সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
নৈহাটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে ‘বড়’ ধাক্কা খেয়েছে সিপিআইএমএল (লিবারেশন)। বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট করেও লাভ হয়নি। ভোটের লড়াইয়ে তিন নম্বরে শেষ করেছেন জোট প্রার্থী দেবজ্যোতি মজুমদার। ভোটে এমন শোচনীয় হারের পর বিজেপিকেই দুষছেন লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপিই প্রধান শত্রু।’’ সেই সঙ্গে তিনি আবার ‘নো ভোট টু বিজেপি’র পক্ষে সওয়াল করলেন।
রাজ্যে সদ্য সমাপ্ত ছয় বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না করেই লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বামেরা। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙে গেলেও, নৈহাটি আসনটি ছাড়া হয়েছিল সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-কে। একটি আসন ছেড়েছিল আর এক জোটসঙ্গী আইএসএফ-কে। একযোগে লিবারেশনের প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেও কোনও লাভ হয়নি। ভোটের ফল থেকে তা স্পষ্ট। উপনির্বাচনে দেবজ্যোতির ঝুলিতে এসেছিল মাত্র ৭ হাজার ৫৯৩ ভোট। জামানত জব্দ হয় লিবারেশন প্রার্থীর। নৈহাটিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি। তাদের প্রাপ্ত ভোট ২৯ হাজার ৪৯৫। আর তৃণমূল ৭৮ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে জিতে যায় নৈহাটির আসনটি।
ভোটে হারের পরেও বিজেপিকে ভোট না-দেওয়ার আর্জি জানালেন দীপঙ্কর। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপিকে ভোট নয়। এটা শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সারা দেশের স্লোগান।’’ তবে তার পরেই তিনি জানান, ‘নো ভোট টু বিজেপি’ মানে এটা ভাবা ঠিক নয় যে ‘ওমুক’কে ভোট দেওয়া। নাম না করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলে দীপঙ্কর বলেন, ‘‘বিজেপি গোটা দেশের জন্য বিরাট শত্রু। তৃণমূল একটা রাজ্যে সরকার চালাচ্ছে। তাদের অপশাসনের বিরুদ্ধেও লড়াই চলবে। পশ্চিমবাংলা অবিজেপি শাসিত রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গকে বিজেপির সঙ্গে একাকার করে দেখি না।’’
সিপিএম অনেক দিন ধরেই বৃহত্তর বাম ঐক্যের কথা বলছে। কিন্তু করে উঠতে পারেনি। এসইউসিআই, লিবারেশন— কাউকেই বামফ্রন্ট পাশে পায়নি। কিন্তু এই উপনির্বাচনের আগে সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাকে কাজেও লাগিয়েছিল সিপিএম। নিজেদের ভাগের আসন লিবারেশনকে ছেড়ে দিয়েছিল বামেরা। কিন্তু জোট করেও যে লাভের লাভ কিছু হয়নি, তা ভোটের ফল থেকে স্পষ্ট। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীনেই নৈহাটি বিধানসভা। পরিসংখ্যান বলছে, লোকসভা নির্বাচনে নৈহাটিতে বামেরা যা ভোট পেয়েছিল, উপনির্বাচনে তা প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।
উপনির্বাচনে হারের পরেও লিবারেশনের সঙ্গেই যে ‘এককাট্টা’ হয়ে লড়তে চায় বামেরা, তা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথাতেই স্পষ্ট। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দীপঙ্কর সর্বভারতীয় নেতা। প্রকৃত নকশালপন্থী ও বামপন্থীরা এককাট্টা হচ্ছে। বামফ্রন্ট ও বাম মনোভাবাপন্ন সমস্ত শক্তিকে এককাট্টা করতে হবে।’’