Calcutta High Court

‘ভুয়ো’ পুকুর খুঁড়তে খুঁড়তে গ্রাম উধাও! রাজ্যের ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির নয়া অভিযোগ হাই কোর্টে

গোয়াগাঁও-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে প্রায় ১৪টি গ্রাম রয়েছে। অর্থাৎ, এলাকায় ৫০০টি পুকুর থাকলে গড়ে প্রতি গ্রামে ৩৫টি পুকুর থাকার কথা। এ ছাড়া ওই এলাকায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করেন।

Advertisement
ভাস্কর মান্না
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩ ১০:০৮
Allegation of corruption in 100 days work,  The Calcutta High Court directed the District Magistrate at Uttar Dinajpur to take action

পুকুর খনন-সহ আরও সরকারি প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তোলা হয়েছে পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে। ফাইল চিত্র।

একটি, দু’টি বা কয়েকটি নয়, এলাকায় রয়েছে ৫০০টিরও বেশি পুকুর। গত কয়েক বছরে ওই পুকুরগুলি খনন করা হয়েছে! অথচ তা জানেনই না এলাকাবাসী! ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জনস্বার্থ মামলায় কলকাতা হাই কোর্টে এমনই দাবি করলেন এক মামলাকারী। মামলায় তাঁর বক্তব্য, ‘‘সবই আসলে ‘ভুয়ো’ পুকুর। বাস্তবে এত পুকুর থাকলে গ্রাম থাকার কথা নয়! পুকুর কাটানোর নামে জনগণের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।’’ এই মামলায় পুকুর খনন-সহ আরও সরকারি প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তোলা হয়েছে পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে হাই কোর্টও। মামলকারীর অভিযোগ খতিয়ে দেখে জেলাশাসককে পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দিয়েছে সদ্য প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ।

উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের গোয়াগাঁও-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জনস্বার্থ মামলাটি করেন আবু তাহির নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দা। তাঁর দাবি, সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। তার মধ্যে ১০০ দিনের কাজও রয়েছে। মামলায় মামলাকারীর বক্তব্য, ওই এলাকায় উন্নয়নের জন্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই টাকা উন্নয়নের কাজে লাগানো হয়নি। এর জন্য পঞ্চায়েত প্রধানকে দায়ী করেছেন মামলকারী তাহির। আদালতে হলফনামায় পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁর অভিযোগ, অনেকের জব কার্ড ব্যবহার করে জনগণের টাকা লুট করা হয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান নিজের ঘনিষ্ঠদের লাখ লাখ টাকা পাইয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

গত চার বছরে এলাকায় ৫০০টির বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে এই তথ্য দেখে বিস্ময়প্রকাশ করে হাই কোর্ট। নয়া এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সদ্যপ্রাক্তন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, ‘‘যে সব তথ্য সামনে আনা হয়েছে তা দেখে বলতে হবে অভিযোগগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা একটি যথার্থ জনস্বার্থ মামলা।’’ হাই কোর্টের নির্দেশ, প্রতিটি অভিযোগ উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক খতিয়ে দেখবেন। পঞ্চায়েত প্রধান বা অন্য কারও বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। ৩ মাসের মধ্যে এই কাজটি করবেন জেলাশাসক। মামলাকারীর আইনজীবী মহম্মদ নৌরজ রাহবের আদালতে সওয়াল, ‘‘যে সংখ্যায় পুকুর খনন করার কথা বলা হয়েছে তা কখনই সত্যি হতে পারে না। কারণ, এত পুকুর হলে গ্রামের অস্তিত্ব থাকার কথা নয়।’’ গোয়াগাঁও-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে প্রায় ১৪টি গ্রাম রয়েছে। অর্থাৎ, এলাকায় ৫০০টি পুকুর থাকলে গড়ে প্রতি গ্রামে ৩৫টি পুকুর থাকার কথা। এ ছাড়া ওই এলাকায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। ফলে এত পুকুর থাকা সম্ভব নয় বলেই অনেকে মনে করছেন।

এই দুর্নীতির জন্য মামলাকারী গোয়াগাঁও-১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মালতী সিংহের দিকে আঙুল তুলছেন। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে উত্তর ছিপি গ্রাম থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে জয়ী হন মালতী। পরে তৃণমূলের সমর্থনে তিনি পঞ্চায়েত প্রধান হিসাবে মনোনীত হন। তার পর মালতী তৃণমূলে যোগ দেন বলে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন। মামলকারীর দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের মুখে দুর্নীতির এই নয়া অভিযোগ শাসকদলের মদতেই হয়েছে। এর আগে পঞ্চায়েতের কয়েক জন সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় ইস্তফা দিতে বলেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রে খবর, আগামী ২০ এপ্রিল দক্ষিণ দিনাজপুরে সভা রয়েছে অভিষেকের। আসন্ন পঞ্চায়েতের আগে তিনি আরও এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন।

আরও পড়ুন
Advertisement