অধীর চৌধুরী। — ফাইল চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে অধীর চৌধুরীর ইস্তফার কথা জানিয়ে দিলেন শীর্ষ নেতৃত্ব। লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কংগ্রেসের ভরাডুবির পরেই অধীরের ইস্তফা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। সোমবার দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন শীর্ষ নেতৃত্ব। ওই বৈঠকেই অধীরের ইস্তফার কথা জানান পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের ভারপ্রাপ্ত নেতা গুলাম মীর। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অধীর নিজেও। তবে বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদের পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি কে হবেন বা তাঁকেই আবার করা হবে কি না তা নিয়ে সোমবার কিছু স্পষ্ট করা হয়নি।
সোমবারের বৈঠকে গুলাম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি বেণুগোপাল। বৈঠকে একাধিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উঠে এসেছে লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কংগ্রেসের ফলাফলের প্রসঙ্গও। এ বারের নির্বাচনে বাংলায় কংগ্রেসের আসন সংখ্যা দুই থেকে একে নেমে আসে। নিজের গড়েই হারতে হয় অধীরকে। হারের পর তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন খাতে বয়, সে দিকে নজর ছিল সকলের। আদৌ তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি থাকেন কি না তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়।
জানা গিয়েছিল, লোকসভা নির্বাচনে হারের পরেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন অধীর। পরে অধীর জানিয়েছিলেন, তিনি এখনও অস্থায়ী সভাপতি। সোমবার কংগ্রেস কমিটির বৈঠকে অধীরের ইস্তফার কথা রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন শীর্ষ নেতৃত্ব।
বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে ফল ভাল হয়নি, তা মেনে নিয়ে আগামী দিনে বাংলায় কংগ্রেসের সংগঠন কী ভাবে মজবুত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে সোমবারের বৈঠকে। সকলেই নিজের মতামত জানিয়েছেন। তার পর বেণুগোপাল রাত পর্যন্ত রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলেছেন। সোমবার সংসদের অধিবেশনে ব্যস্ত থাকায় এই বৈঠকে থাকতে পারেননি কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁরা বৈঠকে বসতে পারেন। মনে করা হচ্ছে, সেই বৈঠকেই ঠিক হতে পারে প্রদেশ কংগ্রেসের পরবর্তী সভাপতির নাম।
বেণুগোপালের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠকের পর এক কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘‘বাংলার সংগঠন নিয়ে আমরা কী ভাবছি তা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন বেণুগোপাল। এমনকি, সভাপতি হিসাবে আমরা কাকে চাইছি সেই বিষয়েও জানতে চান তিনি। আমরা আমাদের কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, শীঘ্রই সভাপতির নাম ঘোষণা করা হবে। আপাতত ভারপ্রাপ্ত হিসাবে অধীরদাই দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। মঙ্গলবার রাহুল গান্ধী এবং মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গে বৈঠক হবে। তার পর এআইসিসি যা সিদ্ধান্ত নেবে তা মাথা পেতে নেব।’’
কংগ্রেস সূত্রে খবর, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দৌড়ে আছেন চার জন। বাগমুণ্ডির প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাতো। অধীরের ঘনিষ্ঠেরা তাঁকেই সভাপতি হিসাবে চাইছেন বলেও খবর। এ ছাড়াও কংগ্রেসের প্রাক্তন সম্পাদক শুভঙ্কর সরকারও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দৌড়ে রয়েছেন। পাশাপাশি, আরও দু’টি নাম ভেসে রয়েছে। ২০১৫ সালে সিপিএম ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া আব্দুস সাত্তার এবং উত্তরবঙ্গের কংগ্রেস নেতা তথা মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর মালাকার। এখন দেখার শীর্ষ নেতৃত্ব কাকে দায়িত্ব দেন।