ED Attacked in Sandeshkhali

‘ইডির কাউকে ছাড়া যাবে না’

শুক্রবার শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে তাঁদের উপরে যে ভয়াবহ আক্রমণ নেমে আসে, ফোনে তারই বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁপে উঠছিল এক ইডি অফিসারের গলা।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৩৭
sandeshkhali

সন্দেশখালিতে বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইটে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি। —ফাইল চিত্র।

ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক সাড়ে সাতটা। ইডির ৬ জন অফিসার ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর কয়েক জন জওয়ান উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়ির দরজায় পৌঁছে তাঁর নাম ধরে বেশ কয়েক বার ডাকাডাকি করেন। তখনও বাড়ির আশেপাশে তেমন কোনও লোকজন ছিল না।

Advertisement

শুক্রবার শেখ শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে তাঁদের উপরে যে ভয়াবহ আক্রমণ নেমে আসে, ফোনে তারই বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁপে উঠছিল এক ইডি অফিসারের গলা। বললেন, ‘‘আমরা চাকরি করি। দেখবেন কোনও ভাবে যেন আমাদের নাম প্রকাশ না পায়।’’

তাঁর কথায়, ‘‘কোলাপসিবল গেটের কাছে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারছিলাম, বাড়ির ভিতরে লোকজন আছে। এমনকি ভিতরে কেউ ফোনেও কথা বলছিলেন বলে মনে হয়েছিল। এ ভাবে প্রায় এক ঘণ্টা কেটে যায়। শেষে আমাদের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা কোলাপসিবল গেটের তালা ভাঙার চেষ্টা করতেই আশেপাশের গলি ও ছোট রাস্তা থেকে আচমকাই একের পর এক মহিলা ও পুরুষ বেরিয়ে আসতে থাকেন। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওঁরা আমাদের ঘিরে ফেলেন।’’

কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে ইডি অফিসার জানালেন, তাঁরা পরিচয় দিতে আরও চটে যায় জনতা। চলে যেতে বলে। ইডি জানায়, তল্লাশি করতে এসেছে। শোনেন না ওঁরা। প্রথমে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। অফিসারের কথায়, ‘‘আমাদের এক অফিসারের জামার কলার ধরে মাটিতে ফেলে পেটানো শুরু করেন কয়েক জন। ওঁদের হাতে লোহার রড আর মোটা কাঠের ডান্ডা ছিল। কয়েক জনকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ইডির কাউকে ছাড়া যাবে না। এখানেই শেষ করতে হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা আমাদের বাঁচাতে এলে তাঁদেরও মারধর শুরু করেন।’’

অফিসার বলেন, ‘‘আমাকে ধাক্কা দিতে দিতে একটি গাছের গায়ে আটকে দেয়। বুঝতে পারি, পিটিয়ে মারার পরিকল্পনা। দেখলাম, একটা দল সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মারধর শুরু করেছে। মাটিতে ফেলে আমাদের এক সহকর্মীর মাথা ইট দিয়ে থেঁতলে দেওয়ার চেষ্টা হয়। এক জওয়ান কোনও ভাবে তাঁকে মাটি থেকে তুলে টেনে হিঁচড়ে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে রাস্তার দিকে ছুটে যান।’’ এর পরে শুরু হয় গাড়ি ভাঙচুর। অফিসারেরা গাড়ি ছেড়ে রাস্তার দিকে দৌড়তে থাকেন। পিছনে তখন কয়েকশো মহিলা ও পুরুষ। অফিসার বলেন, ‘‘আমার মাথা ফেটে রক্ত ঝরছিল। এক জওয়ান রুমাল দিয়ে আমার মাথা বেঁধে দেন। আমরা তিন জন অফিসার পথচলতি একটি গাড়ি দাঁড় করাই। একটু দাঁড়ানোর পরেই ওই গাড়ি চলে যায়। রাস্তা থেকে একটি চলন্ত অটোতে উঠে পড়ি। কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর ওই অটো নামিয়ে দেয়। তার পরে রাস্তায় একটি খালি গাড়িতে আমরা উঠে পড়ি। সোজা সল্টলেকের অফিস। তার পরে হাসপাতাল।’’ ইডির অভিযোগ, অফিসারদের কাছে থাকা মোবাইল-ল্যাপটপ-সহ বেশ কিছু নথি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement