সোনালির মতোই বাকিদের ভবিষ্যৎও কি অনিশ্চিত হয়ে পড়ল? ফাইল চিত্র।
জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল পদ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কিন্তু রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর অহরহ সঙ্ঘাতের জের এখনও চলছে। মঙ্গলবার তার আঁচ পড়ল রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদায় নিশ্চিত হতেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এর অভিঘাত কি রাজ্যের আরও ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরেও পড়বে? সেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ভবিষ্যৎও কি অনিশ্চিত হয়ে পড়ল সোনালির মতোই? কারণ, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশের নিয়োগের ক্ষেত্রেও রাজ্যপাল তথা আচার্যের বিধিসম্মত অনুমতি নেওয়া হয়নি বলেই সূত্রের খবর।
মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের তরফে একটি সূত্রে বলা হয়েছে, এখনই ওই বাকি ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না রাজ্য। যদি কোনও নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিয়োগের বিরুদ্ধে মামলা হয়, তার পরই বিষয়টি ভেবে দেখবে তারা। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মতো রাজ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগ নিয়ে একই প্রশ্ন উঠতে পারে। বিশেষত, সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার সোনালির নিয়োগ নিয়ে যে রায় দিয়েছে, তার প্রসঙ্গ টেনে ওই সমস্ত নিয়োগও বাতিল বলে গণ্য করা হতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষা ও আইনজীবী শিবিরের অনেকে।
ইতিমধ্যেই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ওই বিষয়ে নিজের মতামত জানিয়ে দু’টি ধারাবাহিক টুইট করেছেন তিনি। রাজ্যের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দীর্ঘ তালিকা দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘কিছু দিনের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদেরও একই অবস্থা হবে। তাই আমার পরামর্শ, আদালতের সময় এবং নিজেদের সম্মান বাঁচাতে তাঁরা আগাম পদত্যাগ করুন।’ শুভেন্দু এ-ও লিখেছেন, ‘এঁদের একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর তাঁদের নিজেদের সরে যাওয়াই নৈতিক কর্তব্য।’
After Hon’ble Supreme Court of India upheld the order of Hon’ble Calcutta High Court removing the Vice Chancellor of Calcutta University, it becomes the moral duty & obligation of all the other Vice Chancellors who've been appointed illegally to immediately step down voluntarily. pic.twitter.com/QUeGm3sZ9B
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) October 11, 2022
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সোনালির পুনর্নিয়োগ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, ‘‘সোনালিকে পুনর্নিয়োগ করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের ক্ষমতার উপর ‘হস্তক্ষেপ করে’। আদালত এ-ও জানায় যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে যে ‘বাধার অপসারণ’-এর ধারা (রিমুভ্যাল অফ ডিফিকাল্টি) রয়েছে, তার অপব্যবহার করে ওই নিয়োগ করেছে রাজ্য। কিন্তু রাজ্য তার পথে আগত সমস্ত বাধার ক্ষেত্রে ওই ধারা প্রয়োগ করতে পারে না।’’ রাজ্য তাদের হাতে দেওয়া ‘একটি সামান্য ক্ষমতাকে অপব্যবহার করেছে’ বলেও জানায় সুপ্রিম কোর্ট। এর পরেই রাজ্যের বাকি ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যের রাজ্যপালই সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তাঁর অধীনস্থ যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদেই নিয়োগের জন্য রাজ্যপালের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু রাজ্যপালের পদে থাকাকালীন ধনখড়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের টানাপড়েনের মধ্যে যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সোনালিকে পুনর্নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য, তখন সেই নিয়ম মানা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপালের কাছে এ ব্যাপারে প্রস্তাব গেলে তিনি রাজ্য প্রশাসনের কাছে কিছু ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্য তার জবাব না-দিয়েই পর দিন থেকে সোনালিকে চার বছরের জন্য পুনর্নিয়োগ করে।
They have been appointed following similar procedures, so in order to save themselves from the wrath of Hon’ble Courts and before being unceremoniously removed, they should chose the dignified way out themselves.
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) October 11, 2022
শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, এ ভাবে আরও উপাচার্যের নিয়োগ হয়েছে। কারণ, উপাচার্যদের নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল তথা আচার্যের সঙ্গে সঙ্ঘাতের পরেই রাজ্য সরকার নতুন বিল এনেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, পদাধিকারবলে মুখ্যমন্ত্রীই রাজ্যের অধীন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আচার্য’ হবেন। সেই বিল বিধানসভায় পাশ হয়ে গেলেও তাতে তৎকালীন রাজ্যপালের সম্মতি মেলেনি। কিন্তু এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই ধনখড় উপরাষ্ট্রপতি হয়ে চলে যান। পশ্চিমবঙ্গ এখনও স্থায়ী রাজ্যপাল পায়নি। এই পরিস্থিতিতে আইনজীবীদের একাংশের পর্যবেক্ষণ— রাজ্যপাল যদি না থাকেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদ নিয়ে সিদ্ধান্ত যদি চূড়ান্ত না হয়, তবে বাকি উপাচার্যদের নিয়োগ নিয়েও সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদিও রাজ্য আপাতত ‘যখন যেমন, তখন তেমন’ নীতিতে অপেক্ষা করার পথেই হাঁটবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।