— প্রতীকী চিত্র।
পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এবং জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার নির্দেশেই এ রাজ্যে এসেছিল ক্যানিং থেকে ধৃত জঙ্গি জাভেদ মুন্সী। পাকিস্তানে বসে থাকা হ্যান্ডলারেরা তাকে এ রাজ্যে আসার নির্দেশ দিয়েছিল। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বাংলাদেশের সঙ্গে এ-পার বাংলার সীমান্ত পারাপার করার বিষয়ে তারা খোঁজখবর নিতে বলেছিল ধৃত জাভেদকে। এর সঙ্গেই সীমান্ত পারাপার করার বিষয়ে বাংলাদেশে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে সমন্বয় গড়ে তোলার জন্যও পাকিস্তানে বসে থাকা হ্যান্ডলারেরা নির্দেশ দিয়েছিল ওই জঙ্গিকে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পূর্বের সীমান্ত ব্যবহার করতে চাইছে জম্মু-কাশ্মীরের জঙ্গি সংগঠনগুলি। তারই খোঁজখবর এবং সমন্বয় বৃদ্ধির জন্য ক্যানিংকে বেছে নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি গোয়েন্দাদের।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ধৃত জাভেদের কাছ থেকে দু’টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। যাতে বেশ কিছু ‘এনক্রিপ্টেড অ্যাপ্লিকেশন’-এর সন্ধান মিলেছে। যার মাধ্যমে জাভেদ পাকিস্তানি হ্যান্ডলার এবং লস্কর-ই-তইবার অপারেটিভদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। এক তদন্তকারী জানান, ক্যানিংয়ের বাড়ি থেকে বেশ কিছু চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। যাতে কয়েকটি ইমেল আইডির সন্ধান যেমন রয়েছে, তেমনই সাঙ্কেতিক ভাষায় কিছু লেখা রয়েছে।যা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। ওই হাতের লেখা জাভেদের। তবে জেরার মুখেও জাভেদ তা নিয়ে কিছু বলতে চায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
শনিবার রাতে ক্যানিংয়ের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে জাভেদকে গ্রেফতার করে এ রাজ্যের এসটিএফ। পরে তাকে তুলে দেওয়া হয় জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের শাহিদগঞ্জ থানার হাতে। আদালত ওই জঙ্গিকে ন’দিনের ট্রানজ়িট রিমান্ডে সে রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সেই মোতাবেক সোমবার সকালে তাকে নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর উড়ে গিয়েছে সে রাজ্যের তদন্তকারী দল।
গোয়েন্দাদের দাবি, পাকিস্তানে বসে থাকা হ্যান্ডলারদের নির্দেশ মোতাবেক বাংলাদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্য এ রাজ্যে এসেছিল ওই জঙ্গি। কিন্তু তার যাত্রাপথ জেনে যান তদন্তকারীরারা। সেই মতো তাকে অনুসরণ করে তদন্তকারীরা ক্যানিং পৌঁছে জাভেদকে গ্রেফতার করেন। এক তদন্তকারী কর্তা জানান, ওই জঙ্গি এ রাজ্যে আসার বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে না চাইলেও সে জানিয়েছে, নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে জম্মু-কাশ্মীরে খুঁজছিল। তাই সে এখানে পালিয়ে এসেছিল। এর আগেও সে এখানে এসে থেকেছে। ফলে তার এটা পুরনো জায়গা বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত জাভেদের জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে জড়িত থাকার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সারা দেশে ছ’টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে দু’টি খুনের মামলা। একটি মামলা থেকে অবশ্য বেকসুর খালাস হয়েছে সে। ওই জঙ্গি বাংলাদেশ নেপাল এবং পাকিস্তানে একাধিক বার গিয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, নব্বইয়ের দশকে পাক অধিকৃত জম্মু এবং কাশ্মীরের মুজফ্ফরাবাদে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল জাভেদ। ওই সময়ে সে তেহরিক-ই-মুজাহিদিনের জেলা কমান্ডার ছিল। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই সময়ে তার নেতৃত্বে নিরাপত্তা রক্ষীদের উপরে একাধিক হামলার ঘটনা ঘটে। যার থেকে বাঁচতে প্রথমে পাকিস্তানে চলে যায় সে। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ১৯৯৯ সালে দিল্লিতে প্রায় দু’কিলোগ্রাম আরডিএক্স নিয়ে গ্রেফতার হয়েছিল জাভেদ।