেরই অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে।
জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বরে পূর্ব বর্ধমানের নাড়িগ্রাম দাসপাড়ায় তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় আহত হন তৎকালীন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য জীবন পাল। ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ ৬ সেপ্টেম্বর জীবনের স্ত্রী সন্ধ্যারানি পাল বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ ছিল, শাসকদলের ক্ষমতাসীন নেতারা জীবনকে বেধড়ক মারধর করেন। এমন কি, জীবনের বাবা দেবু পালের উপরও হামলা হয়। হামলায় তাঁর চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খুনের চেষ্টা, মারধর-সহ একাধিক ধারায় মামলা হয় কাকলি গুপ্ত-সহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে। এই মামলা এত দিন ধরে আদালতে বিচারাধীন ছিল। সোমবার ফাস্টট্রাক সেকেণ্ড কোর্ট বিচারক অরবিন্দ মিশ্র এই মামলায় ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং জেল হেফাজতে পাঠিয়ে মঙ্গলবার রায় দেওয়া হবে বলে জানান বিচারক। বাকি দু'জন বেকসুর খালাস হন। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে কাকলি গুপ্ত, মানস ভট্টাচার্য, অঞ্চল সভাপতি শেখ জামাল, রায়ান গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কার্তিক বাগ-সহ আরও তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা। এই রায়ে তৃণমূল শিবিরে আলোড়ন পড়ে যায়। বিধায়ক-সহ দলের বাকি নেতা, কর্মীরা আদালতের সামলে চলে আসেন। সরকারি আইনজীবী হরিদাস মুখোপাধ্যায় জানান, বিচারক এদের হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর পরেই কাকলি-সহ ১৩ জনকে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে পুলিশ। যাওয়ার পথে গাড়িতেই অসুস্থতাবোধ করেন কাকলি-সহ বাকি তিন জন। তাঁদের তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।বর্ধমান মেডিক্যালের অধ্যক্ষ মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বুকে ব্যথা নিয়ে কাকলি এসেছেন। ইসিজিতে কিছু সমস্যা আছে। তাঁকে অনাময়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পরীক্ষানীরিক্ষা করার জন্য। এ ছাড়াও বাকি তিন জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
অন্য দিকে, অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দাস ও কমল দত্ত জানান, এই মামলায় কোনও তেমন সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই। তবুও কী ভাবে এই রায় হল তা আশ্চর্যের। এই রায়ে তাঁরা অবাক। মঙ্গলবার বিচারকের সাজা ঘোষণার পর তাঁরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “আদালতের বিষয় না জেনে কিছু বলা সম্ভব নয়।” বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, “দলীয় কোণন্দল কোন জায়গায় গিয়েছে এটা তার প্রমাণ।”