R G Kar Hospital Incident

আবার বিশেষ কারও হাতে বাঁধা পড়বে ‘স্বাস্থ্যের সুতো?’ ‘স্বাস্থ্যের মেঘনাদ’ হওয়ার দৌড়ে তিন জন

সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার কোনও পদে না থেকেও যাঁর অঙ্গুলি হেলনে বিশেষ গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত হত, আর জি করের ঘটনার পর থেকে সেই প্রবীণ চিকিৎসক এখন অন্তরালে। সরকারের শীর্ষ স্তরে তাঁর যোগাযোগ বন্ধ।

Advertisement
শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৫০

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

‘রাজা’র হয়তো বদল হচ্ছে। কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী ‘সৈন্যসামন্ত’দের কি বদল হবে? না কি তাঁরা নতুন ‘রাজা’র ক্ষমতায় আসার অপেক্ষায়? সিনিয়র চিকিৎসকদের বড় অংশেরও আশঙ্কা, ‘রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আদৌ কি কারও ‘দাসত্ব’ থেকে মুক্ত হবে? না কি আবার বিশেষ কারও হাতেই বাঁধা পড়বে “স্বাস্থ্যের সুতো?’’

Advertisement

সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার কোনও পদে না থেকেও যাঁর অঙ্গুলি হেলনে বিশেষ গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত হত, আর জি করের ঘটনার পর থেকে সেই প্রবীণ চিকিৎসক এখন অন্তরালে। সূত্রের খবর, সরকারের শীর্ষ স্তরে তাঁর যোগাযোগ কার্যত বন্ধ। ‘স্বাস্থ্যের মেঘনাদ’-এর সেই জায়গা নিতে চাইছেন কয়েক জন নেতা। আপাতত তিন জনের নাম সামনে আসছে। তাঁদের এক জন সর্বভারতীয় চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এমনকি, পুনরায় রাজ্য শাখায় ক্ষমতায় এসে চিকিৎসক মহলে নিজের অস্তিত্ব বাঁচাতে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, যাতে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা যায়। অন্য জন আবার মরিয়া হয়ে দলের শীর্ষ স্তরের কাছে যাতায়াত বাড়াচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেও তাঁর আনুগত্য দলনেত্রীর কাছে প্রশ্নাতীত। তাই বেফাঁস কথা বলার বদভ্যাস যে তিনি কাটিয়ে উঠেছেন তা প্রমাণ করতে আপাতত মুখে কুলুপ এঁটে নিজের বিধানসভা এলাকায় ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করছেন।

তৃতীয় জন এক প্রবীণ চিকিৎসক, যিনি আর জি করের ঘটনার পরে অনেকটাই পিছনের সারিতে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। কিন্তু বিশেষ ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর হাত ধরে ফের তিনি ভেসে ওঠার চেষ্টা করছেন।

আর জি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণকারী ‘উত্তরবঙ্গ লবি’-র বিরুদ্ধে একজোট হয়েছিল চিকিৎসক সমাজ। তৃণমূলপন্থী চিকিৎসকদের বড় অংশও তার মধ্যে ছিলেন। কিন্তু আন্দোলনে বিরোধী রাজনীতির দাগ লেগে যাওয়ায় ক্রমশ নিজেদের গুটিয়ে নেন তাঁরা। পাছে দলের শীর্ষ স্তরে ভুল বার্তা যায়! জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের চাপে কিছুটা হলেও কোণঠাসা হয় ‘উত্তরবঙ্গ লবি’। তৃণমূলপন্থী ওই চিকিৎসকেরা তাই খানিকটা আশার আলো দেখছেন। এঁদের অনেকেই আবার ওই তিন জনের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে যে কারও মাথায় অদৃশ্য মুকুট উঠলেই তাঁরা সেই দলে ভিড়ে যেতে পারেন।

উত্তরবঙ্গ লবির ঘনিষ্ঠরা যাতে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ‘ক্ষমতার’ বৃত্তে ঢুকতে না পারেন, তার জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মাধ্যমে সরব হচ্ছেন কোণঠাসা চিকিৎসক নেতারা। তাঁরা বলছেন, ‘‘ওঁরা ঢুকে পড়া মানে তো স্বাস্থ্য সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লড়াই ভেস্তে গেল।’’ শাসক দলের মাঝারি স্তরের চিকিৎসক নেতাদের (উত্তরবঙ্গ লবির বিরুদ্ধে যাঁরা) অনেকেই বলছেন, ‘‘সাম্রাজ্য হাতে পেয়ে রাজাকেই ঠিক করতে হবে, তিনি কাদের নিয়ে চলবেন?’’ তবে সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের মতে, এ ক্ষেত্রে সরকার এবং চিকিৎসক-লবির মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তির ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে। কারণ, বিভিন্ন সময়ে মধ্যস্থতাকারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা ভোগ করে এসেছেন। স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরের খবর, একাধিক চিকিৎসক এখন মধ্যস্থতার সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

আরও পড়ুন
Advertisement