Kolkata Doctor Rape-Murder Case

ময়নাতদন্তের পদ্ধতি থেকে চিকিৎসক বাছাই নিয়ে প্রশ্ন উঠল সুপ্রিম কোর্টে, কী কী উত্তর রাজ্যের আইনজীবীর

সিবিআইয়ের তরফে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ফের একটি স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৫০
সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি।

সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি করে ধর্ষণ ও খুনের মামলার দ্বিতীয় শুনানিতেও উঠল বিস্তর প্রশ্ন। সিবিআই প্রশ্ন তুলল। রাজ্য পাল্টা যুক্তি দিল। আরজি কর মামলার শুনানি পর্বে সোমবার উঠে এল বেশ কিছু গুরুতর সংশয়ের দিকও। মামলাটি সুপ্রিম কোর্ট গ্রহণ করার আগে এটির শুনানি চলছিল কলকাতা হাই কোর্টে। সেই সময় মামলার একটি পক্ষ ছিলেন এক জনস্বার্থ মামলাকারীও। তাঁর হয়ে সোমবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের এজলাসে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজিও। মৃত মহিলা চিকিৎসকের দেহের সঠিক ময়নাতদন্ত হয়েছিল কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

Advertisement

প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে এডুলজি বলেন, “দয়া করে ময়নাতদন্তের রিপোর্টটি দেখুন। নির্যাতিতার পোশাক কি ডাক্তারকে দেওয়া হয়েছিল? জিন্‌স বা অন্যান্য পোশাক কি ছিল? যদি দেওয়া হয়, তবে সেগুলি কি সিল করা অবস্থায় ছিল?” প্রধান বিচারপতি জানান, তাঁরা রিপোর্ট দেখেছেন। রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বলও জানান, তাঁরা রিপোর্ট ইতিমধ্যে জমা দিয়েছেন। এডুলজি জানান, ময়নাতদন্ত সন্ধ্যা ৬টার পর করা হয়েছিল। কোর্টের নির্দেশ মেনে ভারতের কোথাও সন্ধ্যা ৬টার পরে ময়নাতদন্ত করা হয় না। আমি বিচারপতি পারদিওয়ালার প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই। সার্চ এবং সিজার করার পর কোনও এফআইআর রেজিস্ট্রি করা হয়নি। নির্যাতিতার জামাকাপড় ময়নাতদন্তে পাঠানোর পরে দেওয়া হয়।

সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাও জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্টটি কখন বানানো হয়েছিল, সেই সময়ের কথাও উল্লেখ নেই রিপোর্টে। যদিও তার বিরোধিতা করেন সিব্বল। তাঁর পাল্টা যুক্তি, সব কিছুই উল্লেখ রয়েছে। তবে জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী এডুলজি সোমবার একের পর এক প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য তথা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। ময়নাতদন্ত প্রসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, “ভিডিয়োগ্রাফি কে করেছিলেন? কোনও তথ্য নেই। রাইটেব্‌ল সিডি ছিল না কি রিরাইটেব্‌ল কোনও সি়ডি ছিল? সেই বিষয়েও কোনও তথ্য নেই।” উঠে আসে ‘উত্তরবঙ্গ লবি’-র প্রসঙ্গও। এডুলজির দাবি, “(ময়নাতদন্তের সময়) সেখানে যে চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা সকলেই উত্তরবঙ্গ লবির।”

এডুলজির এই মন্তব্যেও আপত্তি জানান রাজ্যের আইনজীবী সিব্বল। তাঁর পাল্টা যুক্তি, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে উপস্থিত ছিলেন। রিপোর্ট নিয়ে কোথাও কোনও সন্দেহ হলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হোক, প্রস্তাব দেন সিব্বল। যদিও এডুলজির উত্তর, “তাতে আমার বক্তব্যে কিছু পাল্টে যাবে না।” পুলিশের তরফে জেনারেল ডায়েরি এন্ট্রিতে সময়ও ভুল উল্লেখ রয়েছে বলে দাবি তাঁর। তিনি আদালতে দাবি করেন, “এ তো অবাস্তব! দুপুর আড়াইটে থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মাত্র জেনারেল ডায়েরি হয়েছে দশটি। পুরোটা পরে তৈরি করা হয়নি তো? অনেক রহস্য রয়েছে।”

জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাও জানান, ফরেন্সিক রিপোর্ট নিয়ে তাঁদের মনেও সংশয় রয়েছে। তাই সিবিআই সেটিকে এমসে পাঠাতে চায়। শুধু তাই নয়, সলিসিটর জেনারেল আরও জানান, এমন ঘটনার ক্ষেত্রে প্রথম পাঁচ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সিবিআই পাঁচ দিন পরে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। ততক্ষণে যদি কিছু পাল্টে গিয়ে থাকে, তবে তা উদ্ধার করা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের বলে জানান সলিসিটর জেনারেল। এডুলজি সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আরও বেশ কিছু যুক্তি সাজানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, “দাবি করা হচ্ছে, মৃতার পা ৯০ ডিগ্রি কোণে ছিল। কোমরের হাড় ভাঙা না হলে, এটা সম্ভব নয়।” সে ক্ষেত্রে এক্স-রে প্লেট কি দেওয়া হয়েছিল? প্রশ্ন তোলেন এডুলজি।

পাশাপাশি তাঁর আরও দাবি, নির্যাতিতার সোয়াবের নমুনা ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষিত হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু তা হয়নি। ঘটনার এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও নির্যাতিতার মৃত্যুর সময় কেন জানা গেল না, তা নিয়েও এ দিন আদালতে প্রশ্ন তোলেন জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী। যদিও প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় সোমবার নির্দেশ দিয়েছেন, সিবিআইকে আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে ফের একটি স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে হবে। মামলার সঙ্গে জড়িত সব পক্ষকে তিনি জানান, আগে সিবিআইকে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দিতে দেওয়া হোক। তার পরে যদি কারও কোনও প্রশ্ন থাকে, তা করতে পারেন।

আরও পড়ুন
Advertisement